একইভাবে এই এলাকায় সামাজিক দূরত্ব না মেনে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোরও খবর মিলেছে।
অ্যাসাইনমেন্ট কিংবা প্রাইভেট পড়ানো কোনো ক্ষেত্রেই ওই শিক্ষার্থীদের মুখে মাস্ক ছিল না; সামাজিক দূরত্বও মানা হয়নি।
জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে অ্যাসাইনমেন্ট করানো হচ্ছে বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা অস্বীকার করেছেন।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সরকার দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। সব ধরনের প্রাইভেট কোচিংও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ২৮ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ভাওয়াল মির্জাপুর বাজার সংলগ্ন এলাকায় ‘সৃজনশীল স্কুল অ্যান্ড কলেজে’ গিয়ে দুইটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বেঞ্চে বসিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট লেখাতে দেখা যায়।
ওই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া সুলতানা বই খুলে অ্যাসাইনমেন্ট লিখছিল। তার পাশের বেঞ্চে বসা ছিল তৃতীয় শ্রেণির দোলা।
দোলা সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “স্যারেরা আমাদের একদিন পরপর স্কুলে ডেকে নিয়ে ক্লাসরুমে বসিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট করান।”
একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ইমরান হোসেনও একই কথা জানায়।
স্কুলে বসিয়ে শিক্ষার্থীদের কেন অ্যাসাইনমেন্ট লেখানো হয় জানতে চাইলে সৃজনশীল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক সাদেকুল ইসলাম সেলিম বলেন, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়েই তারা ওই কাজ করছেন।
তবে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা বলেন, যার যার বাসা থেকে অ্যাসাইনমেন্ট লেখার কথা বলা হয়েছে। পরে তা শিক্ষার্থী বা তাদের কোনো অভিভাবক স্কুলে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জমা দেবেন।
“শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে বসিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট লেখানোর অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”
যারা এ কাজ করছেন এবং করোনাভাইরাস মহামারী উপেক্ষা করে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাজীপুর সদরের ভাওয়াল মির্জাপুর পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিশু শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতে দেখা গেছে।
ভাওয়াল মির্জাপুর পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী আফসানা বলেন, তারা কয়েকজন মিলে তাদের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রঞ্জন চন্দ্র দাসের কাছে প্রাইভেট পড়েন।
শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, রঞ্জন চন্দ্র দাস ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজ গেইট এলাকায় এক বাড়ির কক্ষ ভাড়া নিয়ে প্রাইভেট পড়াচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম ব্যাচ পড়ানোর পর অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আফসানাও বেরিয়ে আসে। সে সময় পরের শিফটে পড়ার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শিক্ষার্থীরা ওই কক্ষের দিকে যাচ্ছিল।
পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সাংবাদিকের পরিচয় পেলে শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে কক্ষ বন্ধ করে চলে যান রঞ্জন চন্দ্র দাস।
তবে এর আগে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ‘খেয়ে বেঁচে থাকার জন্যই’ প্রাইভেট পড়ান তিনি।
ভাওয়াল মির্জাপুর পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বলেন, শুধু রঞ্জন চন্দ্র দাসই নন। অন্য কয়েকজন স্যারও পালা করে প্রাইভেট পড়ান। তবে তিনি তার শিক্ষকদের নাম বলতে রাজি হননি।
পারভীন আক্তার নামের এক অভিভাবক ‘নীপা ম্যাডামের কাছে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য’ নার্সারি ক্লাসে পড়ুয়া তার সন্তানকে নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।
তবে ওই সময় নিপা ম্যাডামকে স্কুলে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই এলাকার ভাওয়াল মির্জাপুর হাজী জমির উদ্দিন হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষকও ওইসব প্রতিষ্ঠানের আশেপাশের বাসা ভাড়া নিয়ে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন।