পাবনায় এমপিপুত্রের বিরুদ্ধে ‘জমি দখল ও ভূমিহীনদের মারধরের’ অভিযোগ

পাবনায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর ছেলে নাসিফ শামস রনির বিরুদ্ধে সরকারি ও দরিদ্র চাষিদের জমি দখল ও তাদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

সৈকত আফরোজ আসাদ পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2021, 04:01 PM
Updated : 14 March 2021, 04:39 PM

গ্রামবাসীর পক্ষে ‘মনিরুজ্জামান’ ও ‘মানিক’ নামে দুজনের স্বাক্ষরে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে পাবনার ডিসির কাছে।

তবে পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) আসনের সংসদ সদস্য টুকুর ছেলে রনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, নাসিফ শামস রনি বেড়া উপজেলার পায়না এলাকায় যমুনা নদীর তীরে ২০১২ সালে ৬০ বিঘা জমি কেনেন। এরপর নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের জমি ‘দখলে’ নিয়ে নেন। এরপর ক্রমান্বয়ে আশপাশের দরিদ্র চাষিদের দখলে থাকা ব্যক্তিগত ও খাস খতিয়ানভুক্ত ৯০ বিঘা জমি ‘দখলে নেওয়ার পাঁয়তারা’ করতে থাকেন।

অভিযোগে বলা হয়, রনির ‘হুমকিতে’ গ্রামবাসীরা জমির দখল না ছাড়ায় গত শুক্রবার সকালে ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ সঙ্গে নিয়ে চাষিদের রোপণ করা বোরো ধান নষ্ট করে কাঁটাতারে জমি ঘিরে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ সময় চাষিরা বাধা দিলে ‘সন্ত্রাসীরা’ তাদের মারপিট শুরু করে। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী বিক্ষোভ শুরু করলে উপস্থিত পুলিশ উল্টো ‘এমপি পুত্রের পক্ষ নিয়ে’ বিক্ষোভকারীদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়।  

কয়েক ঘণ্টা পর তাদের কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ঘটনার পর থেকে পুলিশ তাদের ‘হয়রানি করছে’ বলে অভিযোগ করেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেড়া মডেল থানার ওসি আবুল কাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নাসিফ শামস রনি বেড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। তার প্রকল্পে দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষীর কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ করা হয়েছে সেখানে। 

“ওই মামলায় শুক্রবার কয়েকজনকে আটক করে থানায় আনা হয়। পরে তাদের মধ্যে পায়না গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে তুহিন ও আহমেদ মোমিন বেপারির ছেলে মহররম আলীকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”

বেড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, শুক্রবার পায়না গ্রামে ‘বিশৃঙ্খলার’ খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। কারো পক্ষ হয়ে কাজ করার অভিযোগ ‘সত্য নয়’।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মানিক ব্যাপারী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াবদা বাঁধে বানভাসি ও হতদরিদ্র কিছু মানুষ ছাপড়া ঘর তুলে বসবাস করে। শুক্রবার তাদের উচ্ছেদ করার খবর পেয়ে তিনি সেখানে যান।

“এই সময় এমপিপুত্রের লোকজন এক্সক্যাভেটর দিয়ে চাষিদের রোপণ করা ধান মাটিচাপা দিতে শুরু করলে আমি দলীয় পরিচয় দিয়ে নাসিফ শামস রনিকে ফসল নষ্ট না করতে অনুরোধ জানাই; তখন তিনি উত্তেজিত হয়ে আমাকেও গালাগাল দেন।”

বেড়া পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মান্নান মানু বলেন, নাসিফ শামস রনি ৬০ বিঘা জমি কিনে সেখানে ‘সৌদিয়া এগ্রো সোলার পিভি পাওয়ার প্ল্যান্ট’ এর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ‘আশপাশের সব জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা’ করছেন।

“সাধারণ মানুষের তো বটেই, আমার ব্যক্তিগত জমির ধানও তিনি নষ্ট করে দিয়েছেন।”

তবে গ্রামবাসীর অভিযোগ ‘অসত্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্ প্রণোদিত’ বলে দাবি করছেন নাসিফ শামস রনি।

তিনি বলেন, পায়না এলাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও ব্যক্তিগত ব্যবসার জন্য তিনি জমি কিনেছেন। সেখানে উন্নয়ন কাজ চলছে। কাউকে উচ্ছেদ বা মারপিটের ঘটনা ‘কখনোই ঘটেনি’।

“স্থানীয় রাজনীতিতে গ্রুপিংয়ের সুযোগ নিতে আমাকে ও আমার পরিবারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে।”

জমি দখলের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে পাবনার ডিসি কবীর মাহমুদ বলেন, নদী তীরবর্তী যে জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে তা ব্যক্তিগত না খাস তা যাচাই করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসি ল্যান্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগের অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, আইন, বিচার ও সংসদ, ভূমি ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সচিব এবং বিভাগীয় কমিশনার রাজশাহী, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ, জেলার এসপি, বেড়া ইউএনও, পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী, বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেড়া সার্কেল ও বেড়া থানার ওসি বরাবরেও দেওয়া হয়েছে।

নাসিফ শামস রনির সংবাদ সম্মেলন

এস এম নাসিফ শামস রনি রোববার দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ‘উন্নয়ন কাজে বাধানকারীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বেড়া পৌরসভার মুজিব বাঁধ সংলগ্ন পায়না থেকে মোহনগঞ্জ পর্যন্ত চাঁদাবাজি, মাদক, জুয়া, অবৈধ মাটি ও বালি উত্তোলনসহ নানারকম অসামাজিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে স্থানীয় সাধারণ মানুষ।

শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের জন্য তার মা বেগম লুৎফুন্নেছার নামে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি টেকনিক্যাল কলেজ ও একটি সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের চেষ্টা করছেন বলে নাসিফ শামস জানান।

তিনি অভিযোগ করেন, এলাকার ওই ‘সিন্ডকেট’ বিভিন্ন সময়ে চাঁদা দাবি করে এসব উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টি করছে।

গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে এসব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তিনি।