বালু তুলতে পদ্মার বুকেই রাস্তা

পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য নদীর মধ্য দিয়েই রাস্তা নির্মাণ করছেন রাজশাহী নগরীর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এক আওয়ামী লীগ নেতা।

বদরুল হাসান লিটন রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2020, 11:21 AM
Updated : 27 Nov 2020, 12:45 PM

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রজব আলী নগরীর তালাইমারী এলাকা দিয়ে এই রাস্তা নির্মাণ করছেন।

রাস্তা তৈরির কথা স্বীকার করলেও রজব আলীর দাবি, কোনো অনিয়ম তিনি করছেন না।

রজব আলী এই বছর রাজশাহীর ‘দিয়াড়খিদিরপুর’ ও ‘চরশ্যামপুর’ বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন। কিন্তু তিনি বালু উত্তোলন করছেন ইজারা নেওয়া বালুমহালের ৬/৭ কিলোমিটার দূরে তালাইমারি এলাকায় [কাজলা মৌজা]। দুটি ড্রেজিং মেশিন দিয়ে সেখনে বালু তোলা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজশাহী নগরের তালাইমারী ঘাট থেকে খানিকটা দূরে পদ্মা নদীর চর জেগেছে। ওই চরের পর (দক্ষিণে) নদীর মূল ধারা প্রবাহিত। ওই চরে ড্রেজিং করে বালু মজুদ করা হচ্ছে। সেখান থেকে সরাসরি ট্রাকে করে বালু আনতেই নদী ভরাট করে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে।

রাস্তা তৈরি করতে গত মঙ্গলবার থেকে নদীর বাঁ তীর থেকে ইট ও কংক্রিটের বর্জ্য ফেলার কাজ চলছে বলে স্থানীয়রা জানান।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, গত বছর একইভাবে নদী ভরাট করে রাস্তা করা হয়েছিল। ওই সময় এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীরা প্রতিবাদে সোচ্চার হন। এছাড়া স্থানীয় এক ব্যক্তির করা রিটে হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসন তালাইমারী ঘাট দিয়ে বালু তোলা বন্ধ করে দিয়েছিল। ইজারাদারকে রাস্তা অপসারণ করে নিতে বাধ্য করা হয়েছিল।

পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চর জাগায় এবার নদীর মূল ধারা এখান থেকে কিছুটা দূরে সরে গেছে। তবে পদ্মার বাঁ তীর ঘেঁষে রয়েছে জলধারা।

“পদ্মা পাড়ের লোকজন তাতেই গোসল ও কাপড়চোপড় ধোয়ার কাজ করেন। সেখানে রাস্তা তৈরি করে বালু তোলা শুরু হলে তারা এখানে গোসল করতে পারবেন না। এখানে জনসমাগম হবে। সব সময় ট্রাক যাতায়াত করবে। ধুলাবালি উড়বে।”

এছাড়া এই পথে বালু পরিবহন করা হলে ব্যস্ততম তালাইমারি এলাকা বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে যাবে বলেও আমজাদের আশঙ্কা।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বালু মহালের ইজারাদার ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজব আলী বলেন, “চর থেকে বালু তুলে নিয়ে আসার জন্য ওই রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে এখন নদী নেই। তাই কোনো অনিয়ম করছি না।”

ইজারা নেওয়া স্থান থেকে বালু না তুলে তালাইমারী থেকে কেন তুলছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেন, সঠিক জায়গা থেকেই তিনি বালি তুলছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, তার ইজারা নেওয়া জায়গা থেকে বালু তুলে নৌকায় করে এখানে জমা করছেন। তারপর এই পথ দিয়ে বালু বাইরে নিচ্ছেন। এ কারণে রাস্তা তৈরি করছেন।  

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রাজশাহীর সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পানি থাকুক আর না থাকুক, নদীর জায়গায় কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না। এটা দেশের প্রচলিত আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।

এ আইনে জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও নদী রক্ষা কমিশনের জেলা ও বিভাগীয় কমিটি ব্যবস্থা নিতে পারে।

জেলা প্রশাসক নদী রক্ষা কমিশনের জেলা কমিটির সভাপতি এবং বিভাগীয় কমিশনার বিভাগীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবার শুধু ‘দিয়াড়খিদিরপুর’ ও ‘চরশ্যামপুর’ বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছে। তালাইমারী ঘাট দিয়ে বালু তোলার কথা নয়। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে জানা যায়, গত বছর ‘চরশ্যামপুর’ ও ‘চরখিদিরপুর’ বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছিল। তাই তালাইমারি ঘাট দিয়ে বালু উত্তোলনের সুযোগ ছিল।

কিন্তু ওই ঘাট দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে হাই কোর্টে রিট করা হয়। ওই রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছর সেখান দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

একই সঙ্গে চলতি বছরের ৩ মে বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এই বালুমহালটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে সভায় ‘দিয়াড়খিদিরপুর’ ও ‘চরশ্যামপুর’ নামে নতুন বালুমহাল করা হয়, যা তালাইমারি এলাকা থেকে প্রায় ৬/৭ কিলোমিটার দূরে।