স্বাস্থ্যবিধিতে উদাসীনতা শার্শার গণজমায়েতে

করোনাবাইরাস মহামারীর দ্বিতীয় ধাপের মধ্যে যশোরের শার্শায় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানায় ব্যাপক উদাসীনতা দেখা গেছে।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2021, 02:34 PM
Updated : 29 March 2021, 02:34 PM

হাটবাজার, গণপরিবহন, বিনোদন কেন্দ্রসহ সবখানে একই অবস্থা।

কোভিড-১৯ এর ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর হচ্ছে সরকার। জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ‘মাস্ক পরার অভ্যেস, কোভিডমুক্ত বাংলাদেশ’-এই স্লোগান সামনে রেখে ২১মার্চ থেকে শুরু হয় এই কর্মসূচি।

শার্শা থানা ও বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে সচেতন করতে পথসভা, লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ করছেন। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো ফলাফল নেই। সচেতনতামূলক প্রচার শুরু করলেও প্রভাব নেই জনমনে।

মরেজমিনে দেখা গেছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি দূরে থাক, মানুষের মাস্ক পরতেও অনীহা। কারো কাছে মাস্ক থাকলেও তা রেখেছেন পকেটে বা মুখের নিচে থুঁতনিতে। অধিকাংশের কাছে মাস্কও নেই। 

একজন কলেজ শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, গত বছরের মার্চ এপ্রিল ও মে মাসের প্রথমার্ধে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত টহল ছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মত; কিন্তু এখন অনেকাংশেই সেটা অনুপস্থিত। এজন্যই মানুষ এভাবে বাইরে ঘোরাঘুরি করছে।

সোমবার শার্শা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, জনসভা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় সমাবেশ সর্বত্র উৎসবমুখর পরিবেশে কোনো সচেতনতা নেই।  

২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার পর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করে সরকার। গণপরিবহনে চলাচলের ওপর স্বাস্থ্যবিধি আরোপ করা হয়, দেওয়া হয় সরকারি ছুটি। বর্তমানে এসব নিষেধাজ্ঞা নেই। সাধারণ মানুষের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা নেই। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

নাভারন বাজারে কথা হয় ওসমান আলির (৪৫) সঙ্গে।

তিনি বলেন, “তড়িঘড়ি করে বাজারে আইছি, মাস্ক আনতি ভুলে গিছি।”

উলাশি বাজারে আবু তালেব (৬০) বলেন, “বাজার ঘুরে দেখেন, কেউ মাস্ক পরে না। আমিও পরি না। করোনাভাইরাস আমাদের কিছু করতি পারবে না।” 

বেনাপোল বাজারে ফুটপাতে সবজি বিক্রেতা গোলাম হোসেনকে (৬৫) মাস্কের কথা জিজ্ঞাসা করতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। 

তিনি বলেন, “মাস্ক পরে বড়লোকেরা। হেগো জীবনের ডর বেশি। আমাগোর মাস্ক পরা লাগবো না। আল্লা দেখবো।”

শার্শার উদ্ভাবক মিজানুর রহমান মিজান করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত লক্ষাধিক মাস্ক বিতরণ করেছেন।

আক্ষেপ করে মিজান বলেন, “মাস্ক লোকের দেই, তারা বাড়ি নিয়ে যায়। অথচ ব্যবহার করে না। শত চেষ্টা করেও মানুষের মাস্ক পরাতি পারলাম না।”

শার্শা থানার ওসি বদরুল আলম খান বলেন, “করোনার দ্বিতীয় ধাপে মানুষকে নিরাপদে রাখার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা, লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে আমরা আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছি।”

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলবে ততদিন করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।

“প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চললেও মানুষের মাঝে কোনো ভীতি নেই। তারা করোনাকে পরোয়া না করে ইচ্ছামতো চলাফেরা করছে। এতে পরিস্থিতি বেসামাল।”

সব ধরনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলে তিনি মনে করেন।

এই ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসনা শারমিন মিথি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উপজেলা পরিষদের পক্ষে বিভিন্ন  ইউনিয়নে মাইকিং করা হচ্ছে। মাস্ক সচেতনতার জন্য আমি ও ইউএনও স্যার প্রতিদিনই বেরুচ্ছি। মাঠ পর্যায়ে মানুষকে সচেতনতার কাজ করছি।

"মানুষের মধ্যে একটু শিথিলতা আছে। আমরা একটু সচেতন করে দেখি, 'যদি না মানে' সপ্তাহ খানেক পরে তখনই জরিমানায় যাব।"