নোয়াখালীর আলাউদ্দিন হত্যায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ

নোয়াখালীর সুরহাটে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের গোলাগুলিতে নিহত আলাউদ্দিনের পরিবারের মামলা থানায় না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

নোয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2021, 03:57 PM
Updated : 12 March 2021, 04:12 PM

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে আলাউদ্দিনের স্বজনরা এই অভিযোগ করেন।

তবে পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সন্ধ্যায় উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের চরকালী গ্রামে আলাউদ্দিনের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নিহতের মা মরিয়মের নেছা ও ছোট ভাই এমদাদ হোসেন এই হত্যাকাণ্ডের জন্য বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জাকে দায়ী করেন এবং জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান।

ঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ মামলা রেকর্ড না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে আলাউদ্দিনের ছোটো ভাই এমদাদ হোসেন বলেন, “কাদের মির্জাকে প্রধান আসামি করায় পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। বৃহস্পতিবার রাতে মামলা নিয়ে আমি থানায় যাই। ওসি সাহেব মির্জার নাম কেটে দিলে মামলা নেবেন বলে জানিয়ে দেন।”

থানায় মামলা না নিলে অভিযোগ নিয়ে তিনি আদালতে যাবেন বলে জানান।

পরে এমদাদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমাকে প্রশাসন থেকে বলতেছে এক নম্বর আসামি মির্জার নামটা কেটে দেওয়ার জন্য। আমি বলেছি অসম্ভব; প্রকৃত আসামি সে, তার নাম আমি কেন কাটব? আমি তার নাম কাটবো না। মামলা আপনারা নিলে নেন না নিলে নাই।”

সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি থানায় গিয়েছেন জানিয়ে বলেন, “ওসি সাহেব বাইরে ছিলেন। এসে আমাকে দেখার পর কিছু না বলে আবার চলে যান। কিছুক্ষণ পর আমি তাকে ফোন দিলে তিনি আসতেছি আসতেছি বলেও আসেনি। থানায় মামলা না নিলে আমি কোর্টে যাব।”

তবে মামলা থেকে মির্জা কাদেরের নাম বাদ দেওয়ার কথা পুলিশ বলেনি বলে এসপির দাবি।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, নিহত আলাউদ্দিনের ভাই একটি এজাহার নিয়ে থানায় এসেছিলেন। কিন্তু এজাহারে সাক্ষীর নামসহ কিছু ত্রুটি থাকায় তিনি আবার এজাহার সংশোধনের জন্য নিয়ে গেছেন। এজাহার থেকে পুলিশ কাউকে বাদ দিতে বলেনি।

এসপি বলেন, বসুরহাটে এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে; কোনো ধরনের সমস্যা নেই। কোম্পানীগঞ্জে আর যাতে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে না পারে সেলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে মাঠে রয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনার পর থেকে তিন শতাধিক পুলিশ ও র‌্যার সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলে এসপি জানান।

তিনি জানান, জেলা পুলিশ সুপার ছাড়াও চট্টগ্রাম রেঞ্জের একজন পুলিশ সুপার, সার্বক্ষণিক দুই জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও ৩০ জন পুলিশ পরিদর্শকের নেতৃত্বে তিন শতাধিক পুলিশ ও ডিবি পুলিশ এবং র‌্যাবের দুটি টিম মোতায়েন রয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনের সময় থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় দ্বন্দ্বের বিষয় প্রকাশ্যে আসে।

এর জেরে ১৯ ফেব্রুয়ারি চাপরাশিরহাট পূর্ব বাজারে আবদুল কাদের মির্জা ও মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান স্থানীয় সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির।

এরপর গত ৯ মার্চ রাতে উপজেলার বসুরহাট পৌরসভা চত্বরে উভয় পক্ষের মধ্যে পুনরায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান যুবলীগ কর্মী আলাউদ্দিন (৩২)।

খিজির হায়াত খানের মামলায় ত্রুটির কথা বলল পুলিশ

গত ৮ মার্চ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানের ওপর হামলার ঘটনায় করা অভিযোগে ত্রুটি আছে উল্লেখ করে স্ত্রীকে থানায় ডেকেছে পুলিশ।

খিজির হায়াত খানের স্ত্রী উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আরজুমান আরা পারভিন বলেন, তার স্বামীর উপর হামলার ঘটনায় আবদুল কাদের মির্জা সাহেবকে প্রধান আসামী করে তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এফআইআর না হওয়ায় তা জানতে তিনি যান।

“ওসি সাহেব আমাকে বললেন আপনি থানায় আসতে হবে, আপনার মামলায় কিছু ভুলভ্রান্তি আছে। এগুলো একটু ঠিক করে দিতে হবে। এখন থানায় আসলাম দেখি কী সমস্যা।”

খিজির খানকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে ৯ মার্চ বসুরহাট পৌর এলাকার রূপালী চত্বরে সমাবেশ চলাকালে সংঘর্ষ বাধে। ওই সংঘর্ষে দলের কর্মী আলাউদ্দিন নিহত হন।