‘ঝুঁকিতে’ তেরখাদা উপজেলা প্রশাসনিক ভবন

তিন বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষিত হলেও খুলনার তেরখাদা উপজেলা প্রশাসনের ভবনটিতে এখনও কাজ চলছে ‘ঝুঁকি নিয়ে’।

শুভ্র শচীন খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2020, 01:42 PM
Updated : 30 Nov 2020, 01:42 PM

উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে তেরখাদা উপজেলার প্রশাসনিক ভবনটি নির্মিত হয়। ২০১৭ সালের ২৭ অগাস্ট ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ভবনটি নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

সরেজমিনে উপজেলা প্রশাসনের এই কার্যালয়ে দেখা যায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যক্রম পরিচালনায় দুর্ভোগের নানাচিত্র।

ছাদ ও দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরা। পলেস্তারা খসে মরিচা পড়া রড বেরিয়ে আছে।  

উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, বর্ষা মৌসুমে ববনে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে মেঝে, আসবাবপত্রসহ নানা প্রয়োজনীয় মূল্যবান কাগজপত্র ভিজে যায়। ২০১৪ সালের নভেম্বরে অফিস চলাকালে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অফিস ও পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার অফিসের ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে। ওই সময় অফিসের চেয়ার ও টেবিল ভেঙ্গে যায়। তবে কর্মকর্তারা ওই সময় অফিস কক্ষে না থাকায় বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, আতংকের মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অফিস করতে হচ্ছে। যেকোনো সময়ই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

“বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হলেও ভবনের কাজ শেষ করতে বিলম্ব করা হচ্ছে।”

উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে জানা যায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে পাঁচ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন একটি চারতলা প্রশাসনিক ভবন এবং একতলা অডিটোরিয়াম নির্মাণে দরপত্র আহবান করা হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে বলা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি দুবছর সময় বাড়িয়েও নানা অজুহাতে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়।

উপজেলা প্রকৌশলী অলিদ হাসান বলেন, তিনি যোগদানের আগে কাজে ধীরগতি ছিল। তারপর গতি বাড়লেও করোনার কারণে কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। বর্তমানে তিনি কঠোর তদারকি করে কাজের গতি এনেছেন। দ্রুত কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন তিনি।

মাত্র ৩৪ বছরে ভবনটি কেন পরিত্যক্ত হয়ে গেল তার কোনো কারণ ব্যাখ্যা করতে অস্বীকৃতি জানান এই প্রকৌশলী।

নির্মাণকাজে বিলম্বের কথা স্বীকার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিয়াউল ট্রেডার্সরের সত্বাধিকারী জিয়াউল আহসান টিটো বলেন, দেড়বছর আগে কাজ শুরু করলেও নির্ধারিত সময়ে তা শেষ করা যায়নি।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, শহীদ মিনার স্থানান্তর এবং পুরাতন শেড ও গাছ কাটা নিয়ে কিছুটা জটিলতা দেখা দেয়। এছাড়া নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের জন্য ৩২ চাকার গাড়ি প্রবেশ নিয়েও জটিলতা ছিল। ফলে বিলম্ব হয়।

তবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি নাগাদ ভবন হস্তান্তর করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একজন নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অবস্থা এমন হতে পারে তা তিনি ভাবতেও পারেননি। এমনকি তার শৌচাগারও ব্যবহারের অযোগ্য। বাধ্য হয়ে দূরে সরকারি বাসভবনে গিয়ে শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়।

তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নতুন ভবনের কাজ দ্রুত শেষ করতে বলেছেন বলে জানান।