পাবনায় হত্যা তদন্তে ‘গাফিলতি’: পুলিশের মহা-পরিদর্শককে অভিযোগ

পাবনায় এক হত্যা মামলা তদন্তে পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ করে মহা-পরিদর্শকের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2020, 10:19 AM
Updated : 19 Nov 2020, 10:19 AM

রেজিস্ট্রি করা ডাকে পুলিশের মহা-পরিদর্শকের কাছে এ আবেদন পাঠিয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার জানান নিহতের বড় ভাই ও মামলার বাদী হাসেম মীর।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশের দাবি ‘যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই’ মামলার কার্যক্রম চলছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আমিনপুর থানার আহম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণচর গ্রামের মাছেম মীরের সঙ্গে জমি নিয়ে একই গ্রামের তোফাজ্জল খানের বিরোধ দীর্ঘদিনের।

গত ১৫ নভেম্বর বিকালে এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তোফাজ্জল সহযোগীদের সাথে নিয়ে মাছেম মীরকে পেটান।

এতে গুরুতর আহত মাছেম মীর (৫৫) বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর মারা যান।

মাছেম মীরকে হত্যার খবর পেয়ে স্থানীয়রা তোফাজ্জল, গোলাপী ও তানিয়াকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

সেদিন রাতে এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই হাসেম মীর বাদী হয়ে আটক তিনজনসহ ১১ জনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে আমিনপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।

তবে ১৬ নভেম্বর পুলিশ গ্রেপ্তারদের হত্যা ৫৪ ধারায় সন্দেহভাজন হিসেবে আদালতে সোপর্দ করেন বলে মামলার নথি পর্যালোচনা করে পাবনা জজ কোর্টের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম নিশ্চিত করেন।

এদিকে, পুলিশের ‘প্রত্যক্ষ ইন্ধন ও অবহেলার’ কারণেই আসামিরা মাছেম মীরকে হত্যার সুযোগ পেয়েছে বলে অভিযোগ করছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা।

নিহতের ভাতিজা ফারুক মীর বলেন, আমার চাচার হত্যাকারী তোফাজ্জল খানের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় ১৫ নভেম্বর সকালে আমার বাবা শুকুর মীর এবং ভগ্নিপতি বাচ্চু শেখকে পুলিশ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।

“কিছুক্ষণ পর পুলিশের অপর একটি দল বাড়িতে এলে ভয়ে আমরা পালানোর চেষ্টা করি। এ সুযোগে দলবলসহ তোফাজ্জল আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আমার চাচা মাছেম মীরকে পিটিয়ে হত্যা করে।”

নিহতের বড় ভাই হাসেম মীর জানান, ঘটনার দিন রাতেই থানায় এজাহার দায়ের করলেও পরদিন মামলাটি রুজু হয়।

“হত্যাকাণ্ডের পর হাতেনাতে প্রতিবেশীরা তোফাজ্জল, গোলাপী ও তানিয়াকে আটক করে পুলিশে দিলেও অজ্ঞাত কারণে পুলিশ তাদের হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার না দেখিয়ে সময়ক্ষেপণ করছে।” নিহতের শরীরে ‘আঘাতের চিহ্ন থাকলেও’ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুরতহাল রিপোর্টে তা উল্লেখ করেননি বলে অভিযোগ তার।

তবে নিহতের শরীরে ‘আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি’ জানিয়ে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল গাফফার বলেন, মাছেম মীর কিভাবে মারা গেছেন, তা আমরা নিশ্চিত নই। ময়না তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়ায় আসামিদের হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।

গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে আমিনপুর থানার ওসি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই নিহতের ভাইসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তোফাজ্জল ও তার লোকজনের হামলার ঘটনার সাথে এ গ্রেপ্তারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

“পুলিশ নিরপেক্ষভাবে মামলাটি তদন্ত করছে।”

তবে কয়েকজন আইনজীবী বলছেন, অন্য মামলায় আটক থাকলেও হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিকে ‘অবশ্যই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আইনী বাধ্যবাধকতা রয়েছে’।

পাবনা জজ কোর্টের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, নিয়মিত হত্যা মামলা রুজু হলে এজাহারনামীয় আসামিদের সন্দেহভাজন হিসেবে আদালতে সোপর্দ করা প্রচলিত আইন পরিপন্থি।

“ময়না তদন্তের রিপোর্ট প্রাপ্তির অপেক্ষায় মামলার আসামি গ্রেপ্তার এবং তদন্ত কার্যক্রম থেমে থাকতে পারে না। এটি নজিরবিহীন ঘটনা এবং আইনের সুস্পষ্ট লংঘন।”