বাছাই করা রোগীদেরই অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হচ্ছে ১০ জেলায়

করোনাভাইরাস দ্রুত শনাক্তে দশ জেলায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে এ রোগের উপসর্গ ধরা পড়া সীমিত সংখ্যক রোগীরই শুধু পরীক্ষা করানো হচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2020, 02:48 PM
Updated : 5 Dec 2020, 02:57 PM

শনিবার ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক এ কার্যক্রম উদ্বোধন করার পর জেলাগুলোয় রোগীদের নমুনার পরীক্ষা শুরু হয়।

প্রথম দিনে পরীক্ষার ফলাফলে উপসর্গ থাকা রোগীদের অনেকেরই এ রোগ ধরা পড়েনি। আর রোগ শনাক্ত হওয়ার সাথে সাথে রোগীদের চিকিৎসার আওতায় আনা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে, করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফলের জন্য কয়েক দিনের অপেক্ষার অবসান হওয়ায় রোগীরা খুশি। নমুনা নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফলাফল হাতে পাচ্ছেন তারা।

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এ পরীক্ষা কাজে লাগবে বলে আশা করছেন চিকিৎসকরাও।

এ পরীক্ষার উপর প্রতিটি জেলার চিকিৎসকসহ তিনজন করে ঢাকার আইইডিসিআর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

পরীক্ষার জন্য রোগীদের কাছ থেকে একশ টাকা ফি নেওয়া হচ্ছে। তবে সরকার পরীক্ষার ব্যয়ের বড় অংশই ভর্তুকি দিচ্ছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

যশোর, জয়পুরহাট, মেহেরপুর, গাইবান্ধা, মুন্সীগঞ্জ, পটুয়াখালী, সিলেট, মাদারীপুর, পঞ্চগড়  ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা পরিস্থিতি তুলে এনেছেন।

যশোর

যশোরে জেনারেল হাসপাতালে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়।

প্রথম দিন তিনজনের নমুনায় এ পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক অনুপম কুমার দাস।

তিনি জানান, যারা করোনাভাইরাসের উপসর্গ সন্দেহে নমুনা দেওয়ার জন্য আসেন, তাদের মধ্যে তিন জনের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়।

তবে রোগীদের পরিচয় জানানোর ক্ষেত্রে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে জানান তিনি।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য যশোর থেকে একজন করে চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান এবং আইটি স্পেশালিস্ট ঢাকা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন।

“তারা যশোরে আসার সময় এক হাজার কিট নিয়ে এসেছেন। ওই কিট দিয়ে পরীক্ষা শুরু হয়েছে।”

পর্যায়ক্রমে এগুলো আরও আসবে বলে বলেন তিনি।

এ টেস্ট সবার জন্যে নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকরা যাকে প্রেসক্রাইব করবেন, শুধুমাত্র তাদেরই পরীক্ষা করা হবে।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, ভৌগোলিক কারণে যশোরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।

তাছাড়া যশোরে দেশের অন্যতম বৃহৎ স্থলবন্দর, বিমানবন্দর এবং রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে। ফলে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত এবং চিকিৎসায় নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলে মনে করছেন তিনি।

জয়পুরহাট

প্রথম দিন জয়পুরহাটে ১১ জনের নমুনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়েছে।

শনিবার সকাল ১১টা থেকে ১টার মধ্যে জেলা আধুনিক হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে এ পরীক্ষায়

এর মধ্যে নয়জনের ফলাফল নেগেটিভ আসে। এছাড়া আগে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়া দুইজনের নমুনা সংগ্রহ করে উচ্চতর পরীক্ষার জন্য বগুড়া শজিমেক এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রাশেদ মোবারক জুয়েল জানান, প্রতিটা নমুনা পরীক্ষায় সরকারি খরচ প্রায় ছয় হাজার টাকা পড়লেও সেবা গ্রহণকারীদের কাছ থেকে ফি হিসেবে নেওয়া হচ্ছে মাত্র ১০০ টাকা।

অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করার পর করোনাভাইরাস নেগেটিভ ফলাফলে দারুণ খুশি পরীক্ষা করাতে আসা এসব রোগী।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার বুলুপাড়া গ্রামের ফারহানা আক্তার, চকগোপালপুর গ্রামের সুলতান শেখ, আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর গ্রামের নারগিস ইসলামসহ পরীক্ষা করাএত আসা রোগীরা জানান,  শীতের কারণে তারা সর্দি, জ্বর ও কাশিতে ভুগছেন। তাই আতঙ্কিত হয়ে নমুনা দিয়েছিলেন তারা।

