‘চিম্বুক পাহাড়ে ইজারার অতিরিক্ত জমি দখল সমর্থনযোগ্য নয়’

চিম্বুক পাহাড়ে পর্যটন স্থাপনা নির্মাণে দেওয়া ইজারার ২০ একরের বেশি জমি দখল সমর্থনযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা মারমা।

বান্দরবান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2020, 02:51 PM
Updated : 22 Nov 2020, 03:17 PM

রোববার জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।

বান্দরবান শহর থেকে ৪৭ কিলোমিটার দূরে নীলগিরি সংলগ্ন নাইতং পাহাড় এলাকায় পাঁচতারা হোটেল নির্মাণ ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বান্দরবান জেলা পরিষদ।

চিম্বুক পাহাড়ে পর্যটন স্থাপনা নির্মাণে নির্দিষ্ট্ জমির অতিরিক্ত দখল করা হয়েছে বলে সম্প্রতি গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ম্রো সম্প্রদায় এখানে পর্যটন স্থাপনা নির্মাণের প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করেছে।    

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ক্য শৈ হ্লা মারমা বলেন, সম্প্রতি যে জমিতে পর্যটন হোটেল নির্মাণের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পক্ষ-বিপক্ষ প্রতিবাদ জানিয়ে চলছে; সে জমিটি লামা উপজেলার ৩০২ নম্বর লুলাইন মৌজার অন্তর্ভুক্ত।  

“পরিষদের তত্বাবধানে কৃষি প্রযুক্তি ও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের কৃষিভিত্তিক জীবিকা নির্বাহের পথ সুগমের জন্য স্থানীয় ম্রো নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ-আলোচনার ম্যধমে পরিষদের নামে বন্দোবস্তি নেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়।

“বন্দোবস্তির জন্য প্রস্তাবিত জমির পরিমাণ ২০ একর তৃতীয় শ্রেণির পাহাড়।”

২০১২ সালে বান্দরবান জেলা পরিষদের নামে ইজারা নেওয়ার চেষ্টা হলেও তা সম্পন্ন হয়নি আইনগত কারণে। পরবর্তীতে সেনানিবাসের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হয়।

এই বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১২ সালে স্থানীয় ভূমি অফিসে নির্ধারিত প্রক্রিয়া মেনে ইজারার কাজ শুরু হয়। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। পার্বত্য এলাকার ভূমি বন্দোবস্ত কার্যক্রমে ‘স্থগিতাদেশের শর্তাদি পূরণ না হওয়ায়’ বন্দোবস্ত মামলাটি নিষ্পন্ন করা সম্ভব নয় মর্মে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়। ফলে পরিষদের নামে এই জমির বন্দোবস্ত গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন থেকে যায়।

লিখিত বক্তব্যে ক্য শৈ হ্লা মারমা আরও জানান, পরবর্তীতে ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড, বান্দরবান সেনানিবাসের প্রস্তাব ও অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে পহেলা জানুয়ারি থেকে ২০৫৫ সালে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০ বছরের জন্য উভয়পক্ষের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন করে জমিটি ইজারা দেওয়া হয়।

উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিতে সুনির্দিষ্ট ১৮টি শর্তাবলী প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে।

ইজারা দেওয়া নাইতং পাহাড়ে বর্তমানে কোনো ম্রো জনবসতি নেই এবং আগেও ছিল না বলে জানান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে ইজারা দেওয়া ২০ একরের বাইরে শত শত একর বেদখল করা হয়েছে উল্লেখ রয়েছে; যা প্রচলিত আইনবিরোধী ও পরিষদের সাথে সম্পাদিত চুক্তির পরিপন্থি কার্যকলাপ। এই ধরনের কার্যকলাপ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

এছাড়া এই জমিতে পর্যটন হোটেল নির্মিত হলে প্রত্যক্ষভাবে চারটি এবং পরোক্ষভাবে ৭০ থেকে ১১৬টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা পুরোপুরি সঠিক নয় বলেও তার ভাষ্য।

জেলা পরিষদ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির শর্তাদি প্রতিপালনের মাধ্যমে পরিষদের ২০ একর জমিতে সেনবাহিনীর তত্বাবধানে স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনযাপন ক্ষুণ্ন না করে পর্যটন সেবা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা যেতে পারে বলে মনে করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ক্য শৈ হ্লা মারমা বলেন, হোটেল নির্মাণ ও পর্যটন স্থাপনা বিষয়ে সিকদার গ্রুপের সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি। চুক্তি হয়েছে সেনাকল্যাণ ট্রাস্টের সঙ্গে। পরবর্তীতে সিকদার গ্রুপ কীভাবে জড়িত হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।