দিনাজপুরে ধান-চালের দাম বেড়েছে, কৃষক খুশি

দিনাজপুরে আমনের ভরা মৌসুমে ধান-চালের দাম বাড়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

দিনাজপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2020, 12:47 PM
Updated : 16 Dec 2020, 12:47 PM

৭৫ কেজি ওজনের বস্তার সুমন স্বর্ণ, গুটি স্বর্ণ, উফসীসহ বিভিন্ন মোটা জাতের ধান দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২১শ টাকায়; এখন বিক্রি হচ্ছে ২২শ থেকে ২৩শ টাকায়।

একই ওজনের জিরা কাটারী, কাটারী, চিনিগুরাসহ চিকন ধান দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৩৪শ টাকায়; এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫শ থেকে ৩৬শ টাকায়।  

একই সঙ্গে সব ধরনের চালের দামও বস্তায় দেড়শ থেকে দুইশ টাকা বেড়েছে। তাই খুচরা বাজারে চলের দাম কেজি প্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে।

গত কয়েক বছর ধান চাষে লোকসান গোনার পর এবার চড়া দাম পেয়ে কৃষকরা খুশি।

সদরের ফার্ম হাটে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক মজিবুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবার মোটা ধানের আবাদ কম হয়েছে এবং অতিবৃষ্টিসহ বিরুপ আবহওয়ার কারণে ধানের ফলন কম হয়েছে। তবে ভালো দাম পাওয়ায় তারা লাভবান হয়েছেন।

কৃষক বেলাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুব ভোরে ছেলেকে দিয়ে ৮ বস্তা গুটি স্বর্ণ ধান বিক্রির জন্য পাঠাই। সাখে সাথেই প্রতি বস্তা ২,৩৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে গেছে। আমি ভাবতেই পারিনি এই দাম পাব।”

একটি মিলের ধান কিনতে আসা সাহিনুর বলেন, এবার জেলায় ধান উৎপাদন অনেক কম হয়েছে। এছাড়া ঢাকা, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা এখান থেকে ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। চাহিদার তুলনায় বাজারে ধানের সরবরাহ কম থাকায় তাদের বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে।

এদিকে চালের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির বিষয়ে দিনাজপুরের মিল মালিকরা বলছেন, “এবার সব ধরনের ধানের ফলন কম হয়েছে। বাজারে ধানের চাহিদার তুলনায় এবার আমদানি কম, তাই দাম বেশি। ফলে ধানের মূল্য অনুপাতে চালের দাম বাড়ছে।”

মিল মালিক আজজুল ইকবাল চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার ধানের উৎপাদন অনেক কম হয়েছে এবং বাজারে আমদানি অনেক কম। সে কারণে ভরা মৌসুমে ধানের দাম বাড়ছে। ধানের দাম যত বাড়বে চালের দাম স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মিল মালিক বলেন, ৭৫ কেজির ধানের বস্তা ২২শ টাকা হলে কেজি প্রতি ২৯ টাকার বেশি হয়। ৪০ কেজি ধান থেকে চাল আসে ২৬ কেজির মতো। সেই হিসাবে প্রতি কেজি চালের দাম দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৪৪ টাকা।

ধানের এই বাজার থাকলেও চালের দাম আরও বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, দিনাজপুর জেলায় বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি চাল উৎপাদন হয় [বোরো ও আমন]। জেলার চাহিদা ৬ লাখ মেট্রিক টন এবং অবশিষ্ট চাল দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হয়।

কৃষক ও মিল মালিকরা এবার ধান কম হওয়ার কথা বললেও জেলা কুষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবার আমনের ফলন কিছুটা কম হলেও জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। ফলে এবারও প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৭৫ কেজি ওজনের বস্তার সুমন স্বর্ণ, গুটি স্বর্ণ, উফসীসহ বিভিন্ন মোটা জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ২২শ থেকে ২৩শ টাকায়। জিরা কাটারী, কাটারী, চিনিগুরাসহ চিকন ধান বিক্রি হচ্ছে ৩৫শ থেকে ৩৬শ টাকায়।  

এদিকে, ধানের সাথে পাল্লা দিয়ে ৫০ কেজি ওজনের বস্তার সব ধরনের চালের দাম দেড়শ থেকে দুইশ টাকা বেড়েছে।

চালের বাজারে দেখা যায়, আঠাশ চালের ৫০ কেজির বস্তার দাম ছিল ২৪শ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৬শ টাকা। একইভাবে ২৬শ টাকার মিনিকেট ২৮শ টাকা, ১৯শ টাকা গুটি স্বর্ণ ২১শ টাকা, ২১শ টাকার সুমন স্বর্ণ ২৩শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারে কেজি প্রতি বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা। ৫৫ টাকা কেজির মিনিকেট এখন ৫৮ থেকে ৫৯ টাকা; ৪৮ টাকা কেজির আঠাশ চাল ৫১ থেকে ৫২ টাকা, ৪০ টাকার গুটি স্বর্ণ ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা, ৪৫ টাকার সুমন স্বর্ণ ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।