তাৎক্ষণিক ফলাফল পেয়ে নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করছেন বলে জানান তারা।

জয়পুরহাট শহরের আরাম নগরের আব্দুস সালাম মন্ডল, চিত্রা পাড়ার শীতল কুমার মজুমদার, শান্তিনগরের প্রবীন শিক্ষক তাহের মাস্টারসহ অনেকে জানান, এমন পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ভুল তথ্য পাওয়া গেলে, তা হবে এ জেলাসহ দেশের জন্য একটি ভাল খবর।

দ্রুত শনাক্ত হওয়ায় রোগীদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত এবং চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে, এতে সংক্রমণের হার কমে যাবে বলে মনে করছেন তারা।

এ পরীক্ষার জন্য জয়পুরহাটে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, ডা. সাইফুল ইসলাম, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ফিরোজ জামানসহ এক পরিসংখ্যানবিদ।

মাদারীপুর

দেশের প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়া মাদারীপুরেও শুরু হয়েছে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা।

শনিবার রেজিস্ট্রেশন করা ১৫ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকা চার জনের অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়েছে।

স্বল্প সময়ে আসা অ্যান্টিজেন টেস্টের ফলাফলে দেখা যায় তিনজনের নেগেটিভ এবং এক জনের পজিটিভ এসেছে বলে জানান মাদারীপুর সদর হাসপাতালের করোনাভাইরাসর ফোকাল পার্সন ডা. মীর রায়হান।

নেগেটিভ আসা তিনজনসহ ১৪ জনের নমুনা ঢাকায় পাঠানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “যে সব রোগী করোনাভাইরাসের লক্ষণ বেশি দেখতে পাব, তাদেরকে অ্যান্টিজেন টেস্টের জন্য বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।”

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের রোগীর মাদারীপুরে শনাক্ত হয়। এরপর পরই কঠোর অবস্থান নেয় প্রশাসন।

জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য মাদারীপুরের স্বাস্থ্য বিভাগ ৫শ’ কিট হাতে পেয়েছে।

জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবনে নিচ তলায় প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করা হবে। নমুনা সংগ্রহের ৩০ মিনিটের মধ্যেই এ রিপোর্ট পাবেন রোগীরা বলে জানানো হয়েছে।

আইইডিসিআর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা একজন মেডিকেল অফিসার, একজন ল্যাব টেকনিশিয়ান এবং একজন পরিসংখ্যাবিদ এ পরীক্ষায় নিয়োজিত রয়েছেন।

পঞ্চগড়

শনিবার সকালে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের বাইরে অস্থায়ী ক্যাম্পে বহু প্রতিক্ষিত এ সেবা চালু করে স্বাস্থ্য বিভাগ।

প্রথম দিন করোনাভাইরাস উপসর্গ নিয়ে আসা তিনজন রোগীর নমুনা নিয়ে ৩০ মিনিটের মধ্যেই পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হয়।

এদের মধ্যে শহরের ইসলামবাগ মহল্লার একজনের পজিটিভ এবং দুইজনের নেগেটিভ ফলাফল আসে।

শহরের ইসলামবাগ মহল্লার মির্জা আব্দুল বাকী বলেন, আমি কয়েকদিন থেকেই অসুস্থতা বোধ করছিলাম। করোনাভাইরাসর কিছু উপসর্গও ছিল।

“পঞ্চগড়ে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হওয়ার খবর শুনে আমি পরীক্ষা করাতে আসি। আমার করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এর পরপরই আমি চিকিৎসকদের পরামর্শে চিকিৎসা নেওয়া শুরু করেছি।”

দ্রুত ফল পাওয়া গেলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়াও সহজ হয় বলে তিনি মনে করেন।

ডোকরোপাড়া মহল্লার আবুল কাশেম প্রধান রাজু বলেন, আমার পরিবারের কয়েকজন করোনাভাইরাসয় আক্রান্ত থাকায় আমারও দুয়েকটি উপসর্গ লক্ষ করছিলাম। তাই পরীক্ষা করাতে এসেছি। নমুনা নিয়ে অল্প সময়েই তারা পরীক্ষা করে ফলাফল দিয়েছে।

