শেষমেশ সাড়া না পেয়ে নিজেরা চাঁদা দিয়ে নদীর উপর সেতু নির্মাণ শুরু করেছেন তারা। তবে সেতু নির্মাণের প্রকৌশলগত কোনো জ্ঞান না থাকায় সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে শঙ্কা করছেন অনেকে। এতে সেতু নির্মাণের জন্য দেওয়া গ্রামবাসীর কয়েক লাখ টাকা জলে যেতেও পারে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ‘বিলসড়াইল বটতলা‘এলাকায় চন্দনা-বারাশিয়া নদীর ওপর এ সেতু নির্মাণের কাজ চলছে।
গত ২৯ জানুয়ারি একশ’ ফুট লম্বা এবং প্রস্থে সাড়ে তিন ফুট এ সেতু নির্মাণ শুরু হয়েছে। গ্রামবাসীর বলছেন, আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে এর নির্মাণ শেষ হবে।
সেতুটি নির্মাণ হলে ময়না ইউনিয়নের বিলসড়াইল, বান্দুগাম, ঠাকুরপুর, হাটুভাঙ্গা, মিরেরচর, কান্দাকুল ও ইচাখালিসহ সাতটি গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াত সহজ হয়। এ রাস্তা দিয়ে ওই এলাকার লোকজন সাতৈর বাজারসহ কয়েকটি হাট-বাজারে যাতায়াত করে। এ জায়গায় সেতু না থাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এক-দেড় কিলোমিটার ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে তাদের যাতায়াত করতে হয়।
তবে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) রফিকুল ইসলাম বলেন, যে কোনো নদীর উপর কোনোভাবে প্রযুক্তিগত বিষয় না দেখে সেতু নির্মাণ সঠিক নয়।
“এটা ভালোর চেয়ে মন্দ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মানুষের জীবনের ঝুঁকি থাকবে।”
এদিকে, সরকারি টাকা না পাওয়ায় সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে যাননি জানালেন সেতু নির্মাণের প্রধান উদ্যোক্তা বিলসড়াইল গ্রামের শেখ হারুন-অর রশিদ।
হারুন বলেন, এ ব্যাপারে প্রায় দুই মাস আগে এলাকাবাসী সভা করে। ওই সভায় নিজেদের টাকায় সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ইতিমধ্যে ১০৫ জন গ্রামবাসীর কাছ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা উঠেছে। গত ২৯ জানুয়ারি বালু, রড, সিমেন্ট, খোয়া দিয়ে নদী ওপর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে।
প্রকৌশলীদের অনুমোদন ছাড়া সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সেতু দিয়ে তো ভারি গাড়ি চলাচল করবে না।
তাছাড়া যে সব মিস্ত্রি সেতুর কাজ করে তাদের মতামতের ভিত্তিতে বেজমেন্ট ও পিলারে ১৬ মিলি মাপের প্রয়োজনীয় সংখ্যক রড দিয়েছেন বলেন তিনি।
এ উদ্যোক্তা বলছেন, এটি নির্মাণ হলে সাত গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ উপকৃত হবে।
চন্দনা-বারাশিয়া নদী পাড়ি দিয়ে কেএফ করিম উচ্চ বিদ্যালয়, সাতৈর উচ্চ বিদ্যালয়, সাতৈর প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাতৈর দাখিল মাদ্রাসা, সাতৈর কিন্ডারগার্ডেন, একতা একাডেমীর বিদ্যালয়ে এবং সাতৈর বাজারে হাজারের বেশি লোকজন যাতায়াত করে। বর্ষাকালে ওই জায়গায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতে হয়।
সাতৈর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাফিজ জানান, সেতু না থাকায় তারা ঝুঁকি নিয়ে এত দিন ধরে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে বিদ্যালয়ে যেত।
“সেতুটির নির্মাণ হলে নির্বিঘ্নে নদী পারাপার হতে পারব।”
এলাকাবাসী জানাচ্ছে, গত ১৫ বছর ধরে তারা চন্দনা-বারাশিয়া নদীর ওই জায়গায় একটি সেতু নির্মাণের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের কাছে ধর্ণা দিয়েছেন তারা।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমনকি স্থানীয় সাংসদের কাছে তারা এ সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন কিন্তু কোনো ফল জোটেনি।
এ কাজে সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তা না পেয়ে গ্রামবাসীরা নিজেরাই গ্রামে গ্রামে টাকা তুলে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির মো. সেলিম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে সেতু নির্মাণের জন্য কোনো বাজেট নেই। তাই ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে সেতু নির্মাণ করা সম্ভব না।
“তবে গ্রামবাসী নিজেদের উদ্যোগে যে সেতুটি নির্মাণ করছেন সেটি একটি শুভ উদ্যোগ।”