ময়মনসিংহে মরছে টমেটো গাছ, দিশেহারা কৃষক

ময়মনসিংহে কয়েকশ একর জমিতে টমেটো গাছে পচন ধরায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

ইলিয়াস আহমেদ ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2020, 05:21 AM
Updated : 9 Nov 2020, 05:41 AM

এ বছর ময়মনসিংহে ১৮ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। ইতিমধ্যে ৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ করা হয়েছে তথ্য রয়েছে তাদের কাছে।

সদর উপজেলার বোররচর ও পরাণগঞ্জ ইউনিয়নে সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষকের আগাম সবজি ক্ষেতের টমেটোর চারা অজানা রোগে মারা যাচ্ছে। সাবাড় হচ্ছে ক্ষেতের পর ক্ষেত।

অনেকেই ঋণ নিয়ে সবজি চাষ করে এখন দিশেহারা। কোনো কোনো কৃষক ক্ষতি এড়াতে মরা ও পচন ধরা টমেটো গাছের চারা ফেলে দিয়ে পুনরায় ওই ক্ষেতে মরিচ ও কপির চারা রোপণ করছেন।

বোররচর ইউনিয়নের জাফর মণ্ডল পাড়ার কৃষক হাসান আলী। প্রতি বছরই টমেটো চাষ করেন। গত বছরও টমেটো থেকে এক লাখ টাকা আয় করেছিলেন।

এবারও প্রায় দেড় একর জমিতে টমেটো চারা রোপন করেন। চারা রোপনের দেড় মাসে তার খরচ হয় দুই লাখ টাকা। লাভের আশায় স্বপ্ন দেখলেও গত ১৫ দিন ধরে পচন ধরেছে তার ক্ষেতে।

একে একে মরছে ফুল ও ফল হওয়া টমেটো গাছগুলো। কোনো ভাবেই পচন ঠেকাতে না পারায় হতাশা হাসান আলীর চোখে মুখে।। পাঁচ সদস্যের সংসার চালানোর খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।

হাসান আলীর মতো একই অবস্থা জাফর মণ্ডল পাড়ার কৃষক আব্দুল হকের তিনি দুই লাখ টাকায় ৭৭ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে আগাম টমেটোর চারা রোপণ করেছিলেন। ৫৫ শতাংশ জমির টমেটো গাছ মরে গেছে।

ছোট ছোট ফুল ও ফলন হওয়া গাছগুলো বাঁচানোর জন্য অনেকের পরামর্শ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি।

বাকি জমির গাছ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মরে শেষ হয়ে যাবে বলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন আব্দুল হক।

অন্য ফসল চাষের জন্য সমিতি থেকে ঋণ তোলার চেষ্টা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ঋণ না পেলে জমি পতিত থাকবে।

৫৫ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেছিলেন বোররচর গ্রামের রেজাউল ইসলাম। তার খরচ হয়েছিল ৯০ হাজার টাকা। টমেটো গাছ মরে যাওয়ায় এখন জমিতে মরিচের চাষ করছেন।

তিনি জানান, এখনও ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হবে।

তার অভিযোগ, এলাকার কৃষকদের শত শত একর জমির টমেটো নষ্ট হলেও কৃষি বিভাগের কাউকে পরামর্শের জন্য পাননি তারা।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, “এ বছরের ক্ষতি পোষাতে কয় বছর লাগে আল্লাহই ভালো জানে।”

একই গ্রামের বর্গাচাষী সোহেল মিয়া জানান, গত বছর তিনি টমেটো চাষ করে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় আয় করে ছিলেন। তাই এ বছরও জমি বর্গা নিয়ে টমেটো এবং কপির চারা রোপণ করেছিলেন।

কপির চারা টিকে থাকলেও ৪৪ শতাংশ জমিতে টমেটো গাছ মরে গেছে।  তবে অন্যদের মত তিনিও কী কারণে গাছ মরল তা বলতে পারেন না।

এবার তার দুই লাখ টাকার মতো ক্ষতি হবে জানিয়ে তিনিও কৃষি বিভাগের কারো ‘সঠিক পরামর্শ পান না’ বলে অভিযোগ করেন সোহেল মিয়া।

পরাণগঞ্জ গ্রামের কৃষক মো.সোহেল বলেন, তাদের এখানে এক কাঠা সমান ১১ শতাংশ জমি। এক কাঠা জমিতে টমেটো চাষে খরচ হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা।

“ভালো ফল পেতে প্রথম থেকেই ভালো মানের বীজ, চারা, সঠিক পরিচর্যা করতে হয়। সরাক্ষণেই টমেটো ক্ষেতে সময় দিতে হয়। এ বছর খরচের পাশাপাশি বেশি সময় দিয়েও ক্ষেত রক্ষা করা গেল না।”

কৃষক মাহবুবুল হক কাজল জানান, তাদের অঞ্চলের সবজির সুনাম রয়েছে সারা দেশে। তাদের এলাকার টমেটোর গাছ মরে যাওয়ায় দেশে সবজির সঙ্কট দেখা দেবে বলে মনে করেন তিনি।

একই ধরনের মন্তব্য করে কৃষক আব্দুল হান্নান বোররচরের কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে সরকারের কাছে দাবি জানান।

ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মতিউজ্জামান বলেন, বেশি বয়সের চারা রোপণ, টানা বৃষ্টি, একই জমিতে বারবার টমেটো চাষ এবং অতিরিক্ত মাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগের কারণে টমেটো গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তার ধারণা, সদর উপজেলার পরাণগঞ্জ এবং বোররচর ইউনিয়নে বিচ্ছিন্নভাবে পাঁচ হেক্টর জমির টমেটো নষ্ট হয়েছে।

সেসব ক্ষেতে বিকল্প সবজি চাষের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।