এই বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, “২০১০ সালে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পশুর নদের প্রতি লিটার পানিতে তেলের পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম। আর এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ মিলিগ্রামে; যেখানে স্বাভাবিক মাত্রা হল ১০ মিলিগ্রাম।”
সুন্দরবনে দূষণ বাড়তে থাকায় উদ্বেগ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিল্প কারখানা স্থাপন, যান্ত্রিক নৌযান চলাচল, বিষ দিয়ে মাছ শিকারসহ বিভিন্ন তৎপরতা বনের গাছপালা, বন্যপ্রাণী ও জলজ প্রাণীর ওপর প্রভাব পড়ছে বলে তারা মনে করেন।
অধ্যাপক হারুন বলেন, “সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা নদ-নদীর পানি ও মাটিতে দূষণ বেড়ে যাওয়ায় অনেক জায়গায় আগের মত আর গাছের চারা গজাচ্ছে না।
“তাছাড়া পানিতে তেলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জলজ প্রাণী। যেসব রুটে নৌযান চলাচল করে ওই রুটগুলোর বনের পাশে এখন আর তেমন হরিণ, বানরসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী দেখা যায় না।”
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আগলে রেখেছে সুন্দরবন। সুন্দরবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে এখানকার পরিবেশ-প্রতিবেশ ব্যবস্থা।
দূষণের কারণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে বলে মনে করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র।
তিনি বলেন, “দক্ষিণের অর্থনৈতিক-সামাজিক অবস্থাও সুন্দরবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ অঞ্চলের মানুষের জীবনপ্রবাহের সঙ্গে সুন্দরবন আবর্তিত আবহমান কাল থেকে। সুন্দরবনকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।”
দূষণের কারণে বনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে বলে মনে করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) খুলনার সমন্বয়কারী এম বাবুল হাওলাদারও।
তিনি বলেন, “বনের কিছু এলাকায় শিল্প কারখানা ও বনের মধ্য দিয়ে জলযান চলার কারণে সুন্দরবনে দূষণ বেড়েছে।”
তিনি বলেন, “বনবিভাগ ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়হীনতায় সুন্দরবনে পরিবেশগত ঝুঁকি বাড়ছে। বিষ দিয়ে মাছ ধরা বন্ধে বন বিভাগের উদ্যোগ পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন সুন্দরবন সংশ্নিষ্টরা।
“এ অবস্থা নিরসনে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের দাবি জানাই। তাতে সুন্দরবন সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা তৈরি হবে।”
খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান বলেন, বনে অপরাধ দমনে বন বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। বিষ দিয়ে মাছ ধরা বন্ধে তারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন। ট্যুর অপারেটরদের মাধ্যমে দূষণরোধে পর্যটকদের সচেতন করা হয় প্রতিনিয়ত।
এদিকে বনের সুরক্ষায় পরীক্ষামূলক নমুনা প্লট তৈরিসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানালেন বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিভাগীয় কর্মকর্তা আ স ম হেলাল সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, তারা আধুনিক বনব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু করেছেন। সম্প্রতি শুরু হওয়া সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে বন সুরক্ষায় সুন্দরবনের ৩৩টি স্থানে স্থায়ী নমুনা প্লট স্থাপনের মাধ্যমে সেখানে লবণাক্ত জমিতে গাছের চারা জন্মানো, চারা মারা যাওয়া ও গাছের বৃদ্ধির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এটা বন রক্ষায় সিদ্ধান্ত ও প্রকল্প গ্রহণে সহায়ক হবে।
বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, অপর্যাপ্ত জনবল ও জলযান সংকটের মধ্যেও তারা বনের সম্পদ রক্ষায় সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সুন্দরবনে সংঘটিত অনিয়ম-অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তিনি বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।
তিনি বলেন, “দূষণরোধ ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি থেকে উত্তরণের পথ খোঁজা হচ্ছে।”
একই সঙ্গে সুন্দরবন রক্ষায় জনসচেতনার তাগিদ দিয়েছেন উপমন্ত্রী।