হাতছানি দিয়ে চিলাহাটি থেকে ছুটল মালবাহী ট্রেন

অর্ধ শতাব্দীর বেশি বন্ধ থাকার পর আবারও চালু হয়েছে বাংলাদেশের চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ি রুটে ট্রেন চলাচল।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2020, 11:09 AM
Updated : 17 Dec 2020, 11:21 AM

বৃহস্পতিবার দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলন থেকে এ রেলপথ উদ্বোধনের পর দুপুর আড়াইটায় চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে পণ্যবাহী একটি ট্রেন ভারতের হলদিবাড়ির উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

বাংলাদেশের একটি রেল ইঞ্জিন ভারতীয় ৩২টি খালি ওয়াগন নিয়ে এ যাত্রা করে। এসব ওয়াগন হলদিবাড়ি রেলস্টেশনে রেখে পুনরায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশে ফিরে আসবে ইঞ্জিনটি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ব্রিটিশ আমল থেকেই চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দার্জিলিং থেকে খুলনা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত এ রেলপথে নিয়মিত একাধিক যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করত। তবে ১৯৬৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের পর তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সে সময় এ রেল যোগাযোগকে ঘিরে চিলাহাটিতে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠা, প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মার্চেন্ট সমিতি। সেই স্মৃতি বহন করছে চিলাহাটি মার্চেন্ট উচ্চ বিদ্যালয়।

আবার এ রেলপথ চালু হওয়ায় উৎসুক মানুষ দুপুরে ট্রেনের যাত্রা দেখতে চিলাহাটি স্টেশনের দুইপাশে ব্যাপক ভিড় করে।

তাদের মধ্যে ছিলেন ৬৫ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “বাবা-দাদার কাছে গল্প শুনেছি। এ পথ দিয়ে আগে ট্রেন যেত ভারতে। প্রায় ৫৫ বছর পর আমি তা নিজে দেখতে পেলাম।”

চিলাহাটি বাহারের এলাকার আশিকুর রহমান (৫৫) বলেন,“আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ এবং চিলাহাটি স্থলবন্দর চালু করার। সেই দাবির প্রেক্ষিতে আজ রেলপথ উদ্বোধন হল।”

স্থানীয় সাংবাদিক আশরাফুল হক কাজল (৫৮) গেজেট হয়ে থাকা চিলাহাটি স্থলবন্দর চালু করার দাবি তোলেন।

৬৫’র যুদ্ধের পর রেল যোগাযোগ বন্ধ হলেও স্বাধীনতার পর চিলাহাটিতে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস চেকপোস্ট চালু হয়। তবে ২০০২ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে স্থবির হয়ে পড়ে উত্তরের এ জনপদের ব্যবসা-বাণিজ্য।

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জেলা ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ সরকার বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল পূর্ণাঙ্গ একটি স্থলবন্দর। বর্তমান সরকার সেটি স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারই আলোকে রেলসংযোগ স্থাপনের কাজটি সম্পন্ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

এ রেল পথ চালু হওয়ায় উত্তরবঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যের যুগান্তর ঘটবে বলে আশা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

এ রেলপথ উদ্বোধনে চিলহাটিতে এসে রেলপথ মন্ত্রী নূরল ইসলাম সুজন জানান, এ পথে দিয়ে আপাতত দুই দেশের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করবে। দুই দেশের সম্মতিক্রমে আগামী ২৬ মার্চ থেকে ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

“আমাদের বিশ্বাস উভয় দেশের সব কিছু ঠিক থাকলে ২৬ মার্চেই যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করতে পারব।”

আর বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সী আশা করছেন, “আমরা এ পথ দিয়ে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে পারব। বাণিজ্য সম্প্রসারণ হলে এই অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।”

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল সংযোগ পুনরায় চালুর উদ্বোধনের জন্য চিলাহাটি রেল স্টেশনকে বর্ণিল সাজানো হয়। উদ্বোধনের সময় স্টেশন ও আশপাশের বাজার এলাকা জনারণ্যে পরিণত হয়।