ফেনীতে ফোর-লেন মহাসড়ক নির্মাণে অব্যবস্থাপনার দায় নিচ্ছে না কেউ

ফেনী-নোয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের ফোর লেন প্রকল্পের কাজে অব্যবস্থাপনায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলেও সংশ্লিষ্ট সবাই একে অপরকে দায় চাপাচ্ছেন।

নাজমুল হক শামীম ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Jan 2021, 05:58 AM
Updated : 7 Jan 2021, 05:58 AM

সড়ক বিভাগের আওতায় ৭৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ফেনীর মহিপাল থেকে নোয়াখালীর চৌমুহনী পূর্ব বাজার পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়কের ফেনী অংশের ২০ কিলোমিটার নির্মাণে বিশৃঙ্খলতার নজির পাওয়া গেছে।

সড়কটি দুই লেন থেকে ফোর লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে বিদ্যুৎ, গ্যাস, বিটিসিএল ও বনবিভাগসহ বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং (এনডিই) বারবার অঘটন ঘটালেও তারা দোষ দিচ্ছে সরকারি দপ্তরগুলোকে। ফলে জনদুর্ভোগ চরমে পৌছিয়েছে।

দাগনভূঞা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক মিন্টু জানান, এ সড়কের নিচ দিয়ে গ্যাসের লাইন বাসাবাড়ি, হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নেওয়া হয়েছে।

“এটি জানার পরও ঠিকাদারের লোকজন মাটি খুঁড়তে গিয়ে কোনো রকমের সতর্কতা অবলম্বন করেননি। গ্যাসের লাইন উপড়ে ফেলেছে।”

গত ডিসেম্বরের শুরু এমন এক ঘটনায় স্থানীয় পেন্টাগন হাসপাতাল এলাকার প্রায় দুইশ গ্রাহক তিনদিন গ্যাস সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল জানিয়ে দিনি অভিযোগ করেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সহায়তা না করায় গ্রাহকরা স্ব-উদ্যেগে লাইন মেরামত করতে বাধ্য হন।

এদিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিই-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মনজুরুল ইসলাম বলেন, “ফোর লেন প্রকল্পের উন্নয়ন কাজে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছ থেকে আমরা ঠিক মতো সহযোগিতা পাচ্ছি না।

গ্যাসের লাইন সড়কের নিচে থাকায় লাইন চিহ্নিত করে দেওয়ার জন্য বাখরাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার সহায়তা চেয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি অভিযোগ করে তিনি বলেন, “মাটির নিচের গ্যাসের লাইন চিহ্নিত করতে না পারায় কাজ করতে গিয়ে কোথাও গ্যাসের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

“এছাড়া সড়কের পাশ থেকে বিদ্যুতের লাইন এবং মাতুভূঞা ও ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজের দিঘির সামনে থেকে ময়লার স্তুপ সরিয়ে না নেওয়ায় উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে।”

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেম লিমিটেড ফেনীর ব্যবস্থাপক মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, “ফোর লেন প্রকল্পের উন্নয়ন কাজে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানে সর্বদা প্রস্তুত থাকলেও ঠিকাদার তাদের সাথে কোনো রকমের সমন্বয় করেন না।

“ঠিকাদার তার মতো করে কাজ করতে গিয়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে বারবার গ্যাসের লাইন বিচ্ছিন্ন করে ফেলছেন। ফলে গ্যাসের গ্রাহকেরা চরম হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।”

ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দাগনভূঞা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জানান, গত ৩ জানুয়ারি বিকেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিই’র রোলার চালকের ‘খামখেয়ালিপনার কারণে’ দাগনভূঞা থানার পাশে বিদ্যুতের একটি খুঁটি ভেঙে যায়। এতে দাগনভূঞা পৌরসভার আংশিক, রামনগর ও ইয়াকুবপুর ইউনিয়নে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে ওই এলাকার ১২ হাজারের বেশি গ্রাহককে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

“ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত বিদ্যুতের খুঁটি নষ্ট করছে” যোগ করেন তিনি।

ফেনী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহমেদ জানান, ফোর লেন প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে শেষ করতে সড়ক বিভাগ ছাড়াও বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের সহযোগিতা প্রয়োজন। ফেনী সড়ক বিভাগ থেকে উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। ফোর লেন প্রকল্পের ঠিকাদারকে উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে সতর্কতার সাথে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া আছে।

এনডিই-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মনজুরুল ইসলাম জানান, ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে ফোর লেন প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।

“নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আমরা প্রকল্পের কাজ শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সময়মতো সহযোগিতা না পেলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।”