কালবৈশাখী কেড়ে নিল ১৩ জনের প্রাণ

চৈত্রের শেষভাগে এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে বয়ে গেছে কালবৈশাখী ঝড়; গাছ ভেঙে পড়ে তিন জেলায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিগাইবান্ধা, ফরিদপুর ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2021, 07:24 PM
Updated : 4 April 2021, 07:34 PM

রোববার ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, খুলনা বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আঘাত হানা এ ঝড়ে গাইবান্ধায় ১০ জন, ফরিদপুরে দুইজন এবং কুষ্টিয়ায় একজনের মৃত্যু হয়।

এদিকে, জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন বলেন, “ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, খুলনা বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র কালবৈশাখী বয়ে গেছে। এরমধ্যে ঢাকায় সর্বোচ্চ ৭৪ কিলোমিটার বেগে ঝড় হয়েছে।”

সোমবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আভাস রয়েছে জানিয়ে তিনি সবার প্রতি কালবৈশাখীর এ মৌসুমে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

আবহাওয়ার ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সোমবার ৯টা থেকে পরবতী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়নসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দুই এক জায়গায় শিলাবৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি অথবা অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

আমাদের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

গাইবান্ধায় ১০ জনের মৃত্যু

গাইবান্ধায় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে দশজন নিহত হয়েছে।

রোববার বিকালে গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এ ঝড়ে কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলাজুড়ে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।

ডিসি আব্দুল মতিন জানান, ঝড়ে গাইবান্ধা সদরে চারজন, পলাশবাড়ীতে তিনজন, ফুলছড়িতে দুইজন এবং সুন্দরগঞ্জে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

নিহতরা হলেন, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের বাকেরপাড়া গ্রামের ইউনুছ আলীর স্ত্রী জাহানারা বেগম (৫০), একই ইউনিয়নের মোস্তফাপুর গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে আবদুল গোফ্ফার (৪২), গাইবান্ধা সদর উপজেলার মালিবাড়ী ইউনিয়নের ঢনঢনিপাড়া গামের মিঠু মিয়ার স্ত্রী সাহারা বেগম (৪১), সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত হলদিয়া গ্রামের সোলায়মান আলীর স্ত্রী ময়না বেগম (৪৭), ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারি গ্রামের বিশু মিয়ার স্ত্রী শিমুলি বেগম (২৬), গাইবান্ধা সদরের রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের হরিণসিংগা গ্রামের হিরু মিয়ার ছেলে মুনির (৫), একই ইউনিয়নের আরিফ খান বাসুদেবপুর গ্রামের রিজু মিয়ার স্ত্রী আর্জিনা বেগম (২৮), বাদিয়াখালী ইউনিয়নের রিফাইতপুর সরকারেরতারি গ্রামের খগেন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী জোৎস্না রানী (৫৫), পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর  ইউনিয়নের কুমেদপুর গ্রামের আবদুল কাদের মিয়ার স্ত্রী মমতা বেগম (৬৪) এবং ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের ডাকাতিয়ার চর গ্রামের বারেক মিয়ার ছেলে হাফিজ উদ্দিন (৬৫)। 

পলাশবাড়ী থানার ওসি মাসুদুর রহমান জানান, ঝড়ে গাছ চাপায় তার এলাকায় দুইজন মারা গেছেন।

রোববার বিকেল ৩টার দিকে পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের ডাকেরপাড়া গ্রামের জাহানারা বেগম বাড়ি উঠানে সাংসারিক কাজ করছিলেন। হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ের এক পর্যায়ে একটি গাছ উপড়ে পড়লে তাতে চাপা পড়ে জাহানারা ঘটনাস্থলে মারা যান।

বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আবদুল গোফ্ফার মোস্তফাপুর বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছলে একটি গাছ তার ওপর উপড়ে পড়ে। এতে তিনি চাপা পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যান বলে জানানো হয়েছে বলেন ওসি।

ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান গাছ চাপায় এক নারী নিহত খবর জানিযে বলেন, বেলা সোয়া ৩টার দিকে কিশামত হলদিয়া গ্রামের ময়না বেগম বাড়ির আঙিনায় কাজ করছিলেন। এ সময় বাড়ির একটি গাছ ভেঙে পড়লে চাপা পড়ে মারা যান ময়না।

