নিখরচায় কোভিড-১৯ চিকিৎসা বন্ধ সাজেদা হাসপাতালে

নারায়ণগঞ্জে সাজেদা ফাউন্ডেশনের ৫০ শয্যার হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে; যারা ‘বিনা মূল্যে সুচিকিৎসা’ দিয়ে প্রশংসিত হয়েছে।

মার্জিয়া রহমান, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2021, 06:30 PM
Updated : 15 Jan 2021, 06:30 PM

জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের এই হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সসহ সবাইকে গত ৩১ ডিসেম্বর সম্মাননা সনদ ও উত্তরীয় দিয়ে সম্মান জানান নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।

গত বছর ২১ মার্চ এই হাসপাতালটিকে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়।

সাজেদা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাহেদ ফিজ্জা কবীর বলেন, তাদের দুটি হাসপাতাল রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলের হাসপাতালটি তারা ১০ বছর ধরে আর ঢাকার কেরাণীগঞ্জে একটি হাসপাতাল ১৫ বছর ধরে চালাচ্ছেন।

“এসব লাভজনক প্রকল্প না। ভর্তুকি দিয়ে চালায় সাজেদা ফাউন্ডেশন।”

তবে কোভিড-১৯ রোগীদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।

এখানে কোভিড-১৯ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়া কয়েকজন রোগী জানিয়েছেন, তারা এখানে থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। থাকা-খাওয়া-ওষুধসহ কোনো কিছুতে তাদের কোনো টাকা-পয়সা লাগেনি। করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুতে চিকিৎসা নিতে বিভিন্ন হাসপাতালে বিড়ম্বনার ঘটনা ঘটলেও সাজেদা ছিল ব্যতিক্রম। রোগীদের আন্তরিকভাবে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব জেলার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা ‘খুবই ভাল মানের ছিল’ বলে জানিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সাজেদা হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম খুবই ভাল মানের ছিল।

“আমাদের যেমন তাদের কাজ নিয়ে অসন্তষ্টি নেই, তেমনি রোগীদের কোনো অভিযোগ ছিল না।”

শুক্রবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালটির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননা সনদ ও অভিনন্দনপত্র দেয় সাজেদা কর্তৃপক্ষ।

জাহেদ ফিজ্জা কবীর বলেন, এ হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের সেবাদান সমাপ্তির বিষয়টি জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আগেই চিঠি দেন তারা।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কোভিড-১৯ সংকটকালে গত ২১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সাজেদা ফাউন্ডেশনের মধ্যে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী সাজেদা ফাউন্ডেশনের ৫০ শয্যা হাসপাতালকে কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে চালু করা হয়। এরপর গত ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের আটটি বিভাগের ৩৯টি জেলার ৯৮৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে ১৩১ জন আইসিইউতে সেবা নিয়েছেন। সাজেদা ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় এ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসা, পরীক্ষা, ওষুধ ও থাকা-খাওয়াসহ সকল প্রকার খরচ হাসপাতাল থেকে বহন করা হয়। সরকার থেকে কোনো প্রকার আর্থিক সাহায্য নেওয়া হয়নি। আগামী ৩১ ডিসেম্বর চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। তবে হাসপাতালে থাকা রোগীদের সুবিধার্থে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চালু থাকবে। এ সময়ের মধ্যে ভর্তি রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন।

সাজেদা ফাউন্ডেশনের পরিচালক তরীকুল ইসলাম বলেন, প্রথমে সরকারের সঙ্গে তাদের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চুক্তি ছিল। তাদের বাজেটও ছিল সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। দেশের পরিস্থিতির কারণে চুক্তির মেয়াদ তিন মাস বাড়ানো হয়।

“প্রায় ১০ মাসে আমাদের ১৫ কোটি টাকার ওপরে খরচ হয়েছে। সরকারের কাছ থেকে আমরা কোনো টাকা নিইনি।”

তিনি বলেন, শিমরাইলের সাজেদা হাসপাতালের চিকিৎসকসা সরঞ্জাম কেরাণীগঞ্জের সাজেদা হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।

“সেখানে ২৮ জানুয়ারি ছয়টি আইসিইউ  এবং ওয়ার্ডে ২২টি বেড নিয়ে কোভিড-১৯ ইউনিট খোলা হবে। সেখানে গরিব কোভিড-১৯ রোগীরা সাধ্যের মধ্যে সেবা পাবেন।”