“আমার করোনাভাইরাস নেগেটিভ এসেছে। তারপরও আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য দ্বিতীয়বার নমুনা নিয়ে আরটিপিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে তারা।” 

শহরের মসজিদপাড়া মহল্লার সাইফুল ইসলাম রতন বলেন, করোনাভাইরাসর রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ায় অনেকে পরীক্ষা করাতে চাইতেন না। কিন্তু পঞ্চগড়ে এ সেবা চালু হওয়ায় এখন সহজেই আমরা হাতের নাগালে মধ্যেই করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতে পারব।

“এখন করোনাভাইরাস পরীক্ষার হার যেমন বাড়বে তেমনি করোনাভাইরাস শনাক্ত বাড়বেও। কারণ অনেকেই উপসর্গ থাকার পরও করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাচ্ছিলেন না।”

পঞ্চগড়ের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আফরোজা বেগম রীনা বলেন, যাদের উপসর্গ রয়েছে কেবল মাত্র তাদেরই নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হবে।

“যাদের ফলাফল পজিটিভ আসবে, তাদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। আর নেগেটিভ ফলাফল অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরটিপিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।”

এ জেলায় প্রতিদিন আমরা ৮ থেকে ১০ জন রোগীর করোনাভাইরাস পরীক্ষা করানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সদর হাসপাতালের বাইরে স্থাপিত অস্থায়ী ক্যাম্পে নমুনা নেওয়া হবে। হাসপাতালের ল্যাবে পরীক্ষা করে ৩০ মিনিটের মধ্যেই ফলাফল দেওয়া হবে। শুক্রবার বাদে সপ্তাহে ছয়দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হবে বলেন তিনি।

এ জেলায় পরীক্ষার জন্য ৫শ’টি কিট সরবরাহ করা হয়েছে।

পটুয়াখালী

শনিবার সকাল থেকে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাস শনাক্তের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আবদুল মতিন জানান, অ্যান্টিজেন টেস্ট করানোর জন্য একটি টিম গঠন করা হয়েছে।

অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় যেসব রোগীর পজিটিভ আসবে, সে সব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। আর যাদের নেগেটিভ ফল আসবে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলেন তিনি।

তিনি জানান, একটি স্ট্রিপের মাধ্যমে রোগীর করোনাভাইরাস পরীক্ষা দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা হবে। ইতিমধ্যেই উপস্থিত তিনজনের পরীক্ষা করা হয়েছে।

প্রথম দিন রোগীর অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য তিনজন নমুনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি আরও পাঁচজনের স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানালেন দায়িত্বরত প্যাথলোজিস্ট।

সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হবে।

প্রতি দিন ৩০০টি করোনাভাইরাস শনাক্তের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা সম্পন্ন করা যাবে। মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে করোনাভাইরাসর ফলাফল হাতে পাবে উপকূলবাসী বলেন তিনি।

সিলেট

সিলেটে  প্রথম দিনে ১০ জনের র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট ল্যাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে।

শনিবার সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে এ টেস্ট ল্যাবে এসব পরীক্ষা করা হয় বলে জানিয়েছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়।

তিনি জানান,  প্রথম দিনের পরীক্ষায় ১০ জনের মধ্যে পাঁচ জনের ফলাফল পজিটিভ এবং আর পাঁচ জনের নেগেটিভ এসেছে।

ডা. হিমাংশু জানান, প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে যেসব রোগী গত ৫ থেকে ৬ দিন ধরে সর্দি, কাশি ও জ্বরে ভুগছেন তাদের এ পরীক্ষা করা হচ্ছে। 

প্রাথমিক অবস্থায় ৫০০টি কিট সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিদিন ১৫টি করে টেস্ট করা সম্ভব হবে। তবে পরে কিট এবং টেস্টের সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি। 

সেখানে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে আসা এক রোগী বলেন, নমুনা সংগ্রহ করে দুই ঘণ্টার মধ্যে ফল পেয়েছি। এর ফলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ও ফল পেতে দীর্ঘসূত্রিতা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

মুন্সীগঞ্জ

মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে শনিবার সকাল ১০টা থেকে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ বলছেন, করোনাভাইরাস দ্রুত শনাক্ত হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাধারণ মানুষের সংস্পর্শ থেকে আলাদা রাখা যাবে। এতে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা কমে আসবে। তবে এ পরীক্ষা সীমিত আকারে হবে।

