এছাড়া প্রজনন কেন্দ্রে দর্শণার্থী সমাগমও প্রজননের অন্তরায় বলে বনবিভাগের ভাষ্য।
এবার বনবিভাগ এখানে প্রজনন সক্ষম নতুন কুমির আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।
গত তিন বছর ধরে এখানে থাকা দুটি নারী কুমিরের ডিম থেকে এবছরই মাত্র চারটি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন এলাকায় অবস্থিত এই বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের বিলুপ্ত প্রায় লবণ পানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্য ২০০২ সালে করমজলে প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র এই বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র। ওই বছরই লবণ পানির নারী ও পুরুষ দুটি কুমির এখানে ছাড়া হয়। এদের মধ্যে পুরুষ কুমিরটির নাম রাখা হয় রোমিও এবং নারীর নাম জুলিয়েট। এরপর ২০১০ সালে আরেকটি নারী কুমির আনা হয়; তার নাম পিলপিল।
বর্তমানে এই করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে বিভিন্ন বয়সের ১৯৬টি কুমির ছানা রয়েছে। শুরুর পর থেকে এই কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামের সাফারি পার্কসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৯৭টি লবণ পানির কুমির সরবরাহ করা হয়েছে।
“বয়সের কারণে তাদের ছাড়া ডিমে ফার্টিলিটি কম, যার কারণে নতুন বাচ্চা ফুটছে না।”
তিনি বলেন, সর্বশেষ চলতি মৌসুমে পিলপিল ৪৪টি এবং জুলিয়েট ৫২টি ডিম দেয়। এই দুটি কুমিরের ডিম সংগ্রহ করে ইনকিউবেটরে রাখা হয়। এর মধ্যে পিলপিলের ডিম থেকে তিন বছর পর এবার মাত্র চারটি বাচ্চা ফুটেছে।
কুমির কোলাহলমুক্ত পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা এই প্রজনন কেন্দ্রের কুমির দিয়ে দুই ধরনের কাজ করি। একদিকে মানুষের বিনোদনের জন্য কুমির ডিসপ্লে করছি, অন্যদিকে এদের দিয়েই প্রজনন কাজ করছি; যার কারণে এদের ডিমে ‘ইনফার্টিলিটি’ থেকে যাচ্ছে। যাকে দিয়ে প্রজনন করাবেন তাকে শব্দ কোলাহল থেকে দূরে রাখতে হবে। আমরা কিন্তু এখানে তা করতে পারছি না।”
তিনি বলেন, কুমিরের খাদ্য সংকট রয়েছে। এখানে ছোটো-বড়ো মিলিয়ে প্রায় ২০০টি কুমির রয়েছে। প্রতিদিন কুমিরের জন্য মাত্র তিন কেজি মাংস বরাদ্দ রয়েছে। এই বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
“নিয়ম মেনে খাবার না দিলে বড়রা বেশি খাবার খেয়ে ‘ফেটি’ হয়ে যাবে।”
বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. লুৎফর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুরুষ কুমির ‘ফেটি’ হয়ে গেলে স্ত্রী কুমিরের সঙ্গে ‘মেইট’ করতে পারে না। তার প্রজনন ক্ষমতা কমে যাবে। ওই কুমিরকে দিয়ে ডিমের ‘ফার্টিলাজেশন’ হবে না। ফলে ওই ডিমে নতুন বাচ্চা ফুটবে না, যার কারণে কুমিরের বংশ বিস্তার কমে যাবে।
“পুরুষ কুমিরের স্ত্রী কুমিরের সঙ্গে ‘মেইট’ করতে পারলে, প্রজনন ক্ষমতা বেশি থাবলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী কুমিরের ছাড়া ডিমে বাচ্চা ফুটবে।”
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকারিভাবে করমজলই একমাত্র কুমির প্রজনন কেন্দ্র। ২০০২ সালে দুটি স্ত্রী ও একটি পুরুষ কুমির নিয়ে এই কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। বিভিন্ন সময়ে এই কেন্দ্রের কুমির থেকে ফোটানো শতাধিক বাচ্চা সুন্দরবনের নদী-খালে অবমুক্ত করা হয়েছে। এখানে এখন প্রায় ২০০টি বিভিন্ন বয়সের কুমির রয়েছে।
“গত তিন বছর ধরে এখানে থাকা কুমিরের ডিম থেকে নতুন কোনো বাচ্চা জন্ম নিচ্ছে না। বয়স বেশি হওয়ায় তাদের প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়ায় তাদের ছাড়া ডিমে বাচ্চা হচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছে।”
এই কারণে নতুন কম বয়সী প্রজনন সক্ষম কুমির ছাড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “পুকুরে নতুন সাতটি স্ত্রী ও তিনটি পুরুষ কুমির ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছি।”
নতুন কুমির ছাড়ার পর আমাদের লবণ পানির কুমিরের বাচ্চার যে সংকট তা কেটে যাবে বলে মনে করছেন এই কর্মকর্তা।