কোভিড-১৯: গদখালীর ফুলের রাজ্যে শঙ্কার ছায়া

ইংরেজি নববর্ষ, ভ্যালেন্টাইনস ডে, পহেলা ফাল্গুন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিশেষ উৎসবের দিনগুলোকে কেন্দ্র করে যশোরের গদখালীর ফুলের বাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

শিকদার খালিদযশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2020, 05:30 AM
Updated : 3 Dec 2020, 07:28 AM

প্রায় পরপর আসা এসব দিবস উপলক্ষে বছরের অক্টোবর থেকে এই এলাকার ফুলচাষিরা ক্ষেতে নানা জাতের ফুল লাগানো ও পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

তবে করোনাভাইরাসের কারণে এবছর এই চিত্র পাল্টে গেছে। ফুলের রাজ্যে সেই ব্যস্ততা নেই বললেই চলে।

করোনাভাইরাস মহামাররীর মধ্যে গত ছয় মাস ধরে ফুলের বাজারে ধস নামার পর থেকে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সে কারণে সামনে ইংরেজি নববর্ষে ফুলের বাজার কেমন হবে সেই চিন্তায় চাষিদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। অক্টোবরের পর নভেম্বরও পার হয়েছে। গদখালীর চাষিরা নতুন বছরের জন্য ফুল উৎপাদনে মনোযোগী হতে পারছেন না।

স্থানীয়ভাবে জানা যায়, আশির দশক থেকে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করে দেশ-বিদেশে সাড়া জাগিয়েছেন যশোরের ফুলচাষিরা। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর এসব চাষিরা গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্ল্যাডিউলাস, রজনীগন্ধা, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল চাষ করে দেশে গড়ে তোলেন ফুলের বিশাল বাজার।

এই জেলার উৎপাদিত ফুল দেশের মোট চাহিদার দুই তৃতীয়াংশ পূরণ করে আসছে। তবে এবছরের মার্চ থেকে বৈশ্বিক করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ছাড়াও সুপার সাইক্লোন আম্পানের কারণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েন এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা। বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত মৌসুমে তারা ফুল চাষ করে পুরোপুরিই লোকসানের মুখে পড়েন।

ফুলচাষিরা জানান, এর আগে তারা হরতাল-অবরোধসহ নানা কারণে ফুলের উৎপাদনে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তবে এবছর যে পরিস্থিতি তা আগে কখনও দেখেননি।

গদখালীর পানিসারার ফুলচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের এখন করোনা সংক্রমণের শঙ্কা পিছু ছাড়ছে না। অনেক কৃষক তাদের গোলাপের ক্ষেত পরিচর্যা করছেন। জমিতে নতুন নতুন ফুল গাছ লাগাচ্ছেন, সার-কীটনাশক, সেচ দিচ্ছেন ঠিকই; তবে তাদের মাঝে বিরাজ করছে করোনা আতঙ্ক।

“সরকারের পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ খুবই ভয়াবহ হবে। এটি যদি সত্য হয় তাহলে সামনে ইংরেজি নববর্ষে আমরা আদৌ প্রত্যাশা অনুযায়ী ফুল বিক্রি করতে পারব কিনা তা নিয়ে বড় চিন্তা রয়েছে।”

ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, অন্যান্য বছরে এই নভেম্বর মাসে ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে ওঠে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকার ব্যবসায়ীরা নববর্ষের জন্য ফুলের আগাম বুকিং দিতেন।

“আমরাও ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী সাধ্যমত ফুলের যোগান দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে সে পরিস্থিতি ম্লান হয়ে গেছে। এখন ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ করলেও সামনে কী পরিস্থিতি হবে তা নিয়ে দোটানায় ভুগছেন। আমরাও ফুলের ক্ষেতের পরিচর্যা করলেও সামনের বাজার কী হবে তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।”    

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, আম্পান ও করোনার কারণে কৃষি সেক্টরের মধ্যে ফুলচাষিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষিকে ঘুরে দাঁড়াতে সরকার প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষককে নানাভাবে সহায়তা করলেও ফুল চাষিদের সে সুযোগের আওতায় আনা হয়নি, যে কারণে ফুলচাষিরা কার্যত নিঃস্ব হয়ে গেছেন। 

এই অবস্থায় ফুলচাষিদের জন্য কৃষি প্রণোদনার বাইরে বিশেষ ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা করলে সম্ভাবনাময় এই চাষকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব; নইলে সামনে নববর্ষেও যদি এই অবস্থা বিরাজ থাকে তাহলে সঙ্কট আরও চরম আকার ধারণ করবে বলে তিনি মনে করছেন।

আব্দুর রহিম জানান, যশোর জেলায় প্রায় ছয় হাজার কৃষক দেড় হাজার হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করেন। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবছর চাষির সংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।