জিরা চাষে সাফল্যের প্রত্যাশা গবেষকের

কৃষক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে জিরা চাষ শুরু না হলেও সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছেন বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2021, 03:56 AM
Updated : 10 Feb 2021, 03:56 AM

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত মসলা গবেষণা কেন্দ্র। এখানে গবেষণার কাজে জিরার চাষ করা হচ্ছে।

এছাড়া, গবেষণা কেন্দ্রের পরামর্শে কৃষক পর্যায়েও কয়েকজন চাষ করেছেন। তবে এক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে। সেসব ব্যাপারে গবেষকরা পরামর্শ দিয়ে উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করছেন।

সরেজমিনে এ মসলা গবেষণা কেন্দ্রে দেখা যায়, জমিতে কাজ করছেন কয়েকজন দিনমজুর। সবুজ জিরা ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা। পাশে থেকে পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষণা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তারা।

দিনমজুর ও গবেষকরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেন।

দিনমজুর আবুল হোসেন বলেন, “কয়েক বছর হলো কাজ করছি এখানে। বীজ বপন থেকে জিরা উঠানো পর্যন্ত। এখানকার জিরার গন্ধ অনেক। বাজারে বিক্রি জিরার চেয়ে অনেক ভালো।”

রাজশাহীর গোদাগারী উপজেলার লালা দিঘি বাছাইতলা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে তাকে জিরার বীজ, সার, কীটনাশক দেওয়া হয়েছে। তিনি ৬ শতাংশ জমিতে জিরা চাষ করেছেন। এখন গাছে ফুল এসেছে।

“তবে সার, সেচ, কীটনাশক দিলেও গাছে পচন ধরেছে; অনেক গাছ মরে গেছে। নানা বিষয়ে গবেষণা কর্মকর্তারা এসে পরামর্শও দিয়েছেন।”

কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জিরা চাষের গবেষণায় সাফল্যের দিকে এগুচ্ছে মসলা গবেষণা কেন্দ্র। জিরা মসলা এখনও বাংলাদেশে আমদানি নির্ভর। চাহিদা মেটাতে জিরা চাষ নিয়ে গবেষণা চলছে।

তিনি জানান, এখন বাংলাদেশে ইন্ডিয়া, ইরান, সিরিয়া, তুরস্ক থেকেই জিরা আমদানি হচ্ছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তানেও জিরার চাষ হয়।

মাহমুদুল হাসান জানান, ২০০০ সাল থেকে বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্রসহ আঞ্চলিক ও উপকেন্দ্রে জিরা চাষের গবেষণা চলছে। মাঝে কয়েক বছর বন্ধ থাকে। ২০০৮ সাল থেকে আবার গবেষণা শুরু হয়েছে।

“সাফল্যের দিকে এগুচ্ছি আমরা। উৎপাদিত জিরার গুণগত মান অনেক ভালো।” 

জিরা চাষের বিষয়ে তিনি বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে বীজ বপন শুরু হয়। ফেব্রুয়ারির শেষে পরিপক্ব পাওয়া যায় শীতকালীন এই ফসল।

কুয়াশা এবং বেশি ঠান্ডা জিরা চাষ ব্যাহত করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেসব এলাকায় পানির প্রাপ্তি কম সেসব জায়গা জিরা চাষের উপযুক্ত। সেই বিবেচনায় জিরা বীজ এবার রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল, গাইবান্ধা ও বগুড়ার চরাঞ্চল এবং দিনাজপুরের ৪০ জন কৃষককে দেওয়া হয়েছে।

যেসব এলাকায় কৃষকরা চাষে সফল হবেন ওইসব এলাকায় পরবর্তীতে আরও বেশি করে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

দেশে কী পরিমাণ জিরার চাহিদা রয়েছে প্রশ্ন করা হলে তার কাছে তথ্য নেই বলে জানান।

বর্তমানে প্রতি বিঘায় একশ থেকে ১১০ কেজি জিরা উৎপাদন হচ্ছে জানিয়ে মাহমুদুল হাসান বলেন, সংরক্ষণ, পরিচর্যা, গবেষণার কারণে এখন উৎপাদন খরচ বেশি। তবে ব্যাপক চাষাবাদ শুরু হলে ব্যয় অনেক কমে আসবে এবং কৃষকরা লাভবান হবে বেশি।

পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে জিরা আমদানি করতে হবে না বলে প্রত্যাশা এই কর্মকর্তার।

মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা কেন জিরা চাষে তেমন সফল হচ্ছে না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কৃষক পর্যায়েও গবেষণা চলছে। গবেষণা কেন্দ্র এবং কৃষক পর্যায়ে গবেষণায় কী কী সমস্যা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পচন ঠেকাতে কোন কীটনাশক ব্যবহারে সফলতা পাওয়া যাবে এটাও ভাবা হচ্ছে।

তিনি জানান, জিরা চাষের জমিতে পানি না দেওয়াই ভালো। তবে যদি প্রয়োজন হয় তাহলে একেবারেই কম দিতে হবে। কৃষকরা পরিমাণ বুঝতে না পারায় চাষে সমস্যা হচ্ছে তাদের। তবে আস্তে আস্তে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠবে কৃষকরা।