আগেই শুকালো তিস্তা, কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ

তিস্তা নদীর পানি অন্যবারের তুলনায় আগেই শুকিয়ে যাওয়ায় রবি শস্যের আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দুই তীরের কৃষকরা। 

আফতাবুজ্জামান হিরু রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2021, 03:40 AM
Updated : 5 Jan 2021, 03:59 AM

তারা বলছেন, সাধারণত ডিসেম্বর-জানুয়ারি পর্যন্ত নদীতে কিছু পানি থাকে, যা দিয়ে শীতকালীন আবাদ চলে। এবার ডিসেম্বরেই পানি শুকিয়ে তিস্তা ধু ধু করছে।

বাধ্য হয়ে শীতকালীন ফসল আবাদ করতে নদীতে শ্যালো মেশিন বসাতে হচ্ছে তাদের। কুমড়া, পেঁয়াজ, রসুন, বাদাম আর আলু চাষে লাগছে বাড়তি শ্রম ও খরচ। শ্যালো মেশিনের সেচ দেওয়ার সংগতি যাদের নেই তারা দূর-দূরান্ত থেকে পানি বয়ে এনে দিচ্ছেন ক্ষেতে।

কৃষকরা বলছেন, কয়েক দফা দফার বন্যা নদী তীরের জমিতে পলির মোটা আস্তরণ পড়ায় চাষাবাদ ব্যাহত হতে পারে। পলি যেমন জমির উর্বরতা বাড়ায়, তেমনি আবার অতিরিক্ত পলিও আবাদে বিরূপ প্রভাব ফেলে।

গংগাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের তিস্তাপাড়ের ছালাপাক গ্রামের কৃষক আমিনুর রহমান (৪৫) বলেন, “আমরা তিস্তাপাড়ের মানুষ। আমরা বছরে একবার আবাদ করি। তিস্তার চর জাগার পর সেই চরে আবাদ করতে হয়। কিন্তু এবার কয়েক দফা বন্যায় চরে পলি বেশি জমায় আবাদে খুব সমস্যা হয়েছে; এ কারণে জমিতে বেশি পানি দিতে হচ্ছে। শ্যালো মেশিনের বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে।” 
চর চল্লিশার সাদেকুল ইসলাম (৫৬) বলেন, “বাবা হামাগোর কষ্ট বার মাস। হামরা বছরে একবার আবাদ করি; কিন্তু এবার খুব ঝামেলা; কারণ তিস্তায় পড়েছে পলি; আবার সারের দামও বেশি। তারপরও হামাক চাষ তো করা লাগেবে। তাই পরিবারে সবাই মিলে চরে এসে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতে কাজ করি।”   

তিস্তাপাড়ের কাশিয়াবারী এলাকার রফিজ উদ্দিন (৬০) বলেন, “বাহে সাংবাদিকের বেটা দেখছেন তো হামার কত না কষ্ট; হামার তো শ্যালো মেশিন নাই; তাই হামরা ভারে করে বালতি দিয়ে পানি দিই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবে পানি দিতে হয় জমিতে। না হলে আবাদ হয় না হামার।”

তিনি সরকারের কাছে শ্যালো মেশিন কেনার জন্য সহায়তা চেয়েছেন।

আমন উঠলেই সেচ নির্ভর বোরো মৌসুমের ধানের আবাদ শুরু হবে এ অঞ্চলে। কিন্তু আগেভাগে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় কিছুটা সংশয় প্রকাশ করছেন নদী ও কৃষক আন্দোলনের নেতা তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানি।

তিনি বলেন, খাদ্য উৎপাদনের ধারাবাহিকতাকে যদি ঠিক রাখতে হয় তাহলে এক দিকে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি খুবই জরুরি। পাশাপাশি এসব কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়াও প্রয়োজন।   

তিস্তা সেচ প্রকল্পের পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতিপ্রকাশ ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিস্তা সেচ প্রকল্প থেকে এবার ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার কথা। এ মৌসুমে তিস্তা ব্যারেজের গেইট বন্ধ করে সেচ ক্যানেলে পানি নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

“রোটেশন পদ্ধতিতে যে পানি দেয়, তাতে আমরা ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে দিয়েছি, এবার টার্গেট ৬০ হাজার। আশা করছি এটি পূরণ করতে পারব।”      

খরা মৌসুমে সেচ ব্যবস্থাপনার এই সংকট কৃষকদের ভাবনায় ফেলেছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।