সেখানে গড়ে উঠেছে মুদির দোকান, চায়ের দোকান, কাপড়ের দোকান, সেলুনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় অনান্য সামগ্রীর দোকান।
শ্রীমঙ্গলের বেশি সবজি চাষের দুটি এলাকা চিহ্নিত করে গত বছর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম আশিদ্রোন ইউনিয়নের ‘পাড়ের টং’ এবং মির্জাপুর ইউনিয়নের ‘ছাত্রাবট’ গ্রামে দুটি ‘সবজি কালেকশন পয়েন্ট’ উদ্বোধন করেন।
প্রতিদিন ভোরবেলা এখানে কেনাবেচা শুরু হয়। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল নিজেদের বাজারে নিয়ে আসেন; আর স্থানীয় এবং বাইরে থেকে পাইকাররা এসে সবজি ক্রয় করে ট্রাকযোগে নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন দূরদূরান্তের বাজারে।
কৃষকরা জানান, এই কালেকসন পয়েন্টের মাধ্যমে তারা নিজেদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক দাম পাচ্ছেন। উৎপাদিত সবজি দ্রুত বিক্রি হওয়ায় অনেক সময় সাশ্রয় হয়। পাশাপাশি তারা আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, উৎপাদিত সবজি শহরে এনে বিক্রি করতে কৃষকদের সময় ও অতিরিক্ত খরচ হতো। এই চিন্তা মাথায় নিয়ে বেসরকারি সংস্থা আইডিই ‘সূচনা’ প্রকল্পের মাধ্যমে পাড়ের টং ও ছাত্রাবট গ্রামে কৃষকের উৎপাদিত সবজি ও ফসল সরাসরি বিক্রি করার জন্য এই কালেকশন পয়েন্ট সৃষ্টি করে।
তিনি জানান, ওই এলাকায় অনেক নারী সবজি চাষি রয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। কালেকশন পয়েন্ট পরিচালনার জন্য একটি কমিটিও করা হয়; সেখানেও নারী কৃষককে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
এই কালেকশন পয়েন্টের সুহৃদ সংস্থা ‘লালতীর সীড’-এর সিলেট বিভাগীয় ব্যবস্থাপক তাপস চক্রবর্তী বলেন, এই পয়েন্টে কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক দাম পাওয়ার জন্য নিজেদের ভেতর থেকে পাইকার সৃষ্টি করেন এবং বিভিন্ন জায়গায় পাইকারদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে প্রতিদিন সকালে উৎপাদিত ফসল নিয়ে সেখানে বসেন।
“ভোরবেলায় কেনাবেচা শুরু হয়। স্থানীয় এবং বাইরে থেকে আসা পাইকাররা সবজি কিনে ট্রাকযোগে নিয়ে যান দেশের দূরদূরান্তের বিভিন্ন বাজারে।”
তখন তাদের পরিবহনের সমস্যা ও উৎপাদিত ফসলের সঠিক দাম পেতে অনেক বিড়ম্বনা পেতে হতো বলে জানান তিনি।
কৃষক নাজমুল হাসান বলেন, প্রায় সময়ই নানা দুর্যোগে তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতেন। তাছাড়া উপজেলা বাজারগুলোতে কৃষকদের বসার জন্য কোনো আলাদা জায়গা ছিল না। পাইকারদের ইচ্ছার উপর তাদের নির্ভর করতে হতো।
“আজ আমাদের সেই বিড়ম্বনা নেই। আমরা নিজেদের উৎপাদিত ফসল পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করে থাকি এই কালেকশন পয়েন্টে। পাইকাররা দরদাম করে সবজি নিয়ে যায়।”
এই কালেকশন পয়েন্ট সৃষ্টির শুরুতে যারা উদ্যোক্তা এবং কৃষকের পাশে থেকে কৃষি বিভাগের পাশাপাশি পরামর্শ দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আইডিই-এর ‘সূচনা’ প্রকল্পের কৃষিবিদ কানাইলাল দাস, টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট হেলাল উদ্দিন ভূইয়া ও ‘লালতীর সিড লিমিটেড’-এর ডিভিশনাল ম্যানেজার’ তাপস চক্রবর্তী।
কানাইলাল দাস বলেন, কৃষকের আত্মনির্ভরশীল হওয়া এবং তাদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক দাম পাওয়ার জন্য স্থানীয় এই কালেকশন পয়েন্ট সৃষ্টি করা হয় তাদের ‘সূচনা’ প্রকল্পের মধ্যমে। এই বাজারে কৃষক নিজেরাই এখন তাদের ভেতর থেকে শুধু সবজি নয় বীজ বিক্রেতাও সৃষ্টি করেছে। গঠন করেছে কালেকশন পয়েন্ট পরিচালনা কমিটিও। এতে অনেক উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
তাপস চক্রবর্তী বলেন, কৃষকরা ভালো বীজ ব্যবহার করে উৎপাদিত ফসল নিজেরাই নিজেদের বাজারে বিক্রি করছে। এতে একদিকে যেমন কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে, তেমনি কৃষকের স্বার্থ ও সংরক্ষণ হচ্ছে। আবার তেমনি নতুন নতুন উদ্যোক্তাও সৃষ্টি হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, এই দুটি কালেকশন পয়েন্ট উদ্বোধনের সময় তিনি চিন্তা করেছিলেন এখানে পাইকার (সবজি ক্রেতা) আসবে কিনা। কৃষক এই পয়েন্ট থেকে তাদের আশানুরুপ দামে সবজি বিক্রি করতে পারবে কিনা।
বছর ঘুরতেই এটি সফলতা পেয়েছে জেনে তিনি খুবেই আনন্দিত এবং এজন্য এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে তিনি ধন্যবাদ জানান।