ভ্যান চালিয়েই তিন সন্তানসহ বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণ চালান জেলার আক্কেলপুর উপজেলার বিষ্ণাপুর গ্রামের এই নারী।
মুংলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০০২ সালে বিয়ে হয়েছিল এক বেকার ছেলের সঙ্গে। সেই সংসারে অভাব যেমন ছিল তেমনি ছিল স্বামীর নির্যাতন। অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্যেই ১১ বছরের সংসার জীবনের ইতি টানেন মুংলি। তিন সন্তান নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়ি।
“বাবাও গরিব। তিন সন্তান আর বাবা-মাকে দেখতে হয়। প্রথমে ফেরি করে পান বেচতাম, খাল-বিলে মাছ ধরে বেচতাম। এরই মধ্যে কিছু ধার-কর্জ করে প্যাডেলচালিত একটি ভ্যান কিনে রাস্তায় নামি একদিন।”
পরে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাটারিচালিত ভ্যান কিনেছেন বলে তিনি জানান।
তার তিন সন্তানের মধ্যে রয়েছে ১২ বছর বয়সী ছেলে আর নয় ও সাত বছরের মেয়ে। তারা স্কুলে যাচ্ছে।
মুংলী বলেন, “হাজারো কষ্ট হোক, তিনটা বাচ্চাকে মানুষের মত মানুষ করে বড় করার ইচ্ছা আছে। জানি না ভগবান কী করবেন।”
মুংলীকে ভ্যান চালাতে দেখে এলাকাবাসী তার প্রশংসা করেন।
কানচগাড়ি গ্রামের ভ্যানচালক বাবু আকন্দ বলেন, “জেলায় মুংলীই একমাত্র নারী ভ্যনচালক। পাঁচ-সাত বছর ধরে ভ্যান চালিয়ে রোজগার করে তিন সন্তানের লালন-পালন ছাড়াও সাধ্যমত বাবা-মাকে সাহায্য করেন মুংলী; যা অনেক ছেলেও পারে না।”
মুংলীর মা শেফালী রানী মালী বলেন, “ছোট থাকতেই বিয়া দিছি বাবা। ডিম্যানের (যৌতুক) ২০ হাজার ট্যাকা, আট আনা সোনা, টিভি, টিভির ব্যাটারি, চায়না ফোনেক্স সাইকেলসহ ঘর সাজে (আসবাব পত্র) দিছি। তারপরও জামাই বেটিক মারধর করে। জ্বালা-যন্ত্রণা দেয়। পিটে বার করে দেয়। বুজেসুঝে (বুঝিয়ে) বেটিক আবারও জামাইবাড়ি পাঠে দেই। এভাবে যাওয়া-আসা করতে করতে তিনটা বাচ্চা হল। তার পরও মারধর করেই। কষ্ট দেয়। এখন তো হামার বাড়িতে আছে। কষ্ট করে চলাওছে (চালাচ্ছে) বাবা।”
মুংলী একটা খুপড়ি ঘরে ছেলেমেয়ে ও বাবা-মাকে নিয়ে থাকেন। তাকে সরকারি আবাসন প্রকল্পের একটি ঘর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিলকপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম মাহবুব সজল।
তিনি বলেন, “মুংলী কারও দয়া গ্রহণ করতে চান না। তার পরও করোনাভাইরাস দুর্যোগকালের আগে ও পরে অন্য দরিদ্রদের সঙ্গে মুংলীকেও সাধ্যমত সাহায্য করা হয়েছে। তার জন্য সরকারি আবাসন প্রকল্পের একটি বাড়ি চেয়ে আবেদন করেছি। আশা করি সরকারি খরচে মুংলীর জন্য একটি বাড়ির ব্যবস্থা করতে পারব।”