ওই নারীকেই ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায়ও দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, যারা নির্যাতন ও ধর্ষণচেষ্টার মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন।
দেশজুড়ে ক্ষোভ তৈরি করা এই ঘটনার পেছনে এক মালয়েশিয়া প্রবাসী মূল ভূমিকা রেখেছিলেন বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।
পিবিআই চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল মঙ্গলবার দুপুরে মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে নোয়াখালীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্রগুলো জমা দেন। এ সময় পিবিআই নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান মুন্সিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তার আগে সকালে পিবিআই জেলা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ পুলিশ সুপার ইকবাল জানান, নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ধর্ষণচেষ্টা এবং ধর্ষণের ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা দুই মামলার অভিযোগপত্রে এজাহারে নাম থাকা নয়জনের মধ্যে একজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আর এজাহারে নাম আসেনি এমন আরও ৬ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে ১০ জন গ্রেপ্তার এবং চারজন পলাতক আছেন।
তিনি জানান, বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ধর্ষণচেষ্টা মামলায় মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়েছে মালয়েশিয়া প্রবাসী স্থানীয় জামাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে।
“জামাল উদ্দিন ঘটনার পেছনে থাকায় মামলার এজাহারে তার নাম উঠে আসেনি। তবে তদন্তকালে বিভিন্ন সাক্ষীর সাক্ষ্য, গ্রেপ্তার আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, জব্দকৃত আলামত এবং অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তাকে মামলায় প্রধান হোতা হিসাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে।”
জামাল উদ্দিন ছাড়াও অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে আবদুর রব ওরফে চৌধুরী মিয়া, মিজানুর রহমান তারেক ও মোস্তাফিজুর রহমান আরিফ পলাতক রয়েছে।
এ মামলায় গ্রেপ্তার অপর দুই আসামি রহমত উল্লা ও মাঈন উদ্দিন সাহেদকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রহমত উল্লাকে মামলার এজাহারে আসামি করা হয়েছিল। আর মাঈন উদ্দিন সাহেদকে তদন্তকালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
ওই মামলার দুই আসামি দেলোয়ার হোসেন দেলু ও মোহাম্মদ আলী ওরফে আবুল কালামের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তারা বর্তমানে জেলা কারাগারে আটক রয়েছে। তাদের মধ্যে আবুল কালাম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ধর্ষণচেষ্টা মামলায় ৪৮ কার্যদিবসে তদন্ত শেষ করা হয়েছে। এ মামলার তদন্তে মোট ৩০ জনের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। আর গ্রেপ্তারদের মধ্যে ছয়জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে ঘরে ঢুকে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ধর্ষণের চেষ্টা ও ভিডিও ধারণ করে স্থানীয় একদল সন্ত্রাসী। এরপর গত ৪ অক্টোবর ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সন্ত্রাসীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো ওই নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ।
নির্যাতনের শিকার ওই নারী বাদী হয়ে এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নোগ্রাফি আইনে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলাগুলোর তদন্তভার পিবিআইকে দেওয়া হয়।