গাইবান্ধায় সড়ক নির্মাণে ধীরগতি, দুর্ভোগে শহরবাসী

গাইবান্ধা শহরে চারলেন সড়ক নির্মাণ কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ায় খানাখন্দ, ধুলাবালিসহ নানা কারণে ওই পথে চলাচলকারী মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2020, 03:31 PM
Updated : 21 Nov 2020, 03:31 PM

গাইবান্ধা সড়ক ও জনপদ বিভাগ জানায়, জেলা শহরের পুর্বদিকে বড় মসজিদ থেকে পশ্চিমে পুলিশ সুপার কার্যালয় পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়ক চারলেন প্রকল্প উদ্বোধন হয় ২০১৮ সালে। ওই কাজের ব্যয় ধরা হয় ১১৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে সড়ক নির্মাণ ছয় কোটি ও জমি অধিগ্রহণ ১১১ কোটি টাকা।

দায়িত্ব পাওয়া ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘এমএম বিল্ডার্স’ চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। ইতোমধ্যে পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার চারলেন সড়কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সড়ক ও জনপদ বিভাগ আরও জানায়, বাসটার্মিনাল থেকে ১ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় বন্ধ রয়েছে। ১ নম্বর রেলগেট থেকে বড় মসজিদ পর্যন্ত সড়কের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

কিন্তু ইতিমধ্যে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ।  

শনিবার সরেজমিন দেখা গেছে, ১ নম্বর রেলগেট থেকে বড় মসজিদ পর্যন্ত সড়কের দুইপাশে সড়ক ও জনপদ বিভাগের সীমানায় কোনো স্থাপনা নেই। শুধু সরকারি মহিলা কলেজ ভবন রয়েছে, সেটি ভাঙার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রায় একমাস আগে সড়কের উত্তর পাশে কিছু অংশ খুঁড়ে বালু ফেলা হয়েছে। শহরের কাচারি বাজার এলাকায় সড়কের দক্ষিণ পাশে প্রায় ২০০ মিটার অংশে নর্দমার জন্য গর্ত করে রাখা হয়েছে। কিছু অংশে বালু ফেলা হয়েছে। এছাড়া সড়ক নির্মাণ কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। কবে কাজ শেষ হবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।

গাইবান্ধা শহরের কাচারি বাজারের ব্যবসায়ী রবীন চন্দ্র সাহা বলেন, ১০-১২ দিন আগে সড়কের দক্ষিণ পাশে নর্দমার জন্য গর্ত করা হয়েছে। পাশেই মাটি স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বাতাস উঠলেই বালুঝড় বয়। এছাড়া এ কারণে এখানে সবসময় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের বেচাকেনায় বিঘ্ন ঘটছে।

এই সড়ক সম্প্রসারণের কাজ একদিন চলে তো আর চারদিনই বন্ধ থাকে, বলেন তিনি।

গাইবান্ধা নাগরিক পরিষদের আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, চারলেন সড়ক নির্মাণ গাইবান্ধাবাসীর স্বপ্ন ছিল। দুই বছর আগে কাজের উদ্বোধন দেখে মানুষ আনন্দিত হয়েছিল। কিন্তু দুই বছরে কাজের কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

“ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি রয়েছে। যেভাবে ধীরগতিতে কাজ চলছে, তাতে কবে কাজ শেষ হবে তা কেউ আঁচ করতে পারছেন না।”

শহরের ডিবি রোডের ব্যবসায়ী আব্দুল হাই বলেন, সড়কের দুইপাশ থেকে স্থাপনা সরানোর কারণে স্থাপনার জায়গা উঁচুনিচু হয়ে আছে। কংক্রিটের খুঁটির মাথা, ইটপাথর উঠে আছে। স্থাপনা সরানোর পর এগুলো কেউ অপসারণ করেনি। সড়ক ও জনপদ বিভাগ কিংবা ঠিকাদারের লোকজনও করেনি। ফলে পথচারীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সবসময় যানজট লেগেই থাকছে।

শহরের পুর্বপাড়ার ট্রাকচালক ফারুক মিয়া বলেন, শহরের কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল থেকে বড়ো মসজিদ পর্যন্ত সড়কটি খনাখন্দে পরিণত হয়েছে। ফলে যানবাহন চলছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এছাড়া কার্পেটিং উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

“বৃষ্টির সময় দুর্ভোগের কোনো সীমা থাকে না। এ ছাড়া চারলেন হবে বলে সংস্কার করা হয়নি। কিন্তু সংস্কারও করা হচ্ছে না, চারলেনও হচ্ছে ধীরগতিতে।”

কাজে ধীরগতি বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্সের মালিক মহিউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রফিক মিয়া বলেন, গাফিলতির অভিযোগ সঠিক নয়। যে সড়কে চারলেনের কাজ হচ্ছে সেটি গাইবান্ধা জেলা শহরের প্রধান সড়ক। কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে দুই বছর থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত ছিল।

“কিন্তু নানা কারণে কাজে বিলম্ব হয়েছে। সড়কের দুইপাশ থেকে স্থাপনা সরাতে বিলম্ব হয়েছে। এখানও বেশিরভাগ এলাকা থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানো হয়নি।”

তিনি বলেন, সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করলেই পানির লাইন ও টেলিফোনের লাইন বের হচ্ছে। সেগুলো ঠিকঠাক রেখে কাজ করতে সময় লাগছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কোনো সহযোগিতা করছে না। তারপরও দ্রুত কাজ করতে চেষ্টা করা হচ্ছে।

গাইবান্ধা সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সড়ক ঘেঁষে স্থাপিত বৈদ্যুতিক খুঁটি না সরানো এবং সড়কে পানির লাইন ও টেলিফোন লাইনের কারণে কাজ বিলম্ব হচ্ছে। তবে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর কাজ শেষ করার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল; তবে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।