সাবমেরিন কেবলে করে চাঁদপুরের দুর্গম চরে বৈদ্যুতিক বিজলি

সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে যাওয়া চাঁদপুরের দুর্গম মধ্যচরবাসীর দিন বদলের স্বপ্ন এখন দুয়ারে।

আল ইমরান শোভন চাঁদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2021, 05:24 AM
Updated : 3 Feb 2021, 05:24 AM

এই বিদ্যুৎ সংযোগ এ চরের অর্ধ লক্ষাধিক বাসিন্দার কৃষি, শিক্ষা, শিল্প কল-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটাবে বলে প্রত্যাশা করছেন চরবাসীসহ সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিন দেখা যায়, চারদিকে নদীবেষ্টিত দুর্গম এলাকা মধ্যচর। চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার সর্ব দক্ষিণের এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের যোগাযোগ মাধ্যম শুধুমাত্র ইঞ্জিনচালিত নৌ-যান।

হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন সরদার জানান, চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার হাইমচর, নীলকমল ও গাজীপুর ইউনিয়নের একাংশ নিয়ে চারদিকে মেঘনা নদী বেষ্টিত ‘মধ্যচর’ নামে খ্যাত এলাকাটির অবস্থান। এখানে বসবাসকারী অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের অধিকাংশেরই পেশা কৃষি কাজ ও মাছ ধরা।

সালাউদ্দিন বলেন, বিদ্যুতের সুবিধার কারণে উৎপাদিত ফসল স্থানীয় চাহিদার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে এখানে আগে যে পরিমাণ ফসল উৎপাদন হতো, বিদ্যুতের কারণে এখন বেশি পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন হবে।

নীলকমল ইউনিয়নের মধ্যচর এলাকার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অন্ধকারাচ্ছন্ন দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা বিদ্যুতের দেখা পেয়ে এখন আনন্দিত। ডিজেল নির্ভর এই অঞ্চলের কৃষকরা এখন বিদ্যুতের সাহায্যে জমিতে সেচ দিয়ে একাধিক ফসল ফলাতে পারবে। আলো বঞ্চিত লোকজন এখন নিজেদের আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

স্থানীয় বাসিন্দা পারভীন শিকদার বলেন, আমরা চরবাসী কখনো বিদ্যুতের আলো পাব, তা কল্পনাও করি নাই। আজ আমাদের চরে বিদ্যুতের পিলার, বিদ্যুতের তার টানাসহ সব কাজ শেষ পর্যায়ে। আমরা খুবই আনন্দিত, যা প্রকাশ করার মতো নয়। আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হল।

মান্নান মাল নামের স্থানীয় এক কৃষক বলেন, এখানে বিদ্যুৎ আসবে, তা আমাদের জন্য স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ফলে আমরা এলাকার কৃষকরা অনেক উপকৃত হবো।

“বিশেষ করে ডিজেল চালিত ইঞ্জিনের সাহায্যে জমির সেচ কাজ করতে গিয়ে আমাদের অনেক টাকা খরচ হতো। এখন বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়ায় আমাদের জমি চাষাবাদ করতে টাকা খরচ কম হবে।”

আবদুর রহমান নামের এক স্কুলছাত্র বলেন, আগে কুপির আলোয় আমাদের পড়াশোনা করতে হতো। এখন বিদ্যুৎ আসায় অনেক উপকার হবে।

“আমরা শহরের স্কুলগুলোর মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারব।”

স্থানীয় মুদি দোকানদার আবুল কাশেম বলেন, বিদ্যুৎ আসায় আমরা দোকানে ফ্রিজ রাখতে পারব। এছাড়া বৈদ্যুতিক পাখাসহ অন্যান ইলেকট্রনিক সামগ্রী ব্যবহার করতে পারব।

বাংলাদেশ পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ড ফরিদপুর জোন এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে মেঘনা নদীর তলদেশ দিয়ে দীর্ঘ দেড় কিলোমিটার সাবমেরিন কেবল লাইন নেওয়া হয়েছে। চরাঞ্চলের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষকে আলোকিত করতে মেঘনা নদীর তলদেশে তিনটি সাবমেরিন কেবল স্থাপনের মাধ্যমে ৩২৫ কিলোমিটার এরিয়ায় পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সংযোগ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৬২ কোটি টাকা।

বেলায়েত জানান, আলোকিত এ চরাঞ্চলে কৃষি ক্ষেত্রে ঘটবে বড় ধরনের বিপ্লব। এতে কৃষকরা অনেক লাভবান হবে। ধান, গম, রবি শস্যসহ সব ধরনের ফসলের চাষাবাদ, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি ফার্মসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই এলাকার লোকজন সুবিধা পাবে।

শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. জুলফিকার রহমান, ৭ হাজার মিটারের বিদ্যুৎ সংযোগের সুবিধা সেবা পেতে যাচ্ছেন এ চরাঞ্চলের মানুষরা। গড়ে উঠবে শিল্প-কলকারখানাসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। স্থলভাগের মতোই বিদ্যুৎ সুবিধা পাবেন নদীবেষ্টিত এই অঞ্চলের লোকজন।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. জালাল উদ্দিন বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ নদীবেষ্টিত চরঞ্চলবাসীর জীবনধারা পরিবর্তনের পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।