তৃতীয় লিঙ্গের জীবন বদলে ঘরের সঙ্গে জীবিকার সংস্থান শেরপুরে

শেরপুরে তৃতীয় লিঙ্গের জীবনেযাত্রায় পরিবর্তনে সরকারি ঘর প্রদানের পাশাপাশি এক গুচ্ছ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।

শেরপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2021, 06:33 AM
Updated : 7 Feb 2021, 06:33 AM

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের কবিরপুর মৌজাধীন আন্ধারিয়া সুতিরপাড় এলাকায় দুই একর খাসজমিতে তাদের জন্য গড়ে উঠেছে গুচ্ছগ্রাম—‘স্বপ্নের ঠিকানা।’

এতে জেলার ৪০ জন হিজড়ার নামে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে জমিসহ রান্নাঘর, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানাসহ বসবাসের ঘর বলে এক মতবিনিময় সভায় জানিয়েছেন সদরের কামারিয়া ইউনিয়ন ভুমি উন্নয়ন কর্মকর্তা হুরমুজ আলী।

শনিবার বিকালে শেরপুরে তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর আবাসন বিষয়ক এ সভায় আরও জানানো হয়, এ আবাসনে বসবাসকারীদের রোজগারের জন্য প্রায় ৪০ শতক জমির ওপর একটি পুকুরসহ ফসল আবাদের ক্ষেত। এছাড়া আত্মকর্ম প্রশিক্ষণের জন্য নির্মিত হচ্ছে একটি বহুমুখী কক্ষ।

এ গুচ্ছগ্রামের সঙ্গেই রয়েছে আট একরের একটি সরকারি খাস বিল। সেটিও এই হিজড়াদের লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

হুরমুজ আলী জানান, জেলা প্রশাসন হিজড়াদের এ গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে ঘর ও স্থাপনা নির্মাণ কাজ শেষ করেছে।

“এখন কবুলিয়তনামা তৈরি ও জমির নামজারির প্রক্রিয়া চলছে। খুব শীঘ্রই নিবন্ধিত তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের মধ্যে জমিসহ এসব ঘর হস্তান্তর করা হবে।”

নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর এবং জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার যৌথ আয়োজনে শহরের মডেল গার্লস ডিগ্রি কলেজ মিলনায়তনে এ মতিবিনিময় সভায় এ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রতিশ্রুতির কথাও উঠে আসে।

হিজড়ারা বলেন, তারা ভিক্ষাবৃত্তি করতে চান না, চাঁদাবাজি করে জীবন চালাতে চান না। ‘আমরা মানুষের মতো বাঁচতে চাই, কর্ম করে খেতে চাই।’

মৌমিতা নামের এক হিজড়া গাড়িচালানো শেখার আগ্রহ প্রকাশ করে তাদের সবার জন্য যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ ও প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টির কথা তুলে ধরেন।

এ সময় সভায় আইডিয়াল প্রিপারেটরি এন্ড হাইস্কুলের অধ্যক্ষ মাহবুবর রহমান সুজা মৌমিতার ড্রাইভিং শেখার খরচ বহনের এবং প্রশিক্ষণের পর তার প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেন।

উদীচী জেলা সংসদের সভাপতি তপন সারোয়ার হিজড়াদের নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক দল তৈরি এবং বিনাখরচে নাচ-গান শেখানোর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।

জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান নাসরিন রহমান ফাতেমা এবং সদস্য সদর উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আরা শামীমা জানান, সেলাই, বিউটিফিকেশন, রান্নাবান্না, নকশীকাঁথাসহ বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

নারী উদ্যোক্তা আইরীন পারভীন হিজড়াদের বিনামূল্যে দক্ষ সূচিশিল্পী হিসেবে গড়ে তুলতে তার প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা জানান।

অনুষ্ঠানে গুচ্ছগ্রামে ঘর বরাদ্দপ্রাপ্ত হিজড়াদের নিবন্ধন কাজের জন্য কবুলিয়ত সম্পাদনের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়।

জনউদ্যোগ শেরপুর আহ্বায়ক শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য দেন, শিক্ষাবিদ শিব শংকর কারুয়া, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কর্মকর্তা কবি হাজানুজ্জামান সরাফত, সাংবাদিক হাকিম বাবুল, আইইডি ব্যবস্থাপক মানিক পাল, জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মাসুম ইবনে শফিক প্রমুখ।