সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলা শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে হেফাজতকর্মীরা।
পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে অন্তত দুজন হাসপাতালে মারা গেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. শওকত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “দুপুর পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে কীসের আঘাত তা ময়নাতদন্ত না করলে বলা যাবে না।”
নিহতদের একজন হলেন সরাইল উপজেলার সৈয়দটুলা গ্রামের সফী আলীর ছেলে আলামিন (১৯)। অন্যজনের নাম জানা যায়নি, তার বয়স আনুমানিক ৪০ বছর।
এই নিয়ে সহিংসতায় এই জেলায় অন্তত সাত জনের প্রাণহানি ঘটল। তাদের মধ্যে পাঁচজন শনিবার পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে মারা যান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর ঘিরে শুক্রবার ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘাত ও প্রাণহানির পর হেফাজতে ইসলাম রোববার সারাদেশে হরতাল ডাকে।
সেই হরতালে রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলা সদরের পশ্চিম মেড্ডা ও সরাইলের খাটিহাতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হরতাল সমর্থনকরীদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে।
এছাড়া দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব ভবনেও হামলা চালায় হেফাজতকর্মীরা।
হরতালকারীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিরাসারে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের কার্যালয় এবং জেলা পুলিশ লাইনসে হামলার চেষ্টা চালায়।
তাদের হামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি ও আমাদের নতুন সময় পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি আবুল হাসনাত রাফি আহত হন।
শহরের ভিতর বিভিন্ন গলিতে রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দেওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আগুন নেভাতে যেতে বেগ পেতে হয়।
তবে শহরের পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা কোনো কথা বলেননি। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তারা ধরেননি।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতায় নেমে শুক্রবার সকালে হেফাজত কর্মীরা চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা চালালে সংঘাতে চারজন নিহত হয়।
ওইদিনই বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে মাদ্রাসাছাত্ররা রেলওয়ে স্টেশনে অগ্নিসংযোগ করে এবং শহরে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। পরদিন শনিবার তারা ফের আইনশঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায়, যেখানে অন্তত পাঁচজন নিহত হন।