ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবেশনে বাড়ি গেলেন দণ্ডিত ব্যক্তি

ঠাকুরগাঁওয়ে মাদক মামলায় দণ্ডিত এক ব্যক্তিকে শর্তসাপেক্ষে ‘প্রবেশনে’ পরিবারের সঙ্গে থাকার অনুমতি দিয়েছে আদালত।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2021, 06:58 PM
Updated : 29 March 2021, 06:58 PM

সোমবার আসামির উপস্থিতিতে ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত দায়রা জজ বি এম তারিকুল কবীর এই রায় দেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল হামিদ।

প্রবেশনে দেওয়ার ঘটনা ঠাকুরগাঁওয়ের আদালতে এই প্রথম বলে জানান অ্যডভোকেট হামিদ।

দণ্ডিত মামুন সরকার (৩৮) ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের দানারহাট বান্দিগড় ধনিপাড়া গ্রামের প্রয়াত আজাহারুল ইসলামের ছেলে।

মামলার বরাতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল হামিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১৮ সালের ১৬ মার্চ সদরের জলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের দানারহাট বান্দিগড় ধনিপাড়া গ্রামে প্রয়াত আজাহারুল ইসলামের বাড়ি থেকে পুলিশ মামুন সরকারকে আটক করে এবং তার শরীরে তল্লাশি করে ৫৫টি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে।

তিনি জানান, এই ঘটনায় ওদিনই তৎকালীন ঠাকুরগাঁও সদর থানার এসআই নবিউল ইসলাম বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ২০১৮ সালের ৪ জুন আদালতে অবিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই অনিল রায়।

“এই মামলায় মামুন সরকারের পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং ৫০০ টাকা জরিমানা হয়; যা অনাদায়ে আরও এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড হয়।”

আইনজীবী আব্দুল হামিদ বলেন, প্রবেশন আইনে ঠাকুরগাঁওয়ের আদালতে এই প্রথম একটি রায়। দশটি শর্তে মামুন সরকারকে জেলার প্রবেশন কর্মকর্তা শাকিল মাহমুদের তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয়েছে।

“প্রবেশনের শর্ত না মানলে মামুন সরকারকে আবার কারাগারে যেতে হবে।”

ঠাকুরগাঁও জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা শাকিল মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামুন সরকারকে আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখব। আদালতের দেওয়া ১০ শর্তাবলী তিনি পালন করছেন কিনা এ বিষয়ে ৩ মাস পরপর আদালতে রিপোর্ট দাখিল করা হবে। যদি তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন তাহলে সেটিও আদালতে রিপোর্ট দেওয়া হবে। পরবর্তীতে আদালত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে মামুন সরকারের বিষয়ে।”

রায়ের বরাত দিয়ে আইনজীবী আব্দুল হামিদ বলেন, মামুন সরকার মুচলেকায় লিখিত শর্তসাপেক্ষে প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে ও তার স্ত্রী শ্যামলী আক্তারের জিম্মায় প্রবেশনে যেতে সম্মত হওয়ায় তার কারাদণ্ড ও জরিমানা স্থগিত করেছে আদালত; এবং ১০ শর্তে তাকে পরিবারের সঙ্গে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়।

প্রবেশনের ১০ শর্ত হলো- আদালত নিযুক্ত প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে নিজেকে সমর্পণ করবেন; তার বাসস্থান এবং জীবিকার উপায় সম্পর্কে প্রবেশন অফিসারকে অবহিত করবেন; সৎ-শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করবেন; এবং সদুপায়ে জীবিকা অর্জনের জন্য সচেষ্ট থাকবেন; আদালত তলব করলে হাজির হয়ে দণ্ড ভোগ করতে বাধ্য থাকবেন; সময় সময় প্রবেশন অফিসারের দেওয়া আইনানুগ মৌখিক বা লিখিত উপদেশসমূহ মেনে চলবেন; দেশে প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য কোনো অপরাধ কর্মে লিপ্ত হবেন না; স্বেচ্ছায় বা কারো প্ররোচনায় শাস্তিভঙ্গের কোনো কাজে লিপ্ত হবেন না অথবা অংশগ্রহণ করবেন না; কোনো প্রকার মাদকদ্রব্য সেবন করবেন না; হেফাজতে রাখবেন না এবং কোনো মাদকদ্রব্যসেবী বা বহনকারী বা হেফাজতকারীর সঙ্গে মেলামেশা করবেন না; পরিবারের সদস্য তথা মা, স্ত্রী, মেয়ে, বোনসহ আত্মীয়-প্রতিবেশীর সঙ্গে অসদাচরণ করবেন না, তাদের কাউকে মানসিক বা শারীরিকভাবে নির্যাতন করবেন না; ধর্মীয় অনুশাসন যথাযথভাবে মেনে চলবেন।