জেনারেল হাসপাতালে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ পরীক্ষা হচ্ছে না। উপজেলা পর্যায়ের নমুনা আগের মতোই ঢাকায় পাঠানো হবে।

সিভিল সার্জন জানান, জেলা সদরের হাসপাতালে সীমিত আকারে পরীক্ষার জন্য ৫০০ কিট পাওয়া গেছে।

যাদের বেশি উপসর্গ তাদের সীমিত আকারে এ পরীক্ষা করা হবে বলেন তিনি।

সিভিল সার্জন বলেন, নভেম্বর থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর থেকে পাঠানো কিট দিয়ে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হতো।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অ্যান্টিজেনের মাধ্যমে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ক্ষেত্রে সাত দিন ধরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ জ্বর, সর্দি, কাশি থাকা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে।

মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের প্যাথোলজি বিভাগের টেকনোলজিস্ট শহিদুল ইসলাম বলেন, শনিবার থেকে আমরা র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে করোনাভাইরাসর পরীক্ষা শুরু করেছি। আমরা আশাবাদী এভাবে করোনাভাইরাস পরিক্ষায় আমরা সাড়া পাব। কারণ একজন ব্যক্তি যখন জানবে সোয়াব দেওয়ার অল্প সময় পরই রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে পারবে তখন তার আগ্রহ বাড়বে।

তিনদিন ধরে জ্বর ও সর্দিতে ভোগা মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আশা শফিক বলেন, আমি এ হাসপাতালের ডা. শাখাওয়াত হোসেনের কাছে যাই। তিনি আমাকে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতে বলেন।

“আমি করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে এসে দেখি আজকে থেকে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেনের মাধ্যমে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এতে আমরা খুবই অনন্দিত। আমরা খুশি যে রিপোর্টটা দ্রুত পেয়ে যাব।”

করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে আসা অপর রোগী হনুফা বলেন, আমি আজকে পরীক্ষা করিয়েছি। রিপোর্ট পেয়ে যাব এটা আমাদের জন্য খুব ভালো খবর।

এতে এক দিকে যেমন রোগীর দ্রুত চিকিৎসার সুযোগ হবে অন্যদিকে করোনাভাইরাসর বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে মনে করেন তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাস শনাক্তে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার প্রথম দিন ছয় জনের নমুনার পরীক্ষা হয়েছে।

শনিবার দুপুরে হাসপাতালের করোনাভাইরাস ফ্লু কর্নারে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু করেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শওকত হোসেন।

ডা. শওকত হোসেন বলেন, “ছয় জনের মধ্যে দুইজন পজিটিভ আর চারজন নেগেটিভ এসেছে। পজিটিভদের আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে আর বাকি চারজনের নমুন ঢাকার পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে।”

নমুনা দিতে আসা ফরহাদ হোসেন জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পিসিআর ল্যাব না থাকায় এত দিন করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের খুব সমস্যা হতো। ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতালে নমুনা দেওয়ার অন্তত এক সপ্তাহ পর জানা যেত নেগেটিভ না পজিটিভ।এতে সংক্রমণের আশঙ্কা আরও বেড়ে যেত।

গাইবান্ধা

গাইবান্ধায় গাইবান্ধা সদর জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখম আসাদুজ্জামান জানান, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হবে।

যাদের করোনাভাইরাসের উপসর্গ রয়েছে তারা ১০০ টাকা ফি দিয়ে এ পরীক্ষা করাতে পারবেন।

এছাড়া অন্যদের উপসর্গ নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে বলেন তিনি।

তিনি আরও জানান, শনিবার গাইবান্ধায় ১২ জনের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে এক জনের করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।

আইইডিসিআর থেকে গাইবান্ধায় ৫০০ কিট দেওয়া হয়েছে।

মেহেরপুর

মেহেরপুর জেলার জেনারেল হাসপাতালের সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, এ হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করানোর জন্য প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চারজন রোগী এসে থাকেন।

“তবে শনিবার হওয়ায় আজ কোনো রোগী আসেনি।“

রোববার থেকে রোগীরা এ পরীক্ষা করাতে আসবেন বললেন তিনি।