ফেনীতে ‘ধর্ষণের শিকার’ ও আসামির বিয়ে কারাগারে

‘জামিনের শর্ত মেটাতে’ ফেনীতে ‘ধর্ষণের শিকার’ এক কিশোরী ও এই মামলার আসামির বিয়ে হয়েছে কারাগারে।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2020, 11:19 AM
Updated : 19 Nov 2020, 11:39 AM

বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামানের উপস্থিতিতে জেলা কারাগার চত্বরে ছয় লাখ টাকা দেনমোহরে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়।

বিয়েতে বর-কনেসহ দুপক্ষের লোকজন, ধর্ষণ মামলার বাদী ও আসাপক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম বলেন, সোনাগাজীর উত্তর চরদরবেশ গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সুফিয়ানের ছেলে জহিরুল ইসলাম জিয়ার সঙ্গে প্রতিবেশী এক কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সূত্র ধরে বিয়ের প্রলোভনে গত ২৭ মে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে প্রেমিক জহিরুল ইসলাম জিয়া। ঘটনার দিনই ওই কিশোরী বাদী হয়ে জিয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। গত ২৯ মে আসামি জিয়াকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল।

এরপর জামিন চাইতে হাই কোর্টে গেলে আদালত ওই কিশোরীকে বিয়ে করার শর্তে জিয়াকে জামিনের আশ্বাস দেওয়া হয়।

পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, হাই কোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ গত ১ নভেম্বর বিয়ে করার শর্তে ধর্ষণ মামলার আসামি জিয়াউল হক জিয়াকে জামিন দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেয়। 

ফেনীর জেল সুপার আনোয়ারুল করিম বলেন, উভয়পক্ষ সম্মত থাকলে ফেনী জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ আদেশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করবে এবং বিয়ে সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাই কোর্টকে অবহিত করবে। কারা কর্তৃপক্ষ বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়েছে বলে প্রতিবেদন হাই কোর্টে জমা দিলে আদালত আসামির জামিনের আদেশ দেবে।

তিনি জানান, হাই কোর্টের নির্দেশনা পেয়ে দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনাক্রমে বৃহস্পতিবার তাদের বিয়ের তারিখ ধার্য করা হয়েছিল। সেই মোতাবেক কনেসহ দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে বিয়ে পড়ানো হয়েছে। এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাই কোর্টে পাঠানো হবে।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান বলেন, হাই কোর্টের নির্দেশনা মতে জেল সুপারের তত্ত্বাবধানে আইনজীবী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং দুই পরিবারের লোকজন উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। 

কাজী আবদুর রহিম এই বিয়ে পড়ান বলে মনিরুজ্জামান জানান।

মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আলমগীর বলেন, “ধর্ষণ মামলায় গত ২৯ মে আসামি জিয়াকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। গ্রেপ্তারের পর থেকে তিনি ফেনী কারাগারে ছিলেন। নিম্ম আদালতে জামিন না হলে আমি জিয়ার জামিন চেয়ে হাই কোর্টে মিস মামলা দায়ের করেছিলাম। গত ১ নভেম্বর আদালত বিয়ের শর্তে তাকে জামিন দেওয়ার আশ্বাস দেয়।”

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, “হাই কোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক দুই পরিবারের বিয়ের মাধ্যমে আদালত ন্যায় বিচার করেছে। ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে ফেনীতে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা।”

জিয়ার বাবা আবু সুফিয়ান বলেন, “আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। হাই কের্টের নির্দেশনা মেনে নিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তথ্য পাঠানোর পর আশা করি দ্রুত আমার ছেলের মুক্তি মিলবে। জহির মুক্তি পেলে বাড়িতে বড় করে অনুষ্ঠান করে ছেলের বউকে ঘরে তুলে নেব।”