সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হামলায় জড়িতদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ছয় সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। আটকের সংখ্যা বাড়তে পারে।”
শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আরও প্রায় দেড় ডজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে বলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পরিচয় পুলিশ এখনও প্রকাশ করেনি।
বুধবার সকালে শাল্লা উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা চালিয়ে ৬০-৭০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও আসবাবপত্র তছনছ করা হয়। ওই হামলার জন্য হেফাজতে ইসলামীর অনুসারীদের দায়ী করেছে পুলিশ ও স্থানীয়রা।
ওই ঘটনায় শাল্লা থানার দুটি মামলা হয়েছে, যার একটি দায়ের করেছে পুলিশ। সেখানে ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে বলে ওসি নাজমুল হক জানান।
অন্য মামলাটি করেছেন হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল। সেখানে ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বিবেকানন্দ মজুমদার বলেন, “মামলা করেছি, এখন আসামি গ্রেপ্তার করে বিচারের মাধ্যমে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।”
গত সোমবার দিরাই উপজেলায় হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত সম্মেলনে যান হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। সম্মেলনে মামুনুল হকের দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে স্থানীয় এক হিন্দু যুবক ফেইসবুকে একটি পোস্ট দেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
শাল্লা থানার ওসি নাজমুল হক বলেন, “ওই ঘটনাকে ধর্মীয় উসকানি আখ্যায়িত করে ওই এলাকার মামুনুল হকের অনুসারীরা মঙ্গলবার রাতে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সেই রাতেই ওই যুবককে আটক করে।
“বুধবার সকালে কাশিপুর, নাচনী, চণ্ডিপুরসহ কয়েকটি মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামের হেফাজত নেতা মামুনুল হকের কয়েক হাজার অনুসারী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে নোয়াগাও গ্রামে অতর্কিত হামলা চালায়। হাজারো মানুষের আক্রমণে গ্রাম ছেড়ে আত্মগোপনে যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এই সুযোগে হেফাজত নেতার অনুসারীরা গ্রামে প্রবেশ করে তছনছ করে। লুটপাট করে বিভিন্ন বাড়িতে।”
বৃহস্পতিবার নোয়াগাঁও গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ঘুরে দেখার পর র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের ঘরবাড়িতে হামলার ঘটনায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না। যারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তাদের অতিদ্রুত আইনের আওয়তায় এনে বিচার নিশ্চিত করা হবে, যাতে আগামীতে এ ধরনের আর কোনো ঘটনা না ঘটে।”
তিনি বলেন, “এই দেশ হিন্দুদের, এই দেশ মুসলমানদের, এই দেশ সবার। সবাই আমরা মিলেমিশে থাকব। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে সবার সমান অধিকার রয়েছে। কেউ যদি সংখালঘুদের ওপর নির্যাতন করে তা সহ্য করা হবে না।”