ময়মনসিংহে সাবেক চেয়ারম্যানের নামে পুত্রবধূর মামলা

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের মামলা করেছেন তার পুত্রবধূ।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2020, 12:31 PM
Updated : 27 Nov 2020, 12:31 PM

চার আসামির মধ্যে দুজন আদালত থেকে জামিন নিলেও প্রধান আসামিসহ বাকি দুজন পলাতক রয়েছেন।

প্রধান আসামিসহ পলাতক দুজন ‘প্রকাশ্যে চলাফেরা করলেও’ পুলিশ ধরচে না বলে বাদীর পরিবারের অভিযোগ।

তবে পুলিশ বলছে, আসামি ধরতে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গত ১৯ নভেম্বর মুক্তাগাছা থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

আসামিরা হলেন বাদীনির স্বামী ইসমত দোহা মিঠু [প্রধান আসামি], তার বড়ো ভাই মেজবাহ উদ্দিন, শ্বশুর মাহবুবুল আলম ফকির ওরফে আলম চেয়ারম্যান ও শাশুড়ি শরিফা আক্তার লিলি।

মামলার বাদী ওই গৃহবধূ বলেন, ২০১৭ সালের শেষের দিকে খেরুয়াজানী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম ফকিরের ছেলে ইসমাত দোহা মিঠুর সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। তাদের একটি নয় মাস বয়সী ছেলে রয়েছে। বিয়ের সময় তার বাবা সাধ্যমত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেন।

মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তাদের ছেলের জন্মের কিছুদিন পর থেকে স্বামী মিঠু অন্য আসামিদের পরামর্শে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর টাকার জন্য তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ওইদিন তাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এরপর গত ১৬ সেপ্টেম্বর স্বামী মিঠু ও অন্য আসামীরা তার বাবার বাড়ি গিয়ে টাকার জন্য তাকে আবার মারপিট ও আসবাবপত্র ভাংচুর করেন বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়।

ওই গৃহবধূর বড়ো ভাই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মিঠু বড়ো ইঞ্জিনিয়ার পরিচয়ে তার বোনকে বিয়ে করেছিলেন। তারাও বিষয়টিকে সত্য ভেবে খোঁজখবর নেননি। বিয়ের পর জানতে পারেন মিঠু একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন, যা দিয়ে তার সংসার চলত না।

“তাই টাকার জন্য প্রায় সময়েই আমার বোনকে মারধর ও আসবাবপত্র ভাংচুর করত। বোনের সংসার টিকাতে বেশ কয়েকবারে কয়েক লক্ষ টাকাও দেওয়া হয়েছিল। তারপরও মিঠুর পরিবারের লোকজন অত্যাচার বন্ধ করেনি।”

মামলার প্রধান আসামি ইসমত দোহা মিঠু

তিনি বলেন, “মিঠু বুধবার সারাদিন তার বাবার সাথে আদালত প্রাঙ্গণে ছিল। পুলিশ ইচ্ছা করলেই তাকে ধরতে পারত।”

মামলা তুলে নিতে আসামিপক্ষ তাদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ বাদীর এই ভাইয়ের।

ইসমত দোহা মিঠু বলেন, বিয়ের পর থেকেই সংসারে অমনযোগী ছিল তার স্ত্রী। পরিবারের কারো সাথেই ভালো ব্যবহার করত না। চাহিদার পাশাপাশি রাগও ছিল বেশি।

“বারবার বুঝিয়েছি সংসারে মনযোগী হওয়ার জন্য। তা না করে মিথ্যা অভিযোগে নির্যাতনের মামলা করে আমাদের হয়রানি করছে।”

মাহবুবুল আলম ফকির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত খেরুয়াজানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯০ সালের দিকে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘদিন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার দ্বিতীয় মেয়াদে দল পরিবর্তন করে খেরুয়াজানি ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি হন এবং উপজেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

তার ভাষ্য, বিয়ের পর থেকেই তার ছেলের স্ত্রী তাদের বাড়িতে থাকেন না। বাবার বাড়িতে থাকার কারণে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। তবে তারা তাকে নির্যাতন কিংবা যৌতুক দাবি করেননি।

মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজিজুল হক ইদু বলেন, মাহবুবুর রহমান ফকির ওরফে আলম চেয়ারম্যান ২০১৪ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন সরকারকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা মামলার আসামি। এই ঘটনায় তার নামে দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

মাহবুবুল আলম ফকিরের ছোটো ভাই চিকিৎসক মহসীন উদ্দিন বলেন, “গৃহবধূ নির্যাতনের বিষয়টি সত্য। এর সঠিক বিচার হওয়া উচিত। তারা টাকার জন্য সব করতে পারে। আমাকেও আমার বাবার সম্পত্তির অংশ দেয়নি। মাহবুবুল আলম ফকির তা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে।”

আরেক ভাই আইনজীবী নাসির উদ্দিন বলেন, “বিয়ের পর থেকেই মেয়েটিকে তারা নির্যাতন করে আসছে। এই নিয়ে সালিশ বৈঠকও হয়েছে অনেকবার। মেয়েটিকে বাধ্য করা হয়েছে মামলায় যেতে। এলাকায় কম-বেশি সকলেই তার নির্যাতনের শিকার। এসব কুকর্মের বিচার হওয়া উচিত।” 

মুক্তাগাছা থানার ওসি বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই গৃহবধূ উপজেলার বাহেঙ্গ গ্রামের মেয়ে। নির্যাতনের অভিযোগে তিনি বাদী হয়ে চারজনের নামে মামলা করেছেন। মাহবুবুল আলম ফকির ও তার বড়ো ছেলে জামিনে রয়েছেন। বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বাদীকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।