জাতীয় পর্যায়ে খেলা বাঁশজানী ফুটবল দলের অন্তত সাত কিশোরী ফুটবলারের এরই মধ্যে বিয়ে হয়েছে বলে অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বাঁশজানী দল ২০১৭ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপে তৃতীয় স্থান অর্জন করে।
ওই দলের খেলোয়াড় লিশামনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “গত তিন মাসে আমাদের দলের সাত মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে দলের অধিনায়কও রয়েছে।”
বিয়ে হওয়া সাতজন অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
অভিভাবকরা বলছেন, তারা গরিব মানুষ। করোনাভাইরাস মহামারীতে আরও অভাবে পড়েছেন। ‘তাই ভালো ঘর পেয়ে’ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের বিয়ে হয়েছে মোটর মেকানিকের সঙ্গে।
আরেকজন অভিভাবক বলেন, কেউ তাদের খোঁজ নেয় না। স্কুল বন্ধ। পড়াশোনা নেই। মেয়ে বসে থাকে। তাই বিয়ে দিয়েছেন।
“হামার তো সামর্থ্য নাই যে মেয়েকে পড়াশুনা করামো আর খেলোয়াড় বানামো।”
এই কিশোরীদের একজনের অভিভাবক কৃষিশ্রমিক। তার একজন প্রতিবেশী বলেন, “যেদিন কাজ জোটে সেদিন খাওয়া হয়। আর না হলে উপোস থাকা লাগে তাদের। এখন আবার স্কুল বন্ধ। মেয়ে বড় হয়েছে। কোনো অঘটন যেন না ঘটে সেজন্য বিয়ে দিয়েছে ওর বাবা-মামা।”
অন্য অভিভাবকদের বক্তব্যও এমনই।
বাঁশজানি দলের সাবেক প্রশিক্ষক আতিকুর রহমান খোকন বলেন, “বাঁশজানি দলের ছয়-সাতজনের বিয়ে হয়ে গেছে। আমাদের অগোচরেই এসব বিয়ে দিয়েছে তাদের পরিবার। এখন তাদের খেলার মাঠে থাকার কথা। অথচ তারা সংসারের হাল ধরেছে। তাদের কারও মুখের দিকে তাকানো যায় না। এতগুলো সম্ভাবনা চোখের সামনেই শেষ হয়ে গেল। এখনও যারা আছে তাদের সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা করা প্রয়োজন।”
করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় তাদের খোঁজখবর নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান বাঁশজানি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কায়সার আলী।
প্রত্যন্ত এলাকার এসব অভিভাবকদের জন্য অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার ব্যবস্থা করা দরকার বলে মনে করেন পাথরডুবি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরফান আলী।
ভুরুঙ্গামারীর ইউএনও দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন, কিশোরী ফুটবলারদের বাল্যবিয়ের বিষয়ে অবগত ছিলেন না তিনি। কেউ তাকে জানায়নি। জানলে তিনি পদক্ষেপ নিতে পারতেন।
তবে বাকি খেলোয়াড়রা যেন বাল্যবিয়ের শিকার না হয়, সেজন্য তিনি নজর রাখার পাশাপাশি তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।