দুর্নীতির এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদক দিনাজপুরের সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক সাইদুর রহমান গত ৮ ডিসেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, সাধারণ সহায়তা (জিআর) প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ১২, ২১ ও ২৬ জুন সদর উপজেলার মসজিদের ওয়াজ মাহফিল, মন্দিরের নামযজ্ঞ ও মাদ্রাসার এতিমখানায় খাবারের জন্য ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২১৭ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়, যার মূল্য প্রায় ৮২ লাখ টাকা। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় বরাদ্দ থেকে এসব চাল ছাড় করা হয়। ১৮৯টি প্রকল্পের মাধ্যমে সে বছরের ৩০ জুনের মধ্যে সব চাল তুলে নেওয়া হয়।
এর মধ্যে সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়নের ৩৪টি প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩৪ টন চাল।
এই প্রকল্পগুলো থেকে চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠলে ২০১৯ সালের মার্চে এই ঘটনার অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সাইদুর জানান, এরপর দুদক দিনাজপুর সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আহসানুল কবীর পলাশ এই আটকদের বিরুদ্ধে ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে জাল কাগজপত্র তৈরি করে’ ৬ টন সরকারি প্রকল্পের চাল আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. হাছানুজ্জামান পরদিন [ওই বছরের ১৪ নভেম্বর] তাদের কারাগারে পাঠান।
ওই চিঠির বরাত দিয়ে সাইদুর রহমান আরও বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা কর্তৃক দাখিলকৃত সাক্ষ্য ও অন্যান্য রেকর্ড পর্যালোচনা করে উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন পরিতুষ্ট হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের অনুমোদন দেয়।
অনুমোদন পেয়ে সাইদুর রহমান গত ৮ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন বলে জানান।
সাইদুর রহমানের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিদের বিরুদ্ধে জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে ৬ মেট্রিক টন চাল আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়। ঢোলারহাট ইউপি চেয়ারম্যান সীমান্ত কুমার বর্মণ ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই ৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দের চাল বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে দুই লাখ ৩৪ হাজার ৬০৮ টাকা ১০ পয়সা জমা দিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদক দিনাজপুরের সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক সাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মামলার আসামিরা সম্মানিত ব্যক্তি। তারা দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন; আর আত্মসাতের টাকার পরিমাণও কম। আত্মসাতের টাকা তারা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে দিয়েছেন। এই কারণে তাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
চাল আত্মসাতের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার পরও মামলার দায় থেকে আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশের খবর পেয়ে ঢোলারহাট এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
গত বুধবার [২৩ ডিসেম্বর] এলাকাবাসী মামলাটি পুনরায় তদন্তের দাবি জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন।
ঠাকুরগাঁও আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল হালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারি প্রকল্পের চাল আত্মসাতের মামলার তদন্ত করে দুদকের উপসহকারী পরিচালক আদালতে যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন তা আদালত মানবেন বলে মনে হয় না। কারণ অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার পরও আসামির মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশের সুযোগ নেই।”
এই বিষয়ে দুদক দিনাজপুরের সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু হেনা মো. আশিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই মামলায় আত্মসাতের টাকার পরিমাণ অল্প ছিল। পরে তারা সেটা পরিশোধ করে দিয়েছেন। আসামিরা বরখাস্ত হয়েছিলেন।