হাতিয়ায় নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল: আরও এক মামলা, গ্রেপ্তার ৫

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওর ভুক্তভোগী পল্লী চিকিৎসক ১১ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

নোয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2021, 09:10 AM
Updated : 18 Jan 2021, 09:10 AM

রোববার রাতে তিনি মামলা দায়ের করার পর পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আসামিদের পাঁচজনকে গেপ্তার করেছে বলে হাতিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়ের জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন- জিহাদ (৩০), ফারুক (৩০), নবীর উদ্দিন ওরফে  হোন্ডা নবীর (৩২), আলমগীর হোসেন (৪০) ও আবু তাহের (২৭)। তাদের সবার বাড়ি চানন্দী ইউনিয়নে।

ওই ইউনিয়নের ৩২ বছর বয়সী এক নারী গত ৫ জানুয়ারি জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এ একটি মামলা দায়ের করেন।

সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, গত ১ জানুয়ারি রাতে ‘স্থানীয় সন্ত্রাসীরা ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে’ তার ওপর নির্যাতন চালায়।

এদিকে এরই মধ্যে একটি ভিডিও স্থানীয়ভাবে ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে একজনকে বিবস্ত্র করে মারধর করতে দেখা যায়। এ সময় এক নারীর আত্মচিৎকারও শোনা যায়।

এছাড়া একজন নারী ও এক পুরুষকে সুপারি গাছে বেঁধে রাখার একটি ছবিও ফেইসবুকে ভাইরাল হয়।

স্থানীয়ভাবে বলা হচ্ছিল, ওই নারী যে মামলা করেছেন, সেই ঘটনারই ছবি ও ভিডিও সেগুলো।

বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে রোববার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলমগীর হোসেন এবং হাতিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার গোলাম ফারুক।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তারা নিশ্চিত হন, ছবিতে যে নারীকে দেখা গেছে, তিনি ওই মামলার বাদী এবং ছবির পুরুষটি তার প্রতিবেশী একজন পল্লী চিকিৎসক, ভিডিওতে যার ওপর নির্যাতন চালাতে দেখা গেছে।

ওই দুইজনের পাশাপাশি তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথেও কথা বলেন  পুলিশ কর্মকর্তার।  সোমবার পুলিশ সুপার তার কার্যালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

আলমগীর হোসেন বলেন, “নারী নির্যাতনের যে ঘটনাটি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে, সে বিষয়ে আগেই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তিনি অভিযোগ দিয়েছিলেন এবং সেটা হাতিয়ার সার্কেল অফিসার তদন্ত করছেন।

“আমি যেটা সরেজমিনে সুপারভাইজ করতে গিয়ে পেয়েছি যে, ‘অনৈতিক কাজের’ দোষারোপ করে স্থানীয় কিছু উশৃঙ্খল যুবক একজন পুরুষকে টেনে হিঁচড়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। এরপর নারী এবং পুরুষ দুজনকে গাছের সাথে বেঁধে রাখে।”

পুলিশ সুপার বলেন, “এটি যেহেতু একটি অপরাধ, সেজন্য যাকে নির্যাতন করা হয়েছে সেই লোক (পল্লী চিকিৎসক) বাদী হয়ে পৃথক মামলা করেছেন। আমরা আসামিদের ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছি এবং মামলাটির তদন্ত চলছে। আর নারী নির্যাতনের পিটিশন মামলায় সার্কেল অফিসার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।”

গত ৫ জানুয়ারি ওই নারী আদালতে মামলা করলে বিচারক হাতিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

মামলার বাদী ওই নারী সাংবাদিকদের বলেন, বছর দশেক আগে স্থানীয় মো. ফারুকের মায়ের (জাহানারা বেগম) কাছ থেকে ১৫ গণ্ডা জমি কিনে সেখানে ঘর তুলে স্বামী-সন্তানসহ বসবাস করে আসছেন তিনি।

কিন্তু পরে ওই জমি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং ফারুকসহ অন্যরা জমি থেকে ‘উচ্ছেদ’ করার জন্য বিভিন্নভাবে ‘হুমকি’ দিয়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ করেন ওই নারী।

তিনি বলেন, গত ১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তিনি স্থানীয় বাজার থেকে বাড়ি  ফেরার সময় ফারুক ও তার সহযোগীরা তার দিকে টর্চের আলো ফেলে। তখন তিনি ভয় পেয়ে দৌঁড়ে স্থানীয় ওই পল্লী চিকিৎসককের বাড়িতে গিয়ে ঢোকেন।

“জিহাদ, ফারুক, ফারুক, এনায়েত ও ভুট্টু মাঝি তখন বাইরে থেকে ঘরে তালা দিয়ে বাইরে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে।”

এক পর্যায়ে পল্লী চিকিৎসক জানালা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করলে ফারুক ও তার সহযোগীরা তালা খুলে তাকে ঘরের ভেতর ‘বিবস্ত্র করে মারধর’ করে এবং পরে দুজনকে ‘ঘরের সামনে সুপারি গাছের সঙ্গে বেঁধে কিল-ঘুষি মেরে জখম করে’ বলে ওই নারীর ভাষ্য।  

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে দুইদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর গত ৫ জানুয়ারি তিনি জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করেন।

সেখানে তিনি লিখেছেন, মামলা করতে প্রথমে থানায় গেলেও পুলিশ তা ‘নেয়নি’।

এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে হাতিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, থানায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ ‘সত্য নয়’।

“ওই নারীর বাড়ি মেঘনা নদীর উত্তর পাড়ে। তিনি নদী পার হয়ে হাতিয়া থানায় যাননি। এমনকি ঘটনার দিন স্থানীয় তদন্ত কেন্দ্রে পুলিশের কাছে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগও করেননি। তাদেরকে মারধরের দৃশ্য যে ভিডিও করা হয়েছে, সে কথাও বলেননি।”

ওসি বলেন, গত ১ জানুয়ারি ওই ঘটনার পর খবর পেয়ে পুলিশ ওই নারী ও পল্লী চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্থানীয় তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিল।

“সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের অনৈতিক কাজের কেনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগও করেনি। তাই সেদিন তাদের দুজনকে অভিভাবকের জিম্মায় দিয়ে দেওয়া হয়।”