সাবেক সাংসদ বদি এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে বলেছেন, আদালতের নথিপত্র হাতে পেলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন।
মোহাম্মদ ইসহাক নামের ওই যুবক রোববার টেকনাফের সহকারী জজ মো. জিয়াউল হকের আদালতে দাখিল করা তার আবেদনে প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষারও আর্জি জানিয়েছেন।
বিচারক আবেদনটি আমলে নিয়ে আগামী ১৪ জানুয়ারি বিবাদীকে আদালতে হাজির হয়ে জবানবন্দি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে বাদীর আইনজীবী কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সহ সভাপতি কফিল উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন।
টেকনাফের সহকারী জজ আদালতে দায়ের করা ওই মামলার নম্বর ১৪৯। বাদী মোহাম্মদ ইসহাক (২৭) এজাহারে তার বাবার নাম লিখেছেন ‘আব্দুর রহমান বদি’, যাকে কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ঠিকানা লেখা হয়েছে টেকনাফ পৌর এলাকার কায়ুকখালী পাড়া।
ইসহাক তার এজাহারে বলেছেন, বদিদের এক সময়ের পারিবারিক মিস্ত্রী মোহাম্মদ ইসলামের সংসারে তিনি লালিত-পালিত হয়েছেন। মোহাম্মদ ইসলামের সঙ্গে বাদীর মা সুফিয়া খাতুনের ‘দ্বিতীয়’ বিয়ে হয়।
বর্তমানে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের বিসিক শিল্প এলাকা সংলগ্ন দক্ষিণ মুহুরী পাড়ায় বসবাস করার কথা আর্জিতে জানিয়েছেন ইসহাক।
বিবাদী আব্দুর রহমান বদি টেকনাফ পৌর এলাকার চৌধুরী পাড়ার এজাহার মিয়া ওরফে এজাহার কোম্পানীর ছেলে। তিনি উখিয়া-টেকনাফ আসনের ২ বারের সংসদ সদস্য ছিলেন। একই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আকতার চৌধুরী তার স্ত্রী।
মামলায় দুই নম্বর মূল-বিবাদী করা হয়েছে বদির চাচা পৌর মেয়র হাজী মোহাম্মদ ইসলামকে।
বাদী ইসহাকের আইনজীবী কফিল উদ্দিন বলেন, "পিতৃত্ব প্রমাণের জন্য প্রয়োজনে বাদী-বিবাদী উভয়ের ডিএনএ পরীক্ষা করতে বাদী আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। আদালত মামলার মূল বিবাদীকে আগামী ১৪ জানুয়ারী আদালতে উপস্থিত হয়ে জবাববন্দি দিতে সমন জারি করেছে।”
বিবাদী যদি বাদীর দাবি অস্বীকার করেন, তখনই বদি ও ইসহাকের ডিএনএ পরীক্ষার প্রশ্ন আদালতের বিষয় হিসেবে দাঁড়াবে বলেও মন্তব্য করেন এ আইনজীবী।
মামলার এজাহারে দাবি করা হয়েছে, ইসহাকের মা সুফিয়া খাতুন এ মামলার বিবাদী আব্দুর রহমান বদির ‘প্রথম স্ত্রী’।
সুফিয়ার বাবা আবুল বশরের বাড়ি ৩০ বছর আগে টেকনাফ পৌর এলাকার ইসলামাবাদ ধুমপাড়ায় ছিল। কাজের সূত্রে বশর থাকতেন সৌদি আরবে। সে সময় তার বাড়িতে কয়েকবার ডাকাতি হয়। তখন টেকনাফ সদরের ইউপি চেয়ারম্যান এজাহার কোম্পানীর কাছে সুফিয়ার পরিবার বিচার চায়।
এজাহার কোম্পানী তখন নিরাপত্তার জন্য টেকনাফ পৌর এলাকার অলিয়াবাদে তার বাড়ির কাচারী ঘরের সামনে অস্থায়ীভাবে সুফিয়াদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন। সেটা ১৯৯০ সালের প্রথম দিকের ঘটনা বলে মামলার আর্জিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সেখানে দাবি করা হয়, ওই সময় এজাহার কোম্পানীর ছেলে বদির সঙ্গে সুফিয়া খাতুনের ‘প্রেমের সম্পর্ক’ হয় এবং ১৯৯২ সালের ৫ এপ্রিল ওই বাড়ির দারোয়ান এখলাস মিয়া এবং অন্য দুই ব্যক্তির উপস্থিতিতে ‘পরিবারের অন্য সদস্যদের অজ্ঞাতসারে তাদের বিয়ে হয়’। তাদের বিয়ে পড়ান বদির বাবার মালিকাধীন টেকনাফ পৌর এলাকার আবাসিক হোটেল নিরিবিলির এবাদতখানার তখনকার ইমাম মৌলভী আব্দুস সালাম।
