টাঙ্গাইলে নারীকে বেঁধে নির্যাতন, ৩ দিনেও কোনো গ্রেপ্তার নেই

টাঙ্গাইলে চোর অপবাদ দিয়ে এক আদিবাসী নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের মামলার কোনো আসামি তিন দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিএম এ রাজ্জাক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2021, 12:42 PM
Updated : 13 Jan 2021, 12:42 PM

এই ঘটনার প্রতিবাদ ও আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় আদিবাসীরা।

বাংলাদেশ কোচ আদিবাসী ইউনিয়ন এই সমাবেশ ও মানববন্ধন আয়োজন করেছে।

ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘি ইউনিয়নের মারিরচালা গ্রামে গত শনিবার (৯ জানুয়ারি) এই ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় পরদিন ওই নারী (৩৫) পাঁচজনকে আসামি করে ঘাটাইল থানায় মামলা করেন।

আসামিরা হলেন ওই এলাকার মনিরুল ইসলাম ভূইয়া (৮০), তার দুই ছেলে মোস্তফা ভূইয়া (৪৫) ও সজিব ভূইয়া (৪০), দুই মেয়ে মোছা. খুকি (৩৭) ও সুমি আক্তার (৩২)।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওই নারীর তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। আসামির সন্তানদের সঙ্গে বাদীর ৮ বছর বয়সী ছেলে খেলা করত। ঘটানার ১৫ দিন আগে এই ছেলে আসামি মনিরুল ইসলাম ভূইয়ার বাড়ি থেকে পত্রিকা এনে ঘুড়ি বানায়। ইতিদধ্যে মনিরুলের বাড়ি থেকে স্বর্ণ ও টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান কাগজপত্র চুরি হয়।

মামলায় বলা হয়, এই চুরির অভিযোগে গত ৩ জানুয়ারি বাদীর চেলেকে ধরে নিয়ে মারধর করেন এবং তাকে দিয়ে বলান যে সে চুরি করে তার মায়ের কাছে জমা দিয়েছে। এটি না বললে তার মাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেন তারা। ভয়ে ছেলে স্বীকারোক্তি দেয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মামলার ৪ ও ৫ নম্বর আসামি বাদীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধেন এবং পাঁচ আসামি মিলে লাঠি দিয়ে মারধর করেন।

পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।

এদিকে, এই ঘটনার প্রতিবাদ ও আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার এলাকাবাসী বানববন্ধন করেছেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী কোচ ইউনিয়নের যুগ্ন আহবায়ক রতন চন্দ্র কোচ, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ, সহ-সভাপতি শ্রী চন্দন কোচ, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির জন জেত্রা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের টাঙ্গাইল জেলা আহবায়ক ফাতেমা বীথি, সার্ক মানবাধিকারের টাঙ্গাইল জেলা সভাপতি অনিক রহমান বুলবুল প্রমুখ।

বক্তারা নির্যাতনকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত এবং নির্যাতিতার পরিবারের নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানান।

সাগরদিঘি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হেকমত সিকদার বলেন, “ওই নারীকে উদ্ধার করে মহানন্দ চন্দ্র বর্মনের বাড়িতে রাখা হয়েছে নিরাপত্তার স্বার্থে। যারা এই নির্যাতনের সাথে জড়িত তাদেরকে গ্রেপ্তারে পুলিশকে আমরা সহায়তা করছি। একই সঙ্গে দোষীদের শাস্তি দাবি করছি।”

স্থানীয় মহানন্দ চন্দ্র বর্মন বলেন, নিজের দুই শিশু সন্তানের সামনে এই নারীকে নির্যাতন করেন আসামিরা। মামলার পর তিন দিন অতিবাহিত হলেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। নিরাপত্তার অভাবে মেয়েটি বাড়ি ফিরতেও পারছে না।  

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঘাটাইল সাগরদিঘি তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মো. জাকির হোসেন বলেন, “আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। তাদের ধরতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুতই ধরা পড়বে।”

মামলার ২ নম্বর আসামি মোস্তফা ভূইয়া সাংবাদিকদের ফোনে বলেন, “আমার ছোটো বোনের গহনা চুরি করেছে ওই নারীর ছেলে। সে চুরি করা গহনা তার মায়ের কাছে জমা দেয়। বারবার চাইলেও তারা দেয়নি। তাই আমার ছোট বোন সুমি ওই নারীকে গাছে বেঁধে রাখে। আমরা কিছু জানি না।”

বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাগরদিঘি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক স্বপন বর্মন এ ঘটানার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তি দাবি করেন।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, এটি অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘন। সাধারণত গরিব মানুষ, অসহায়, আদিবাসী হলে তারা খুব অসহায় থাকে। সমাজের ধনী মানুষগুলো তাদের ওপর জুলুম অত্যাচার করে নোংরা আনন্দ পায়। নারী ও শিশুর প্রতি তারা সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন।

যারা আইন হাতে তুলে নিয়েছে তাদের খুব দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দাবি করেন আদিবাসী ফোরামের এই নেতা।

ঘাটাইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ছাইফুল ইসলাম বলেন, “আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আসামীদের গ্রেপ্তার করা হবে।”