নাগরিক আধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ‘গ্রাম হবে শহর’ ২০১৮ সালে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দেয় আওয়ামী লীগ। সেই কর্মসূচির অনেকটাই বাগআচড়ায় সফল হয়েছে বলে এলাকাবাসীর ভাষ্য।
১৪টি গ্রাম নিয়ে গড়া বাগআচড়া অনেক ইউনিয়নবাসী, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসন জানায়, এ ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে রয়েছে পাকা সড়ক; শতভাগ গ্রাম বিদ্যুতায়িত হয়েছে; উন্নত পরিবেশে লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে; সুপেয় পানির ব্যবস্থা হয়েছে; উন্নত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা হয়েছে; সুস্থ বিনোদন ও খেলাধুলার অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।
এখন গ্রামের ভেতরে পাকা রাস্তায় চলছে যানবাহন। হয়েছে আধুনিক সিনেমা হল, বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, বঙ্গবন্ধু মঞ্চ, শেখ রাসেল মঞ্চ, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য, মিনি স্টেডিয়াম, আধুনিক শপিং মল, আধুনিক মসজিদ, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি।
বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির শার্শা উপজেলা সেক্রেটারি বাগআচড়া বাজারের বিশিষ্ট ওষুধ ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাগআচড়া বাজার আজ আর সেই বাগআচড়া নেই যেখানে গরুরগাড়িতে করে মালামাল আনা হতো, পানি কাদায় চটরপটর করত, সন্ধ্যার আগে সবাই বাড়ি চলে যেত।
“আজ শহরের সকল ছোঁয়া মেলে বাগআচড়ায়। অভুতপূর্ব কাজের সাফল্যে খুশি এলাকার মানুষ।”
সামটা ছিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মমিনুল ইসলাম বলেন, বাগআচড়া ইউনিয়ন মফঃস্বল এলাকা হলেও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির ছাড়াও স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাটবাজারসহ বিভিন্ন আধুনিক স্থাপনা হয়েছে ইউনিয়নে।
এখানকার মিনি স্টেডিয়াম, মহাসড়কের পাশে ফুটপাথ, ড্রেন, আধুনিক পশুহাট, হাটবাজার ও রাস্তায় সৌর বিদ্যুতের আলোর ব্যবস্থা, আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা, গ্রামীণ জনপদে আধপাকা ও পাকা রাস্তা মানুষের জীবনচিত্র পাল্টে দিয়েছে।
টেংরা ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোজাম গাজি বলেন, এখানে সর্বত্র আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের সাথে ইউনিয়ন ও উপজেলা সদরের সংযোগ রক্ষাকারী সকল রাস্তা পাকা হয়েছে। কিছু সংযোগ সড়ক আধাপাকা থাকলেও সেগুলো পাকা করার ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শহরের মত গ্রামের অলিগলির সকল রাস্তা পাকা। গড়ে উঠেছে আধুনিক মানের মার্কেট ও শপিংমল।
সমাজকর্মী আবু তালেব বলেন, এই সরকারের আমলে বাগআচড়া বাজার ও সাতমাইল পশুহাটের ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। এক সময় পণ্য বেচাকেনার জন্য ক্রেতা বিক্রেতাদের নানা অসুবিধায় পড়তে হতো। এখন নিরাপদে সবাই বাজার ঘাট করতে পারে।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী গোলাম শরীফ বলেন, বাগআচড়া ইউনিয়নটি একটি আর্সেনিকপ্রবণ এলাকা হওয়ায় এখানে আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইউনিয়নে প্রতিটি বাড়িতে নলকূপ থাকলেও সরকারিভাবে ৬২৪টি টিউবওয়েল আছে। এর মধ্যে উন্মুক্ত স্থানে আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানির ২৫১টি গভীর ও ১১৩টি তারা-গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে।
একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এলাকায় অচিরেই আরও উন্নয়ন হবে বলে জানান তিনি।
তবে উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে ইউনিয়নবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন বকুল।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বাগআচড়া আঞ্চলিক অফিসের প্রকৌশলী দেবব্রত কুমার পোদ্দার বলেন, এই অফিসের আওতায় গ্রাহক সংখ্যা ৩১ হাজার। বাগআচড়া ইউনিয়নের শতভাগ বাড়ি বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মুজিববর্ষে বাগআচড়া ইউনিয়নে 'জমি আছে, ঘর নাই' এমন ৩৬টি পরিবারকে বাড়ি দেওয়া হয়েছে, যেগুলো হস্তান্তরও করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে একটি বারান্দাসহ ঘর, একটি রান্না ঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা রয়েছে।
এছাড়া মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে শার্শায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে বলেও ইউএনও জানান।