ফুলছড়ি থানার ওসি কাওছার আলী জানান, বেলা পৌনে ৪টার দিকে ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারি গ্রামের বিশু মিয়ার স্ত্রী শিমুলি বেগম একইভাবে বাড়ির উঠানে কাজ করার সময় গাছ চাপায় মারা যান।

মালিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আজম জানান, গাইবান্ধা সদরের ঢনঢনি পাড়ার সাহারা বেগম ঝড় শুরু হলে খড়ি কুড়াইতে বাড়ির উঠানে যান। এ সময় গাছের ডাল তার মাথায় ভেঙে পড়লে তিনি মারা যান।

এদিকে, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা ইদ্রিশ আলী জানান, ঝড়ে শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে । গাইবান্ধা জেলার অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

তবে কী পরিমাণ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে না পারলেও তিনি বলেন, ঝড়ে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা জরিপ করে দেখা হচ্ছে।

এদিকে ঝড়ের শুরু থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎহীন রয়েছে জানিয়ে পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদুল হক বলেন, ঝড়ে খুঁটি ভেঙে, গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে বিভিন্ন জায়গায়।

রাতের মধ্যে জেলা শহরের কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ফরিদপুরে মা-মেয়ের মৃত্যু

ফরিদপুরে রোববার সন্ধ্যায় আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের টাবনী ঘোষবাড়ির সামনে কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে মা-মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।

নিহত মোসাম্মাৎ হালিমা (২৫) ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের মো. জাহিদের স্ত্রী এবং তাদের এক বছর চার মাস বয়সী শিশু কন্যা আফছানা।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রাফেজা আক্তার মিলি জানান, ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে মোসাম্মাৎ হালিমা ঘটনাস্থলেই মারা যান।

“হাসপাতালে আনার পথে গুরুতর আহত তার শিশুকন্যা আফছানা মারা যায়। মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়।”

আলফাডাঙ্গা উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মিটু মোল্লা জানান, বুড়াইচ ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামের কাবিল মোল্লার মেয়ে হালিমা তার মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আসার সময় ঝড়ের কবলে পড়েন। একটি গাছের ডাল ভেঙে তাদের উপর পড়লে ঘটনাস্থলেই হালিমা মারা যান।

স্থানীয়রা জানায়, নিহত মোসাম্মাৎ হালিমা তার মেয়ে আফছানাকে নিয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের শিরগ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখান থেকে সন্ধ্যায় রিকশাভ্যানে করে পাশের বুড়াইচ ইউনিয়নের পাকুড়িয়ায় তার বাবার বাড়ি উদ্দেশ্যে রওনা হন।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হলে বানা ইউনিয়নের টাবনী ঘোষবাড়ির সামনে পৌঁছালে রাস্তার পাশের সজনে গাছের একটি বড় ডাল তাদের উপর ভেঙে পড়ে। এতে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই হালিমা মারা যান।

স্থানীয়রা আফছানাকে উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়।

কুষ্টিয়ায় উড়ন্ত টিনে গলা কেটে মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বছরের প্রথম কালবৈশাখী ঝড়ে উড়ে আসা টিনের আঘাতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

রোববার বিকেলে দৌলতপুর উপজেলার মহিষাডোরার আল্লারদর্গা এলাকার শশীধরপুর গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রয়াত রবিউল ইসলাম (৪০) স্থানীয় বাসিন্দা সাদ মন্ডলের ছেলে এবং পেশায় একজন সবজি ব্যবসায়ী।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার সরকার বলেন, রোববার সন্ধ্যায় তাকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল।

এদিকে, দৌলতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহাদত হোসেন বলেন, ঝড়ে টিন উড়ে একজন নিহত হওয়ার খবর শুনেছি। তবে বিস্তারিত তথ্য জানতে ঘটনাস্থলে পুলিশ রওনা হয়েছে।

নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার বিকেলে রবিউল ভেড়ামারা উপজেলার সাতবাড়িয়া হাটের আড়ত থেকে পেঁয়াজ কিনে বাড়ি ফিরছিলেন।

এ সময় ঝড়ের কবলে পড়ে আল্লারদর্গা এলাকায় দফাদার ফিলিং স্টেশনের কাছে এক দোকানে আশ্রয় নেন।

এ সময় ঝড়ের তোড়ে পাশের দোকানের চালা থেকে টিন উড়ে রবিউলের ঘাড়ের আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় রবিউলকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।