আমন: ‘ছইল-পইল নিয়ে হামরা ভালো থাকব বাহে’

বৃষ্টি আর পোকার আক্রমণে রংপুরের কোনো কোনো এলাকায় সামান্য ক্ষতি কাটিয়ে এবার ‘ব্যাপক ফলন’ পেতে যাচ্ছে রংপুরের আমন চাষিরা।

আফতাবুজ্জামান হিরু রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2020, 05:22 AM
Updated : 15 Nov 2020, 11:00 AM

সরেজমিনে রংপুর সদর উপজেলার চন্দন পাট এলাকার কৃষক রমিজ উদ্দিন (৬০) বলেন, “এইবার হামরা সাড়ে তিন বিঘা জমিত রোপা আমন চাষ করেছু বাহে। আল্লাহ দিলে মাঠত হামার ভালো ধান হইছে। আর ক’দিনের মধ্যে ধান কাটা-মাড়াই শুরু করমো (করব)।

“এবার বৃষ্টি বেশি ক্ষয়-ক্ষতি করবের পায় নাই। ছইল-পইল নিয়ে হামরা ভাল থাকব বাহে। ধান কাটা হলে মোর আর কোনো কষ্ট হবান নয়।”

শুধু তার নয়, এবার রংপুর জেলায় রোপা আমন ধানের ব্যাপক ফলনের খবর কৃষকের মুখে মুখে।

‘রংপুর জেলায় এক লাখ ৬৫ হাজার ৯৫০ হেক্টর’ জমিতে আমন চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার ১০০ হেক্টর বেশি জমিতে এ ধান চষেছে চাষিরা। কোনো এলাকায় কিছু কিছু ধানা শুরুও হয়েছে। এক সপ্তাহের পুরোদমে শুরু হবে ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ।

তারপর গ্রামের ঘরে ঘরে শুরু হবে ঐতিহ্যের নবান্ন উৎসব। স্বজন-কুটুমদের দাওয়াতের ধুম পড়বে গ্রামে গ্রামে।

এবার ১৮ বিঘা জমিতে আমন চাষ করা পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষক খিতিশ চন্দ্র বর্মন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানান, ইরি ধানের চেয়ে আমনের ফলন ভালো হয়েছে।

“প্রায় সব ক্ষেতেই ধানে পাক ধরেছে। ৪-৫ দিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু করব।”

একই গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, গত আমন মৌসুমে ১৬ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। ভালো ফলন পাওয়াতে এবার ১৮ বিঘাতে আমন চাষ করেছি।

কিছু জমিতে কারেন্ট ও মাজরা পোকা দেখা গেছে। পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োনীয় স্প্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে আমনের ফলনও ভালো হয়েছে জানালেন তিনি।

তিন বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন সদর উপজেলার নজীর হাট এলাকার কৃষক আবু সিদ্দিক (তোতা) মিয়া।

তিনি বলেন, বৃষ্টির পানিতে ধান ডুবে গেলেও তেমন ক্ষতি হয় নাই। দুই-তিন দিনের মধ্যে পানি নেমে যাওয়ায় রোপা আমন ধান রক্ষা পেয়েছে।

মিঠাপুর উপজেলার বালুয়া মাসুম পুর ইউনিয়নের বালার ঘাট মরার বাজার এলাকার রহিম উদ্দিন (৪৫) জানান, ১০ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করে খুবেই ভালো ফলন পাচ্ছেন।

“সরকার যদি ভালো দামে ধান কেনে তাহলে আমরা কৃষকরা ভালো টাকা পাব ইনশাআল্লাহ। আর যদি সরকার ভালো দামে ধান ক্রয় না করে তাহলে আমাদের মত মধ্যবিত্ত কৃষকরা মারা যাবে।”

এবার ১০ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হওয়া সদর উপজেলার কৃষি অফিসার মনিরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এবারের বর্ষায় কৃষকের ধানের তেমন ক্ষতি হয়নি। বোরোর মতো আমন ধানেরও বাজারে ভালো দাম রয়েছে।

মিঠাপুকুর উপজেলায় ৩৬ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে।

এ উপজেলার কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, এই এলাকায় প্রায় ১৫ ভাগ জমির হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। বাকিটা সপ্তাহখানেকের মধ্যে কাটা শুরু হবে।

পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন, রোপা আমনের চাষ ভালো হলেও বৃষ্টিতে আংশিক ক্ষতি হয়েছে সেখানে।

“আংশিক ক্ষতি হলেও, যা ফলন হয়েছে তাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে কৃষকরা।”

আগাম হাইব্রিড জাতের রোপা আমন চাষ করায় কৃষক ক্ষতি হবে না বলছেন তিনি।

পীরগঞ্জে এবার ২৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ হয়েছে। ১২ শতাংশ ধার কাটা সারা।

রংপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ ছরোয়ারুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানান, এবার জেলার ৭ উপজেলার এক লাখ ৬৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও, আমন ধান চাষ হয়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে।

ধান চাষের শুরু থেকেই উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “রংপুরে যদিওবা এবার বৃষ্টির কারণে কৃষকের কিছু ক্ষতি হয়েছে। তারপরও আগাম শীতকালীর কিছু সবজি চাষ করায় সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।”