“বদি বিয়ের কাবিননামা রেজিস্ট্রির প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তীতে তা পূরণ করেননি। তাদের মধ্যে গোপন বিয়ের বিষয়টি বদির সৎমাতা রহিমা খাতুন এবং বড় বোন শামসুন্নাহার অবগত ছিলেন। বিয়ের পর থেকে বদি-সুফিয়া দম্পতি দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। এক পর্যায়ে সুফিয়া খাতুন সন্তান সম্ভাবা হন।"
মামলায় দাবি করা হয়েছে, সুফিয়ার মা খতিজা বেগম বিষয়টি বদির বাবা এজাহার কোম্পানীকে জানালে তিনি ওই বিয়ে মেনে নেননি। তখন ‘তার কথায় বাধ্য হয়ে’ বাড়ির মিস্ত্রী মোহাম্মদ ইসলামের সঙ্গে সুফিয়ার বিয়ে দেন খতিজা।
"১৯৯৪ সালের ৪ এপ্রিল মোহাম্মদ ইসলামের সঙ্গে সুফিয়া খাতুন‘দ্বিতীয় বার’ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এজাহার কোম্পানীসহ অন্যান্য সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ওই বিয়েও পড়ান মৌলভী আব্দুস সালাম।"
মোহাম্মদ ইসলামের সঙ্গে সুফিয়ার বিয়ের ৫ মাস পর গত ১৯৯৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ইসহাকের জন্ম হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে।
শুধুমাত্র ‘পিতৃত্বের স্বীকৃতি পেতে’ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন দাবি করে মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, "আমি শুধুমাত্র স্বীকৃতিটাই দাবি করছি। আমার পিতার (বদি) কোনো ধরনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের লোভ এবং তার সম্মানহানি করার কোনো উদ্দেশ্যে আদালতের দ্বারস্থ হইনি।"
ইসহাকের ওই দাবির বিষয়ে কথা বলতে গেলে সাবেক সাংসদ বদি বিরক্তির সঙ্গে বলেন, "এ নিয়ে সাংবাদিকদের এত মাতামাতি করার কী আছে? এতে সাংবাদিক কী অসুবিধা? দুনিয়ায় এত খবর থাকতে সাংবাদিকদের কী আর কোনো কাজ নেই? "
তিনি বলেন, কেউ মামলা করে থাকলে আগে আদালতের নথিপত্র দেখে তারপর তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন।
মামলায় বদিকে বাবা বলে দাবি করলেও মোহাম্মদ ইসহাকের জন্ম নিবন্ধন সনদে বাবার নাম লেখা হয়েছে ‘মোহাম্মদ ইসলাম’।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ইসহাক বলেন, জন্ম নিবন্ধন সনদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তিনি ২০১১ সালের ৮ জুন টেকনাফ পৌরসভায় যোগাযোগ করেন। পিতার ঘরে তিনি ‘আব্দুর রহমান বদি’ উল্লেখ করেন।
কিন্তু পৌর মেয়র হাজী মোহাম্মদ ইসলাম বদির আপন চাচা হওয়ায় ‘তার নির্দেশে’ সনদে মোহাম্মদ ইসলামের (সুফিয়ার স্বামী) নামই লেখা হয় বলে ইসহাকের দাবি।
তিনি বলেন, এ কারণেই টেকনাফের পৌর মেয়র হাজী মোহাম্মদ ইসলামকে মামলায় ২ নম্বর বিবাদী করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পৌর মেয়র হাজী মোহাম্মদ ইসলামের বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।