জৈব ফসলের সবুজ সমারোহ যমুনার চরে

বগুড়ায় যমুনার চরাঞ্চলে এখন জৈব পদ্ধতির চাষে সবুজ ফসলের বিপুল সমারোহে চোখ জুড়িয়ে যায়।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2021, 09:58 AM
Updated : 2 April 2021, 12:19 PM

জেলার ধুনট ও সারিয়াকান্দি উপজেলার বেশ কয়েকটি চরে মরিচ, মশুর, বুট, খেসারি কালাই, ভুট্টা, বেগুন, মিষ্টি আলু, তিল, তিশি, কালো জিরা, চিনা বাদামসহ নানা ফসলে যেন সবুজের বন্যা বইছে।

সরকারের ‘কৃষি তথ্য সার্ভিস’ ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, রাসায়নিক সার, বালাইনাশক, আগাছানাশক, হরমোন ইত্যাদি বাদ দিয়ে ফসলচক্র, সবুজ সার, কম্পোস্ট, জৈবিক বালাই দমন এবং যান্ত্রিক চাষাবাদ ব্যবহার করে শাকসবজি চাষই হলো জৈব সবজি উৎপাদন। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং কোনো রাসায়নিক বস্তু চাষ কাজে ব্যবহার করা হয় না। এতে ফসল দূষিত হওয়ার শঙ্কা থাকে না এবং নিরাপদ শাকসবজি উৎপাদন অনেকটা নিশ্চিত হয়।

রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়া এসব ফসল আবাদ হয় বলে স্বাস্থ্যসম্মত। তাই এসব জৈব ফসল চাষ ও খাবারের আগ্রহ দিন দিন বেড়ে চলেছে।   

ধুনটের বৈশাখী চরের ভুলু মন্ডল বলেন, “চর ভেঙে যাওয়ার পর এখন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পশ্চিমপাড়ে বানিয়াজান গ্রামে বাড়ি করেছি।  বর্ষাকালে সব পানিতে একাকার থাকলেও গ্রীষ্মে জেগে ওঠে জমি। চর বলতে শুধুই বালু নয়, পলিও পড়ে। সেই পলিমাটিতে ফসলের বীজ বপন করলেই অনেক ফসল পাওয়া যায়। সার, সেচ দিতে হয় না।” 
তিনি জানান, তিন বিঘা জমিতে বাদাম করেছেন। এক বিঘার বাদাম জমি থেকে উঠিয়েছেন। সার, কীটনাশক, পানি ছাড়াই পেয়েছেন আট মণ। 

সারিয়াকান্দি উপজেলার বোহাইল চরের মো. আজম বলেন, “বন্যায় ফসল নষ্ট হয়। তবু একটি ফসল ঘরে উঠাতে পারলেই সারা বছরের খাবার হয়।”

তিনি বলেন, চরের লোকের এক ফসলেই সারা বছর চলে যায়। এখন চরে বাদাম, মশুর, খেসারি, মরিচ, মিষ্টি আলু, কালো জিরা, তিল, তিশি, ভুট্টার মৌসুম চলছে। ফলনও হয়েছে প্রচুর।

সারিয়াকান্দির বানিয়াপাড়া চরের সোহাগ মিয়া বলেন, চরের সবজি থেকে শুরু করে সব ফসলের স্বাদই আলাদা। সার-কীটনাশক ছাড়া চাষ করা হয় বলে এলাকার লোকজন যারা শহরে থাকে তারা এখান থেকে চাল-ডালসহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে যায়।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, সার, কীটনাশক ছাড়া স্বল্প খরচে কৃষকরা চরে অর্গানিক (জৈব) ফসল উৎপাদন করে। ফলনও হয় প্রচুর।

তিনি বলেন, চরের মানুষ এসব অর্গানিক ফসল, সবজি খাওয়ায় তাদের শরীর ভাল থাকে। রোগব্যাধি কম। স্বাদও ভাল। তাই এর চাহিদাও অনেক বেশি। 

“শুধু তাই নয়, চরে ঘাস, খড় খাওয়া গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির রোগও কম হয়।”

এখন চরেই শুধু অর্গানিক ফসল উৎপাদন হচ্ছে বলে জানান তিনি।