যাদের নিত্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটা অল্প টাকায় সারতে হয় তাদের জন্য এই বাজার সবচেয়ে উপযোগী।
চাঁদপুর পৌর এলাকার পুরানাবাজারের নতুন রাস্তায় প্রতিদিন বসছে এই বাজার। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সাধারণ মানুষের কাছে ‘বউ বাজার’ নামে পরিচিত হয়েছে বাজারটি।
সরজমিনে দেখা যায়, পুরানবাজার নতুন রাস্তা সংলগ্ন বউ বাজারে দুই শতাধিক ভ্রাম্যমাণ নারী ও পুরুষ ব্যবসায়ী রাস্তার দুই পাশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয় করছেন।
স্থানীয় মোম ফ্যাক্টরি ও রিফিউজি কলোনির বিধবা ও অসহায় নারীসহ নিম্ন আয়ের মানুষ এখানে তরি-তরকারি, মাছ, মাংসসহ নানা পণ্য বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে সেখানে ভিড় করছেন নারী-পুরুষ।
চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক তমাল কুমার ঘোষ বলেন, স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা নারী এবং দরিদ্র খেটে খাওয়া নারী স্বামীর সংসারে হাল ধরতে এখানে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র বিক্রি করেন বলে এই বাজারটি ‘বউ বাজার’ নামে পরিচিত।
“বেশির ভাগ ব্যবসায়ীরা হলেন নারী, স্বামীহারা, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা। এখানে সাধ্য অনুযায়ী ক্রেতারা যেকোনো ধরনের পণ্যসামগ্রী অল্প পরিমাণে ক্রয় করে থাকেন, যা অন্য কোনো বাজারে বিক্রি করা হয় না।”
বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা জানান, বাজারটি প্রতিদিন সকাল ৮টায় শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে। এখানে দুই শতাধিক ভ্রাম্যমাণ দোকানি নিত্যপ্রয়োজনীয় পসরা সাজিয়ে বসেন প্রতিনিয়ত। এই বাজারে ৫ টাকার তরকারি, ২০ থেকে ৫০ টাকার মাছ, ৫০ টাকার মাংস, ৫ টাকার মসলাসহ নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য অল্প পরিমাণে ক্রয় করা যায়।
সবজি বিক্রেতা স্বামীহারা নয়ন বেগম ও শাহনাজ বেগম জানান, বাজারে ৪০ টাকা করে কুমড়া বিক্রয় করা হয়; এখানে ক্রেতার সাধ্য অনুযায়ী ১০ টাকার কুমড়াও বিক্রয় করতে হয়।
শাহনাজ বেগম বলেন, “কম দামে আমরা তরকারি ক্রয় করে এখানে কম দামেই বিক্রয় করি। কারো কাছে হাত না পেতে নিজেরা নিজেদের সংসার পরিচালনা করি।”
‘বউ বাজার’ এলাকার বাসিন্দা নার্গিস বেগম বলেন, “স্বামী লেবারের কাজ করতে গিয়ে আহত হয়ে এখন শয্যাশায়ী। আড়ত থেকে কম মূল্যে তরকারি এনে এখানে বিক্রয় করি। বিক্রয়ের টাকা থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাই।”
রানু নামের স্থানীয় আরেক নারী বলেন, “বাজারটি আমাদের গরিবদের জন্য খুব প্রিয়। এখানে কম দামে আমরা সবকিছু কেনা-বেচা করি।”
পেঁয়াজ, আদা, রসুন আলু বিক্রেতা হালেমা বেগম ও রেহানা বলেন, একজনের আয় দিয়ে সংসার চলে না। তাই পাশাপাশি এগুলো বিক্রয় করেন। এখানে ৫, ১০, ২০ টাকার পণ্যের খরিদদারই বেশি।
কাপড় ব্যবসায়ী বৃদ্ধ আরশাদ বেপারী বলেন, “বাসা বাড়ি থেকে জামাকাপড় সংগ্রহ করে ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রয় করি।”
মাংস ব্যবসায়ী আব্দুল শুক্কুর বলেন, “আমি প্রতিদিন ৫২০ টাকা দরে বাজার থেকে গরুর মাংস ক্রয় করে এনে ৫৫০ টাকা করে বিক্রয় করি। ২শ গ্রাম থেকে আড়াইশ গ্রাম মাংস নেওয়া ক্রেতা বেশি। আবার কখনও ৫০ থেকে ১শ টাকার গোশতও বিক্রয় করতে হয়।”
মাছ ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন ও খলিল শিকদার বলেন, গরীব, অসহায়, দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষরা এখানে বেশি। চাহিদা অনুযায়ী ৩০ থেকে ৫০ টাকার মাছও বিক্রয় করতে হয়। কেজি পরিমাণ মাছ ক্রয় করার ক্রেতা এখানে কম।
বাজারে ক্রয় করতে আসা মাসুদা বেগম ও তাসলিমা বেগম বলেন, এই বাজার থেকে কম মূল্যে সাধ্য অনুযায়ী যেকোনো মাছ, তরি-তরকারি, মাংস ক্রয় করতে পারেন, যা বড় বাজারে গেলে পারা যায় না। বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা অল্প পরিমাণে জিনিসপত্র কিনতে গেলে খারাপ আচরণ করে।
মুদি দোকানদার পারভেজ লস্কর বলেন, ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী এখানে ১০ টাকার ডাল, ৫ থেকে ১০ টাকার মশলা ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয় করতে হয়। এই এলাকায় যারা বসবাস করে তাদের বেশিরভাগ দিনমজুর ও গরীব, তাদের চাহিদা অনুযায়ী জিনিসপত্র বিক্রি করতে হয়।