টিকা নিয়ে তারা ধন্যবাদ জানালেন প্রধানমন্ত্রীকে

দেশে উসবমুখর পরিবেশে করোনাভাইরাসের গণ টিকা নেওয়ার মধ্যে সকল শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2021, 05:40 PM
Updated : 10 Feb 2021, 07:32 AM

টিকা দিয়ে তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং উন্নত দেশের সঙ্গে সঙ্গে এদেশেও স্বল্প সময়ে টিকার ব্যবস্থা করায় সরকারের প্রশংসা করেন।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এমন কয়েকজনের প্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে।

গত রোববার টিকা দেওয়া শুরু হয়। প্রথম দিকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সাধারণ মানুষ সংশয়ে থাকলেও দ্রুত তা কেটে যাচ্ছে। তাই টিকা গ্রহণের হারও বাড়ছে প্রতিদিন।

টিকা গ্রহণের জন্য বয়স সীমা প্রথমে সর্বনিম্ন ৫৫ বছর থাকলেও একদিন পর তার ৪০ বছর করা হয়।

নীলফামারী

নীলফামারী জেনারেল হাসাপাতালের টিকা নিতে এসছিলেন জেলা সদরের বাবুপাড়া মহল্লার ভুবন রায় নিখিল।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, টিকা বাজারের আসার আগ থেকে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো টিকা আগে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল।

“দেশে টিকা আসবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সেই দুশ্চিন্তা দূর করে দিয়েছেন। অনেক ধনি দেশের আগেই আমাদের দেশের মানুষের জন্য তিনি টিকা এনেছেন। প্রতিটি জেলায় জেলায় মানুষের জন্য টিকা পৌঁছে দিয়েছেন।”

তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।

জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা নিয়েছেন ব্যবসায়ী মাহবুবর রহমান মনি।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রধানন্ত্রীর দিক নিদের্শনায় অত্যন্ত চমৎকার ব্যবস্থাপনায় টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।”

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে টিকা নেওয়ার পর জেলা শহরের উকিলের মোড় মহল্লার রিনি সরকার বলেন, “শেখ হাসিনা ছিলেন বলেই আজ আমরা দেশের মানুষ মহামূল্যবান এই টিকা নিতে পেরেছি। তিনি না থাকলে হয়তো এই টিকা আমরা পেতাম না। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী।”

প্রবাসীদের জন্য আগে টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে সিঙ্গাপুর প্রবাসী রবিউল ইসলাম রবি বলেন, “টিকাদান শুরুর পর থেকে বয়স নিয়ে বেশ চিন্তাই ছিলাম। সরকার প্রথমে ৫৫ বছরের বেশি বয়স্কদের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এজন্য ভেবেছিলাম আমার টিকা নেওয়া হবে না। তবে গতকাল জানলাম প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বয়স সীমা শিথিলসহ প্রবাসীদের জন্য টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।

“আজ দুপুর ১টার দিকে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের কেন্দ্রে এসে নিজের নাম নিবন্ধন করার পরপরই আমি টিকা নিতে পেরেছি। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

গণমাধ্যমকর্মী তাহমিন হব ববী বলেন, “প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে নাম নিবন্ধনের ব্যবস্থা চালু রাখায় আমরা কেন্দ্রে এসে নাম নিবন্ধন করেই স্বল্প সময়ে টিকা নিতে পারছি। চিকিৎসক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন এসে আমাদের খবর নিচ্ছেন। এমন ব্যবস্থায় আমার অনেক খুশি।”

নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, টিকা গ্রহণে বয়সসীমা শিথিল করা এবং টিকা গ্রহণের পর সকলেই সুস্থ থাকায় জেলায় তৃতীয় দিনে টিকা নিয়েছে দ্বিগুণ মানুষ।

তিনি জানান, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দেওয়ার জেলার মানুষের মাঝে গত দু’দিনের তুলনায় টিকা নিতে ইচ্ছুক মানুষের প্রবণতা বেড়েছে। গত ৩ দিনে জেলার সাতটি হাসপাতালের সাতটি কেন্দ্রে মোট ১ হাজার ৮৩০ জন টিকা নিয়েছেন; নাম নিবন্ধন করেছেন ৬ হাজার ৪৭৮ জন। 

মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জেলায় টিকা নিতে নাম নিবন্ধন করেছেন ১ হাজার ৭৭১ জন। এদের মধ্যে সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন এক হাজার ৭০ জন মানুষ, যা গত দুই দিনের তুলানায় দ্বিগুণ।

নেত্রকোণা

টিকা গ্রহণের তৃতীয় দিনে উচ্ছ্বাস ও আনন্দের মাত্রা আগের দুদিনের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। টিকার বুথে ছিল উপচেপড়া ভিড়।

এই জেলায়ও টিকা গ্রহণকারীরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

সিভিল সার্জন মো. সেলিম মিয়া জানান, গত দুই দিনে ৯৫৪ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ৫ হাজার ৫০২ জন রেজিস্ট্রেশন করেছেন। সময় যত এগোচ্ছে ততই রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা বাড়ছে। টিকা প্রদানেরও গতি বাড়ানো হচ্ছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বেচ্ছায় বুথগুলোতে যাচ্ছেন, টিকা নিচ্ছেন। কাল থেকে জেলায় প্রচারণা আরও বাড়ানো হবে। 

মঙ্গলবার নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে দেখা গেছে, বিজিবি, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী, সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন টিকা গ্রহণে বুথে আসছেন।

উন্নয়নকর্মী কল্পনা ঘোষ স্বামী চন্দন মহানায়ক ও শাশুড়ি স্নেহলতা মহানায়ককে নিয়ে টিকা গ্রহণ করেছেন।

