ঝিনাইদহে চাষিদের মন খারাপ

ঝিনাইদহে কয়েকদিনের ব্যবধানে শীতকালীন সবজির দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। 

বিমল সাহা ঝিনাইদহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2020, 04:03 AM
Updated : 16 Dec 2020, 04:03 AM

ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মুলা, শিম, ওলকপি, পালংশাক প্রভৃতির দামের ব্যাপক পতন হয়েছে ১০ থেকে ১২ দিনের ব্যবধানে।

এতে ক্রেতাদের মুখে হাসি দেখা গেলেও চাষিদের মন খারাপ। কেউ কেউ লোকসানের শঙ্কার কথাও বলেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহের উপ-পরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, ঝিনাইদহে সারা বছর সবজি চাষ হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে ১০ হাজার ২৩৫ হেক্টরে শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রথম দিকে সবজির উৎপাদন কম হচ্ছিল। এখন ভরা মৌসুম শুরু হয়ে গেছে।
দাম পড়ে যাওয়ায় চাষিরা অসুবিধায় পড়েছে বলে জানালেও মাস খানেক পর ফের দাম বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।   

জেলার কয়েকটি হাটবাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, এক কেজির বেশি ওজনের প্রতিটি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। কয়েকদিন আগে একই আকারের ফুলকপির দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।

তবে শীতের শুরুতে সবজির দাম চড়া ছিল। ফুলকপি প্রতি কেজির দাম ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, বেগুন বিক্রি হচ্ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা; শিমের কেজি ছিল ৬০ টাকা।
কয়েকদিন আগে ঝিনাইদহ সবজি হাটে কথা হয় সদর উপজেলার রতনপুর গ্রামের সবজি চাষি ইছাহাক আলির সঙ্গে। 

ইছাহাক আলি বলেন, তিনি ১০ মন ফুলকপি বাজারে এনেছেন। পাইকারি ৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। ক্ষেত থেকে কপি তুলতে ৫শ টাকা শ্রমিককে দিতে হয়েছে। হাটে আনতে ভ্যান ভাড়া লেগেছে আরও ৬শ টাকা।

এই দামে কপি বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠবে না বলে জানান এই চাষি।

ছয়ঘড়িয়া গ্রামের চাষি হানেফ আলি বলেন, পাঁচ মণ বেগুন হাটে এনে ৩-৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। হাটে আনতে তার ভ্যান ভাড়া লেগেছে ৪শ টাকা।

শনিবার শৈলকুপা হাটে ১০ মন ফুলকপি নিয়ে আসেন গোবিন্দপুর গ্রামের চাষি সুজন মন্ডল।

তিনি জানান, প্রতি মণ বিক্রি করেছেন ২৫০ টাকা দরে। হাটে আনতে ভ্যান ভাড়া লেগেছে ৪শ টাকা।

২৩ কাঠা জমিতে কপি চাষে তার ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান।

একই গ্রামের চাষি আবুল হোসেন বলেন, ফুলকপির চেয়ে বাঁধাকপির দাম একটু বেশি। এক/দেড় কেজি আকারের প্রতিটি ৯ টাকা দরে বিক্রি হয়। 

শ্রীপুর গ্রামের চাষি আব্দুল লতিফ বলেন, এবার তিন বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। আট মণ কপি শৈলকুপা হাটে এনে ২শ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। হাটে কপি আনতে ভ্যান ভাড়া লেগেছে ৮শ টাকা।

শৈলকুপা হাটে পাইকারি বেগুন প্রতি মন ৪শ টাকা থেকে ৫শ টাকা, শিম প্রতি কেজি ১৫ টাকা, ওলকপি প্রতি কেজি ৫ টাকা, পালংশাক প্রতি আঁটি এক টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। 

দেবতলা গ্রামের চাষি রিয়াজ আহমেদ বলেন, ৫০টি লাউ হাটে এনে প্রতিটি ৭ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। ১২ কাঠা জমিতে লাউ চাষে তার ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

তবে একই হাটে খুচরা ফুলকপি প্রতি কেজি ১০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতিটি ১৫ টাকা, শিম প্রতি কেজি ৩০ টাকা, ওলকপি প্রতি কেজি ১০ টাকা, পালং শাক প্রতি আঁটি ৩০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ১০ টাকা ও মুলা প্রতি কেজি ৫ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।

এ বাজারে টমেটো ও গাজরের দাম এখনও চড়া। খুচরা টমেটো প্রতি কেজি ৮০ টাকা এবং গাজর ৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।

শৈলকুপা হাটে ক্রেতা শফিকুল আলম স্বপন বলেন, এতদিন চড়া দামে সবজি কিনতে হয়েছে। বর্তমানে দাম কমেছে। একশ টাকার সবজি কিনলে ব্যাগ ভরে যাচ্ছে।