গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল হত্যা: অভিযোগপত্রে ফের নারাজি

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বহুল আলোচিত তিন সাঁওতাল হত্যা মামলার অভিযোগপত্র প্রত্যাখ্যান করে দ্বিতীয়বার নারাজি দিয়েছে বাদীপক্ষ।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Jan 2021, 05:46 PM
Updated : 4 Jan 2021, 05:46 PM

সোমবার বিকালে গোবিন্দগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম পার্থ ভদ্রের আদালতে এই নারাজি আবেদন দাখিল করা হয়।

এই আবেদনের শুনানিতে অংশ নেন তিন আইনজীবী রফিক আহম্মেদ সিরাজী, মুরাদ জামান রব্বানী ও ফয়জুল আলম।

আইনজীবী রফিক আহম্মেদ সিরাজী শুনানিতে বলেন, এই মামলার উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মূল আসামিদের অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে ১৬টি পয়েন্ট উল্লেখ করে আদালতে নারাজি দাখিল করা হয়েছে।

“আদালত বলেছেন যেহেতু চার্জশিটটি অনেক বড়ো, তিনি তা পড়ে দেখবেন।”

তিনি আরও বলেন, “পুলিশ বা অন্য প্রশাসনের ওপর আমাদের কোনো আস্থা নেই। আমরা সরাসরি জুডিসিয়াল তদন্ত চেয়েছি।”

২০২০ সালের ২ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে দ্বিতীয়বার এই অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। সেখানে মামলার মূল আসামিদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে বাদীপক্ষ অভিযোগপত্র প্রত্যাখ্যান করে এই নারাজি আবেদন করে।

এর আগে পিবিআই ২০১৯ সালে ২৩ জুলাই ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোপত্র দাখিল করে। এরপর ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র প্রত্যাখান করে নারাজি দাখিল করা হয়। নারাজি আমলে নিয়ে ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। 

নারাজি দাখিলের পর বিকালে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি আদালত চত্বরে মানববন্ধন করেছে

এদিকে, নারাজি দাখিলের পর সোমবার বিকালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে আদালত চত্বরে মানববন্ধন হয়েছে।

সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন আইনজীবী রফিক আহম্মেদ সিরাজী, সিপিবি গাইবান্ধা জেলা সহ-সাধারণ সম্পাদক মুরাদ জামান, সিপিবি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম প্রধান, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন শেখ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সুফল হেমব্রম, কোষাধ্যক্ষ গণেশ মুরমু, প্রচার সম্পাদক রাফায়েল হাজদা ও প্রিসিলা মুরমু সহ আরও অনেকে।

বক্তারা সাঁওতালদের নামে ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। সেইসঙ্গে সাঁওতাল হত্যা, বসতবাড়ি ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ সাত দফা দাবি জানান। 

সাঁওতাল ও বাঙালিদের এক হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তোলে। কিন্তু চিনিকল কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণের চুক্তি ভঙ্গ করে ওইসব জমি লিজ দিলে তাতে ধান-পাটসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হয়। ফলে গত ২০১৫ সালে সাঁওতাল ও স্থানীয় কিছু বাঙালি অধিগ্রহণের চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে তাদের পূর্বপুরুদের জমি ফেরত পেতে আন্দোলন শুরু করে।

এক পর্যায়ে গত ২০১৬ সালের ১ জুলাই ওই খামারের কিছু এলাকায় তারা চারটি বসতি স্থাপন করে। ওই বছরের ৬ নভেম্বর ওই খামারের বাকি জমিতে চাষ করা আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ৯ জন পুলিশ সদস্য তীরবিদ্ধ ও চার জন সাঁওতাল গুলিবিদ্ধ হন। তাদের মধ্যে তিন সাঁওতাল শ্যামল, মঙ্গল ও রমেশ মারা যান।

পরবর্তীতে পুলিশ এক অভিযানে ওই বসতি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে। এইসব ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষে স্বপন মুরমু বাদী হয়ে গত ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে মামলা করেন। পরে ২৬ নভেম্বর থোমাস হেমরম বাদী হয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে আরেকটি মামলা করেন।

থোমাস হেমরমের অভিযোগ পুলিশ জিডি হিসেবে গ্রহণ করলে এর বিরুদ্ধে হাই কোর্টে রিট পিটিশন করেন তিনি। এরপর থোমাস হেমরমের জিডি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।