শুষ্ক মৌসুমে আপাতত হাঁটাপথে চলাচল করা গেলেও বর্ষায় তা সম্ভব হবে না।
গত জুলাই মাসে বর্ষায় পানির তোড়ে উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের নয়ানী বাগডোকরা টোলেরডাঙ্গা গ্রামের এই সড়কটি ভেঙে যায়।
ওই সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এলাকাবাসীকে নিয়ে মাটি ফেলে ভাঙন সারানোর চেষ্টা করলেও পানির তোড়ে তা টেকানো যায়নি।
এই কারণে নানা প্রয়োজনে টোলেরডাঙ্গাসহ পাশ্ববর্তী আরও কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে যানবাহন ব্যবহার করতে হলে পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এই সড়ক সংস্কারের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠালেও উপজেলা চেয়ারম্যান তাতে স্বাক্ষর না করায় তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া যায়নি।
উপজেলা শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে ওই এলাকায় গিয়ে মানুষের দুর্ভোগ দেখা যায়। রিকশা ভ্যান অথবা মোটরসাইকেল পারাপার করতে দেখা গেছে অন্যের সহযোগিতা নিয়ে।
নয়ানী বাগডোকরা টোলেরডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক ধর্ম নারায়ণ রায় বলেন, গেল বছরের জুলাই মাসের দিকে অতি বৃষ্টিতে গ্রামের কাঁচা সড়কটির ৩০০ মিটার ভেঙে যায়। ইউপি চেয়ারম্যান স্বল্প অর্থায়নে বালুর বস্তা এবং গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি ফেলে সড়কটি রক্ষার চেষ্টা করেন।
“কিন্ত পানির তোড়ে আমাদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর স্থায়ীভাবে সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আমরা গ্রামবাসী এখন ক্লান্ত। গ্রামের মানুষ যানবাহন নিয়ে পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরে পার্শ্ববর্তী বামুনিয়া ইউনিয়ন দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছি।”
একই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দীনেশ চন্দ্র রায় বলেন, আরেক বর্ষা আসার সময় হলেও মেরামত হচ্ছে না ভাঙা সড়কটি। ওই ভাঙা সড়কে যানবাহন না চলায় পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হচ্ছে। বর্ষার আগে সড়কটি মেরামত না হলে স্কুল কলেজে যাওয়া বন্ধ হবে গ্রামের অন্তত ২০০ শিক্ষার্থীর।
“শুধু তাই নয়, জরুরি রোগী পরিহনেও বাধার সৃষ্টি হচ্ছে; কেউ অসুস্থ হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”
ওই গ্রামের সংরক্ষিত ওয়ার্ড নারী ইউপি সদস্য জোসনা রাণী রায় বলেন, সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন টোলের ডাঙা, সাধুপাড়া, পূর্বপাড়া, কালিগঞ্জ, পশ্চিমপাড়া এবং পাশ্ববর্তী বামুনিয়া ইউনিয়ের অন্তত ছয় হাজার মানুষ উপজেলা সদরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করেন। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর থেকে বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল। বর্তমানে পায়ে হেঁটে চলাচল করলেও বর্ষায় সেটিও বন্ধ হবে।
তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছিলেন। বরাদ্দ না পাওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি এবং নিজস্ব অর্থায়নে কিছু কাজ করে আপাতত পায়ে হেঁটে চলাচলের ব্যবস্থা করেছেন। সম্পূর্ণ সচল করতে সরকারি বরাদ্দের প্রয়োজন।
বোড়াগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিমুন বলেন, গেল বর্ষায় সড়কটির ভেঙে যায়। সেই সময় তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অর্থ খরচ করে বালুর বস্তা ফেলেন। পাশাপাশি গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে দিয়ে মাঠি ফেলে সড়কটি রক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু পানির তোড়ে তা টেকেনি।
“ইউএনও আমাকে জানিয়েছেন- গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষাণাবেক্ষণ এবং সংস্কার কর্মসূচিতে সড়কটি সংস্কারে জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা দিয়েছেন। প্রকল্প অনুমোদনের সময় পার হলেও সেটি অনুমোদন হয়নি।”
ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের নয়ানী বাগডোকরা টোলেরডাঙ্গা গ্রামের ওই সড়কটি সংস্কারের জন্য তিনি একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন।
“গত ৩১ জানুয়ারি প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠানোর সময়সীমা ছিল। আমি সময়ের মধ্যে স্বাক্ষর করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে স্বাক্ষরের জন্য পাঠিয়েছি। তিনি স্বাক্ষর না করায় জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো সম্ভব হয়নি।”
এই বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ বলেন, “প্রকল্প প্রস্তাবনা নিয়ম অনুযায়ী না হওয়ায় সেটিতে আমি স্বাক্ষর করিনি। সময় পেরিয়ে গেলেও পরবর্তীতে সময় বাড়ানো হয়েছে। উপজেলা পরিষদের সভায় পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”