জয়পুরহাটে সূর্যের দেখা নেই, বেকায়দায় জনজীবন

শীত আসতে না আসতেই দেশের উত্তরের জেলা জয়পুরহাটে তিন দিন ধরে ঘন কুয়াশার আড়ালে পড়েছে রোদ। এতে যান চালকরাসহ খেটে খাওয়া মানুষজন বিপাকে পড়েছেন।

জয়পুরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2020, 08:16 AM
Updated : 15 Dec 2020, 08:16 AM

হাসপাতালেও শীতজনিত রোগীরা আসতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি ফসলের ক্ষেতে ছত্রাকসহ রোগ-বালাইয়ের আক্রমণের শঙ্কাও রয়েছে।

আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়া দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রংপুর বিভাগের লাগোয়া জেলা জয়পুরহাট।

এছাড়া, সারা দেশে আংশিক মেঘাচ্ছন্ন এবং তাপমাত্রা একই রকম থাকবে। উত্তরবঙ্গের দুই বিভাগের জেলাগুলোয় রাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকবে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া দপ্তর।

জয়পুরহাটে এ মাসের প্রথম সপ্তাহে সন্ধ্যার পর থেকেই বেশ বেলা পর্যন্ত কুয়াশায় আকাশ ঢাকা থাকছে। গেল তিনদিন থেকে শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের আলো দেখা যায়নি। কোথাও এক ঝলক সূর্যের দেখা মিললেও পরক্ষণেই  তা ঢেকে যাচ্ছে কুয়াশার চাদরে। কোথাও কোথাও দিনে বেলাতেই দশ হাত দূরেই দৃষ্টিসীমা আটকে যাচ্ছে।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার পাকুরতলীর বাসিন্দা যাত্রীবাহী নৈশবাস চালক শাহিনুর রহমান, পুরানাপুল রেলগেট এলাকার পশ্চিম সামদেরপাড় গ্রামের মাইক্রোবাস চালক ওয়াহেদ মিয়া, কালাই উপজেলার কাদিরপুর গ্রামের ট্রাক চালক খাজা মদ্দিনসহ মোটরযান চালকরা এ পেশায় কাজ করছেন দীর্ঘ।

তারা বলছেন, শীতের শুরুর দিকে এমন ঘন কুয়াশা তারা আগে দেখেননি।

অতি গতি, বৃষ্টি ও কুয়াশাকে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ উল্লেখ করে এই গাড়ি চালকরা আরও বলছেন, গত কয়েক দিনের ঘন কুয়াশা কারণে রাতে কুয়াশার মধ্যেও দেখার জন্য বিশেষ লাইট ‘ফগ লাইট’ জ্বালিয়েও ৮ থেকে ১০ গজ দূরেও তারা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন না।

এ অবস্থায় যানবাহন চালাতে গেলে ‘দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।’

এদিকে, জেলার কৃষকরাও কুয়াশার বিরূপ প্রভাবের শঙ্কায় রয়েছেন।

পাঁচবিবি উপজেলার আটাপুর গ্রামের কৃষক আসলাম হোসেন, আক্কেলপুর উপজেলার তিলেকপুরের আবু হাসানসহ জেলার বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, শীতকালে দীর্ঘস্থায়ী কুয়াশা হলে শাক-সবজির ক্ষেতে ছত্রাক ও পাতা পচাসহ নানা রোগ-বালাই দেখা দেয়।

এবারের শীতের শুরু থেকেই যেভাবে কুয়াশা পড়ছে, এ অবস্থা আরো ১০ থেকে ১৫ দিন থাকলে আলু, সরিষাসহ শীতকালীন শাক-সবজির ক্ষেতগুলোয় ঠাণ্ডাজনিত রোগ-বালাই হতে পারে বলছেন তারা।

তাদের শঙ্কায় সায় দিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মেফতাহুল বারি জানান, গত এক সপ্তাহ জুড়ে শীতের তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে দেখা যাচ্ছে।

“এখনো ফসলি জমিতে ঠাণ্ডাজনিত রোগ বালাই দেখা যায়নি, তবে এমন ঘন কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হলে কৃষি ক্ষেত্রে খারাপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

এদিকে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রাশেদ মোবারক জুয়েল জানান, সর্দি, কাশি ও জ্বর নিয়ে কিছু রোগী হাসপাতালে আসছেন, যাদের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হচ্ছে। ফলাফল নেগেটিভ আসলেও সর্দি, জ্বর ও কাশির চিকিৎসা দেওয়া চলছে।

তবে এমন অবস্থা চলতে থাকলে শীতজনিত রোগ-ব্যাধি ছাড়াও ডায়েরিয়া রোগ দেখা দিতে পারে বলছেন তিনি।

শীতের কারণে এরই মধ্যে রাস্তায় মানুষজনের চলাচল কমে গেছে। বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে কাউকে তেমন বের হতে দেখা যাচ্ছে না।

তবে এতে বেশি বেকায়দায় পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ।