মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বিধবা পল্লিতে অবস্থিত শহীদদের কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ করে বধ্যভূমি ও গণকবর সংরক্ষণের কাজ উদ্বোধন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই সোহাগপুর গ্রামে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার-আলবদর বাহিনী গণহত্যা চালায়।
ওইদিন গ্রামের ১৮৭ জন পুরুষকে হত্যা করা হয়। অর্ধশতাধিক নারী সেদিন ধর্ষণের শিকার হন। সেই থেকে গ্রামটির নাম হয় সোহাগপুর বিধবা পল্লি।
সেদিন হানাদার বাহিনী গণহত্যা ও নির্যাতন শেষে ঘোষণা দেয় যে লাশ দাফন করবে তাকেই হত্যা করা হবে। ফলে ভয়ে আতঙ্কে অনেকে মরদেহ ফেলে রেখে ভারত চলে যায়। আবার কেউ কেউ রাতের আঁধারে নানা জায়গায় প্রিয় স্বজনের লাশ কাঁথা, মশারী, কলাপাতা পেঁচিয়ে জানাজা ছাড়া কোনোরকমে মাটিচাপা দেয়।
স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৯ বছর পর সোহাগপুর গ্রামের বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এই উপলক্ষে ২৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বিধবা পল্লিতে অবস্থিত শহীদ শফিল উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী ও হাসান আলীর কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ করে বধ্যভূমি ও গণকবর সংরক্ষণের কাজ উদ্বোধন করেন।
এই সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ওয়ালিউল হাসান, নালিতবাড়ীর ইউ্এনও মাহফুজুল হক মাসুম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মিজানুর রহমান, মাহমুদুল হাসান, সাদিক আল সাফিন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূরল ইসলাম হিরো, সাংবাদিক এমএ হাকাম হীরা, দেবাশীষ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান সোহেল, মনিরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এই সময় সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, “সোহাগপুরের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার শহীদদের বধ্যভূমি ও কবর সংরক্ষণের কাজ শুরু করতে পেরে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে করছি। যাদের আত্মত্যাগে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি তাদের স্মৃতি রক্ষায় আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব।”
তিনি বলেন, “সোহাগপুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ৬৪টি বধ্যভূমি ও কবর আমরা সংরক্ষণের কাজ শুরু করেছি।”
এভাবে জেলায় যতগুলে বধ্যভূমি রয়েছে পর্যায়ক্রমে সবগুলো সংরক্ষণ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে এই কাজ শুরু হলো।