প্রতিষ্ঠাকালে পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়ে শুরুর পর ২০০৬ সালে নির্বাচনে জিতে হন পৌর চেয়ারম্যান, তারপর পদের নাম বদল হয়ে মেয়র হলেও বিনা নির্বাচনে তিনি সেই পদে বহাল রয়েছেন ১৪ বছর।
উচ্চ আদালতে এক রিট মামলায় এ পৌরসভার নির্বাচন আটকে আছে। যতদিন না সেই জট খুলছে, ততদিন বাগাতিপাড়ার পৌর মেয়র পদে বহাল থাকবেন মোশাররফ।
পৌর কার্যালয়ের নথী থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালে বাগাতিপাড়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বাগাতিপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেনকে পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়।
দুই বছর পর ২০০৬ সালে পৌর নির্বাচন হয়। এতে তিনিই চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন। আর ২০০৮ সালে চেয়ারম্যান পদের নাম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে হন মেয়র।
এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি, উচ্চ আদালতে সেই রিট এখনও বিচারধীন, এখনও অমীমাংসিত।
লালপুর-বাগাতিপাড়া এলাকা নিয়ে গঠিত নাটোর-১ আসনে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টি নেতা আবু তালহা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমর্থনে নির্বাচিত এ সংসদ সদস্য বাগাতিপাড়া পৌরসভা বাতিল চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে বেসরকারি চাহিদাপত্র (ডিও লেটার) দেন।
চাহিদাপত্রটি যাচাই-বাছাই শেষে পৌরসভাটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে গেজেটও প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়।
সেই রিট পিটিশন এখনও নিষ্পত্তি না হওয়ায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আয়োজন করতে পারছে না।
বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ক্ষমতা নিরবচ্ছিন্ন করতেই ‘মেয়র মোশাররফ হোসেনের ইঙ্গিতে’ ওই ব্যবসায়ী মামলাটি করেছেন।
অজ্ঞাত কারণে সরকারের পক্ষ থেকেও মামলাটি নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে, পৌরসভায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার জন্য এ অচলাবস্থাকে দায় দিচ্ছেন অনেকে।
পৌরসভার বাসিন্দা আতাউর রহমান বলেন, “পৌরসভার সুবিধা পাচ্ছি না, কিন্তু পৌর খরচ মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। ইউনিয়ন পরিষদে ট্রেড লাইসেন্স ফি ২০০ টাকা, অথচ আমাদের পৌরসভায় তা ৫০০ টাকা।”
বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম বলেন, “মেয়র মোশাররফ হোসেন নিজের লোকদের দিয়ে মামলা করায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেখেছেন। ধরেই নিয়েছেন তিনি আজীবন মেয়র থাকবেন।”
তবে এসব অভিযোগ প্রত্যাখান করে মেয়র মোশাররফ হোসেন বলেন, বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। পৌরসভা থাকবে কি না তা নিয়ে মামলা হয়েছে।
“আমি বা আমার কোনো লোক বাদী হইনি। রাজনৈতিক আক্রোশে অনেকে মিথ্যাচার করছে।”
এ বিষয়ে নাটোরের ডিসি মো. শাহরিয়াজ বলেন, বাগাতিপাড়া পৌরসভার যাবতীয় কাগজপত্র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় তা যাচাই বাছাই করে আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করবে।