কালো তরমুজে কৃষকের মুখে খুশির আলো

যশোরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে 'কালো তরমুজের' চাষ। এই অসময়ের তরমুজ চাষ করে দুই মাসে ‘বিঘায় লাখ টাকা’ আয় করছেন কেউ কেউ।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2020, 06:50 AM
Updated : 9 Dec 2020, 06:50 AM

শার্শা উপজেলায় কালো জাতের তরমুজ প্রথমবারের মতো চাষ করে সফলতা পেয়েছেন উলাশীর রেন্টু হোসেন, কাঠশিকড়া গ্রামের মোমিনুর রহমান ও সুবর্ণখালি গ্রামের আলি রেজা।

তাদের বলছেন, বারোমাসি জাতের কালো তরমুজ চাষ করে তারা সফল। কম খরচে বেশি ফলন ও বাজারে চাহিদা থাকায় অন্যরাও আগ্রহী হচ্ছেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, উপজেলায় এই প্রথম ৪০ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কালো জাতের তরমুজের চাষ হয়েছে।

দেশে বিভিন্ন প্রজাতির তরমুজের কদর ও চাহিদা রয়েছে। তরমুজ উপরে দেখতে কালো হলেও ভেতরে টকটকে লাল। খেতে সুস্বাদু এই তরমুজ। 

এক বিঘা ১২ কাঠা জমিতে পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা এসেছে রেন্টুর।

রেন্টু হোসেন বলেন, কালো তরমুজ চাষে প্রথম ধাপে খরচ হয় প্রায় লাখ টাকা। প্রথম ধাপে খরচ একটু বেশি হয়। কারণ মাচা করতে হয়। একবার মাচা করলে অন্তত তিন বার সেটা ব্যবহার করা যায়।

“তরমুজগুলো সাধারণত তিন থেকে চার কেজি ওজনের হয়। খরচ-খরচা বাদে তিনগুণ লাভের আশা করছি। আমরা মাঠ থেকে প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকি।”

এ তরমুজ বছরে তিন বার ফলন পাওয়া যায়, বিঘায় ফলে ১০০ থেকে ১২০ মণ। ফলন, দাম ও চাহিদা বেশি থাকায় বেশি লাভের আশায় নতুন এ তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় চাষিরা বললেন তিনি। 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তরুণ কুমার বালা বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে কাঠশিকড়া গ্রামের মোমিনুর রহমান এবং সুবর্ণখালি গ্রামের আলি রেজা ১৫ শতক করে জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে এ তরমুজের চাষ করেন। বারমাসি তরমুজ আবাদ করে এলাকায় নতুক চমক সৃষ্টি করেছেন তারা।

ত্রিশ বছর ধরে চাষাবাদে এ রকম লাভজনক ফসল আগে পাননি জানিয়ে সুবর্ণখালি গ্রামের আলি রেজা বলেন, " প্রথমবার লাগিয়ে নয় হাজার টাকা খরচ করেলাম। আম্পান ঝড়ে সব খ্যায় করে দিয়েলো।

“তারপরও ২৯ হাজার টাকা লাভ হয়েলো। দ্বিতীয় বার আবার লাগায়ছি, এর মধ্যি ৪৫ হাজার টাকা হয়েছে। ৫০-৫৫ টাকা বেচা-বিক্রির আশা করছি।"

সফল চাষি কাঠশিকড়া গ্রামের মোমিনুর রহমান জানান, অন্য জাতের তরমুজের মৌসুম শেষ হওয়ার পর মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাটির ঢিবি তৈরি করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়ে এবং মাচা তৈরি করে কালো জাতের তরমুজের চাষ করা যায়। মাত্র ৫৫-৬০ দিনেই প্রতিটি তরমুজ প্রায় আড়াই থেকে তিন কেজি পর্যন্ত হয়। 

"এই জাতীয় তরমুজ বিক্রি করে বিঘা প্রতি জমিতে মাত্র দুই মাসে এক লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। বেকার যুবকদের জন্য এটা একটা নতুন বার্তা। তারা এ চাষে এগিয়ে এলে তাদের হতাশার দিন শেষ হবে।"

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৌতম কুমার শীল বলেন, বর্তমানে ধান, গম, পাটসহ অন্য ফসল চাষে ফলন ভাল হলেও, কৃষকরা দাম পাচ্ছেন না। দাম নির্ধারণের বিষয়টি সরকারের ওপর নির্ভর করে। তাই কৃষি বিভাগ থেকে লাভজনক চাষের জন্য সব সময় উদ্বুদ্ধ করা হয়।

বর্তমানে শার্শার কৃষকরা এসব ফসলের পাশাপাশি উন্নত কৃষি-প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাভজনক ফসল চাষে ঝুঁকছেন। কালো তরমুজে সফল হওয়ায় এর চাষ বাড়াতে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

কালো তরমুজের চীনা জাত 'ব্ল্যাক বস' ছাড়াও ভারতের 'ব্ল্যাক বেবি' নামের  একটি জাত রয়েছে। ব্ল্যাক বেবি প্রথম চাষ হয় চুয়াডাঙ্গায়। এরপর জয়পুরহাট, মেহেরপুর ও ঢাকার ধামরাইয়ের চাষিরাও এ তরমুজ চাষ করেন। আর শার্শায় 'ব্ল্যাক বস' জাতটি চাষ করা হয়েছে বলেন তিনি।