তিনি বলেন, “সবাই যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। মানুষ টিকা নিতে পেরে কত খুশি। খুবই সহজে ভালোভাবে টিকা নিতে পেরেছি। অনেক উন্নত দেশ এখনও টিকা দেওয়া শুরু করতে পারেনি। অথচ আমাদের সরকার প্রধান শেখ হাসিনা টিকার ব্যবস্থা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে অশেষ কৃতজ্ঞতা।”

নেত্রকোণা জেলা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুল লতিফ স্ত্রী মারুফা বেগমকে নিয়ে টিকা নেন।

তিনি বলেন, “টিকা নেয়ার আগে মনে কিছুটা অজানা শঙ্কা ছিল; কিন্তু টিকা নিয়ে দেখলাম খুবই সহজ। কোন ব্যথাও অনুভব করিনি। এখনও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি।

“পৃথিবীর অনেক দেশ এখনও টিকা দেওয়া শুরু করতে পারেনি। অথচ নেত্রকোণায় বসে মারণঘাতি এই ভাইরাসের টিকা দ্রুত ও সহজে পেয়ে গেলাম। আমরা প্রধানমন্ত্রীর তড়িৎ ব্যবস্থাপনায় মুগ্ধ।”

এই আইনজীবীর পাশে বসে তার স্ত্রী স্থানীয় জাহানারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা মারুফা বেগমও প্রতিক্রিয়া জানাতে এগিয়ে আসেন।

“দেখেন কত মানুষ নিজে থেকে এসে টিকা নিচ্ছেন। মানুষের মাঝে কত উচ্ছ্বাস; মানুষ কত প্রাণবন্ত। আমরা সরকার ও সরকার প্রধানকে অভিনন্দন জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই।”

করোনাভাইরাসে সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মচারী মো. সুজন মিয়া। তিনিও টিকা নেন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে।

টিকা নেয়ার পর তিনি বলেন, “পরিবার আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল। টিকা নেওয়ায় আমি ও আমার পরিবার চিন্তামুক্ত হয়েছে। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। টিকা গ্রহণের মধ্য দিয়ে আমরা সবাই মিলে দেশ থেকে করোনাভাইরাসের মৃত্যুঘণ্টা বাজাব বলে আশা করছি।”

সোনালী ব্যাংকের চাকুরে জেলা শহরের সাতপাই এলাকার রিক্তা ভট্টাচার্য্য ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার স্বামী আরাধন চক্রবর্তী টিকা নেন।

আরাধন চক্রবর্তী বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যে গর্বিত। প্রবাসী আমার বেশ কয়েকজন আত্মীয় আছেন। তারা উন্নত দেশে থাকেন। তারা শুনেছে আমাদের এখানে সাধারণ মানুষ করোনার টিকা নিচ্ছেন। তারা অবাক হয়ে গেছেন।”

টিকা কার্যক্রমের প্রথম দিনে নেত্রকোণায় সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান  খসরু, সাংসদ অসীম কুমার উকিল, জেলা প্রশাসক কাজি মো. আব্দুর রহমান, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী, সিভিল সার্জন মো. সেলিম মিয়া টিকা গ্রহণ করেছেন।

জেলা বিএমএ সাধারণ সম্পাদক, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহসান কবীর রিয়াদ বলেন, “জেলায় করোনাভাইরাসের টিকা সহজে দেওয়ার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা দ্রুত এই টিকা মানুষের মাঝে দিতে পারছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায়। দুনিয়াজুড়ে টিকা কার্যক্রমের তুলনায় আমরা অনেক দ্রুত টিকা পেয়েছি। এখনও জেলায় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি।”

বাগেরহাট

বাগেরহাটে গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় দেড় হাজার জন করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণ করেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, মানুষের ভেতরে শুরুতেই টিকা গ্রহণে এক ধরনের ভীতি ছিল; সেই ভীতি এখন কাটতে শুরু করায় দিনদিন টিকা নেওয়ার হার বাড়ছে।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, জেলায় প্রথম দিনে নারী পুরুষ মিলিয়ে ৫১৪ জন টিকা গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় দিনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫১ জনে। দিন যাচ্ছে আর সাধারণ মানুষের মধ্যে থাকা ভীতি দূর হচ্ছে।

জেলা শহরের দাশপাড়ার বাসিন্দা গৃহিণী নিভা রাণী দাস (৫৬) টিকা গ্রহণের পর বলেন, “সংক্রমণের ভয়ে আমরা আতঙ্কিত ছিলাম। সরকার জনগণকে সুরক্ষা দিতে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছে। এটি সরকারের ভালো উদ্যোগ।”

সদর উপজেলার বেলায়েত হোসেন ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক শিবলী হাওলাদার ও তার স্ত্রী সোহানা আক্তার বলেন, “চোখে দেখা দেখতে না পাওয়া এই ভাইরাস আমাদের ভীত করে রেখেছে। সরকার করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা দুজনে সদর হাসপাতালে টিকা গ্রহণ করেছি। শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি।”

সদর হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী সুপ্রিয়া রাণী দাস বলেন, আজ দুপুর পর্যন্ত ৩৮ জন পুরুষকে টিকা দিয়েছি। তাদের শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কিনা তা দেখতে কেন্দ্রে ৩০ মিনিট বসে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এখন পর্যন্ত এদের কারও শরীরে বিরুপ প্রতিক্রিয়া হয়নি।”

তবে টিকা গ্রহণের পর বাড়িতে গিয়ে শরীরে ব্যাথা বা জ্বর আসলে শুধু প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।