গোপালগঞ্জে ব্যবসায়ী খুনের নেপথ্যে ‘টাকা ও শ্যালকের পরকীয়া’

গোপালগঞ্জের ব্যবসায়ী মঙ্গল সরদার হত্যার পেছনে পাওনা ৩০ লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা এবং ‘পরের স্ত্রীকে নিয়ে’ তার শ্যালকের ভারতে পালানোর ঘটনা রয়েছে বলে জানিয়েছে পিবিআই।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2021, 06:50 AM
Updated : 6 Jan 2021, 07:16 AM

বুধবার পিবিআই গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ গত ১১ সেপ্টেম্বরের মঙ্গল সরদার (৬০) হত্যাকাণ্ডের তদন্তে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

মঙ্গল সরদার গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বণগ্রামের অমৃত লাল সরদারের ছেলে। তিনি মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় বাজারে সবজির ব্যবসা করতেন।

এ ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি কালাম শিকদারকে (৫২) গত পহেলা জানুয়ারি গ্রেপ্তার করে পিবিআই। কালাম গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় গ্রামের জয়নুদ্দিন শিকদারের ছেলে।

তার স্বীকারোক্তির পর ওই রাতেই মুকসুদপুর উপজেলার ভাটরা গ্রামের হোসেন শেখের ছেলে মো. লিটন শেখ ওরফে লিটু (৫২), দক্ষিণ জলিরপাড়  গ্রামের নলু  শেখের ছেলে আকবর শেখ (৪৮) এবং জলিরপাড় বাজারের ছায়েন মুন্সীর ছেলে মো. মুশিয়ার শেখকে (৫৮) গ্রেপ্তার করা হয়।

এসপি বলেন, এদের মধ্যে কালাম সিকদার এবং লিটন শেখ গত ২ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হাসিবুল হাসানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জাবানবন্দি দিয়েছেন।

সবজি ব্যবসায়ী মঙ্গল সরদারের শ্যালক কিরিটি রায় উপজেলার জলিরপাড় বাজারে রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি মিষ্টির ব্যবসা করতেন।

পুলিশ সুপার জানান, আসামিরা আদালতকে বলেছেন, কিরিটি একটি ট্রাক কিনতে ননীক্ষীর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামানের ভাই এবং জলিরপাড় বাজারের জামান আটো রাইস মিলের মালিক আল-আমিনকে ৩০ লাখ টাকা দেন। কিন্তু আল-আমিন ওই টাকা রাইস মিলের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন।

কিরিটিকে আল-আমিন ট্রাক কিনে না দিয়ে, টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করতে থাকেন। টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। ওই টাকা আল-আমিন আত্মসাৎ করতে পাওনাদার কিরিটিকে বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাতেও থাকেন।

“এরই মধ্যে কিরিটি রায় পাশ্ববর্তী সিন্ধিয়া গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী সুশান্তের স্ত্রীকে ভাগিয়ে ভারতে পাড়ি জমান। তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগে আল-আমিন এবং তার দুলাভাই মঙ্গলকে মুখোমুখি করেন। পাওনা টাকা মঙ্গলকে দেওয়ার জন্য বলে যান। আল-আমিন ওই টাকা মঙ্গলকে দিতে রাজি হন।

“এরপর শ্যালকের টাকা আদায়ের জন্য আল-আমিনকে বারবার তাগিদ দিতে থাকেন মঙ্গল। এতে আল-আমিন খেপে যান।”

পুলিশ সুপার বলেন, সুশান্তর স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিরিটিকে সহযোগিতা করেছিলেন মঙ্গল। এ কারণে মঙ্গলের ওপর রাগ ছিল সুশান্তর।

কিরিটির পাওনা টাকা আত্মসাতে আল-আমিন হাত মেলান সুশান্তের সাথে। তারা জামান রাইস মিলের অফিসে বসে মঙ্গলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বলে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে দাবি করেছেন গ্রেপ্তাররা।

তাদের ভাষ্য, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আল-আমিনের সহযোগী কালাম, সবুজ, মনোজ, আকবর, মুশিয়ার, নাজমুল, লিটন ওরফে লিটু শেখসহ অন্যরা জলিরপাড় বাসস্ট্যান্ডে বৈঠক করেন। সেখানে আল-আমিন উপস্থিত প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে দেন।

পুলিশ সুপার বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলকে পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে আল-আমিন ডেকে নিয়ে সিন্ধিয়া বাজারে সুশান্তের কাঠের দোকানে যান। সেখানে সবাই একসাথে চা পান শেষে হেঁটে জলিরপাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় তাদের সাথে সুশান্ত ছিলেন।

“সিন্ধিয়া বাজার থেকে এক কিলোমিটার পশ্চিমে উল্লাবাড়ির ফাঁকা জায়গায় পৌঁছালে সবুজ প্রথমে মঙ্গল সরদারের মুখ চেপে ধরে। অন্যরা লোহার পেরেক, লাঠি, ইঠ দিয়ে আঘাত করে মঙ্গল সরদারকে হত্যা করে। আল-আমিন সর্বশেষ ইট দিয়ে মঙ্গল সরদারের মুখে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।”

রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে সুশান্তসহ অন্যরা মঙ্গলের লাশ চটের বস্তায় ভরে দক্ষিণ জলিরপাড় গ্রামের হলুদ ও ধান ক্ষেতের মধ্যে ফেলে পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় মঙ্গলের ভাতিজা দুলাল সরদার বাদী হয়ে মুকসুদপুর থানায় ১৩ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলা করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোপালগঞ্জ পিবিআই’র এসআই আল-আমিন শেখ বলেন, মুকসুদপুর থানা পুলিশ তিন মাস তদন্ত করে হত্যা রহস্যের কিনারা করতে না পারায় পুলিশ হেড কোয়াটার্স মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।

পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার ও পিবিআই গোপালগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদের নির্দেশনায় পিবিআই গোপালগঞ্জের একটি বিশেষ টিম এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে।

এসআই আল-আমিন শেখ জানান, গ্রেপ্তার আকবর শেখ এবং মুশিয়ার শেখ বিপিআইয়ের হেফাজতে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আরও মামলা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।